শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কাক সাত সমুদ্র তের নদী পেরিয়ে গেলেও সে কাকই থাকে

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, যারা নিজের স্বার্থে ও ক্ষমতাসীনদের সন্তুষ্ট করতে রং বদলায় তারা জনগণের কাছে ধরা পড়ে। তাদের মানুষ ভালো চোখে দেখেনা। তিনি বাড়ি রক্ষার জন্য কোনো বই লিখেছেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন,  কাক সাত সমুদ্র তের নদী পেরিয়ে গেলেও সে কাকই থাকে। যারা দলছুট, আদর্শচ্যুত তাদের লেখা বইয়ের বক্তব্য দিয়ে কিছু যায় আসেনা। সম্প্রতি প্রকাশিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ রচিত ‘বাংলাদেশ : ইমারজেন্সি অ্যান্ড দি আফটারম্যাথ : ২০০৭-২০০৮’ বইয়ের কঠোর সমালোচনা করে গতকাল সোমবার দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দস তালুকদার দুলু, আবদুস সালাম, হাবিব উন নবী খান সোহেল,  আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করিম শাহীন, আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মওদুদ আহমেদ তার বইয়ে ১/১১ এর প্রেক্ষাপট নিয়ে লিখতে গিয়ে লিখেছেন, ‘খালেদা জিয়ার কাছে ওই সময়ে তার নিজের দুই সন্তান তারেক ও কোকোর ভাগ্যই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো আলোচনায় যেতে রাজি ছিলেন না খালেদা জিয়া। নানা রকম চাপেও অনড় ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। সে সময়ে দেশের মানুষের নেত্রী, বিএনপি চেয়ারপার্সন কিংবা একজন রাজনীতিবিদের চেয়েও একজন মা হিসেবে দুই সন্তানের মুক্তির বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন খালেদা জিয়া।’
এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে রিজভী আহমেদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন যদি নিজের সন্তানের কথা চিন্তা করতেন, তাহলে আরো আগেই তারা মুক্তি পেতেন। কিন্তু বিএনপি প্রধান যখন মুক্তি পেয়েছেন তিনিও (মওদুদ আহমেদ) সেই সময়ে মুক্তি পেলেন কিভাবে? সন্তানের জন্য নয়, খালেদা জিয়া দেশ ও জনগণের জন্য কখনো আপোষ করেননি। সে জন্যই তার নামে মামলাও করেছে ওই সময়ের অবৈধ সরকার।
মওদুদ আহমেদ তার বইয়ে বিএনপি সরকারের অপশাসন, বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের সঙ্গে মিত্রতা, বিএনপি সরকারের কিছু মন্ত্রীর সম্পৃক্ততায় জঙ্গিবাদের উত্থান, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের নামে হাওয়া ভবনের ক্ষমতা, প্রভাব ও দুর্নীতি, ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিতর্কটি সমাধানে ব্যর্থতার কারণে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে দায়িত্ব দেয়ার কারণে বিএনপির কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে আওয়ামী লীগকে ভোটাররা ভোট দিয়েছে বলে বিশ্লেষণে তুলে ধরেন।
বইয়ের এই বিশ্লেষণের সমালোচনা করে রিজভী আহমেদ বলেন, ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি কোন সরকারের মন্ত্রী ছিলেন? দুর্নীতি হলে তিনি পদত্যাগ করলেন না কেন? তিনি বলেন, যারা সব সময় রং বদলায়, তাদেরকে ফাস্টফুডের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক। সেই কথা এখন মনে পড়ছে। এসব মানুষের চরিত্র হচ্ছে, নিজেদের স্বার্থের জন্য রং বদলাবে আর প্রয়োজনে সব ডুবিয়ে দেবে। বিএনপির দফতরের দায়িত্বে থাকা এ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, যারা বিভিন্ন সময়ে ডিগবাজি খায়, ক্ষমতার মধ্যে থেকে নিজেদেরকে সুবিধামতো জায়গায় রাখতে চায়, মানুষ তাদের ভালো চোখে দেখে না।
মওদুদ আহমেদ নিজের বাড়ি রক্ষা বা ক্ষমতাসীনদের খুশি করতে বইয়ে এসব লিখেছেন কি না সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, এটি দুর্ভাগ্যজনক। তাকে (মওদুদ আহমেদ) আমি শ্রদ্ধা করি। তার যে অতীত থাকুক না কেন, দেশের একজন বিজ্ঞ আইনজীবী ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ হিসেবে সম্মান করি। কিন্তু নিজের স্বার্থে বাঁচার জন্য তিনি যে কথা বলেছেন দেশবাসীর কাছে তা দৃষ্টান্ত। এসব মানুষকে সবাই চেনে, তাদের কথায় কেউ বিভ্রান্ত হবে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রিজভী আহমেদ বলেন, এর উদ্দেশ্য তাকে হয়রানি ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করা। এভাবে টিকে থাকা যাবেনা। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু নিজের মন্ত্রীত্ব রক্ষার জন্য এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য  বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিষোদাগার করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ