DailySangram-Logo-en-H90

পাঠকের অভিমত

মাহে রমযানের প্রস্তুতি

একজন মুসলিমের জন্য রমযান মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ পবিত্র মাস যে আত্মশুদ্ধির বার্তা নিয়ে আসে তা এ মাসের সঠিক ব্যবহার তথা এ পবিত্র মাসের প্রতিটি মুহূর্তের সঠিক ব্যবহারের উপর নির্ভর করে। এ জন্য প্রয়োজন আগ থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণের। আর যথাযথ প্রস্তুতি আমরা তখনই নিতে পারবো যখন আমরা এ মাসের মর্যাদা, গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারবো।

Printed Edition

॥ মুহাম্মদ আবুল হুসাইন ॥

একজন মুসলিমের জন্য রমযান মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ পবিত্র মাস যে আত্মশুদ্ধির বার্তা নিয়ে আসে তা এ মাসের সঠিক ব্যবহার তথা এ পবিত্র মাসের প্রতিটি মুহূর্তের সঠিক ব্যবহারের উপর নির্ভর করে। এ জন্য প্রয়োজন আগ থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণের। আর যথাযথ প্রস্তুতি আমরা তখনই নিতে পারবো যখন আমরা এ মাসের মর্যাদা, গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারবো।

রমযান মাস অন্য মাসের মত নয় : রমযান মাস অন্যসব মাসের মত সাধারণ কোন মাস নয়। এটি অত্যন্ত পবিত্র মাস, পূণ্যের মাস। রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস মাহে রমযান। পুরো মাসটিই ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পূর্ণ। এ মোবারক মাসেই পবিত্র কুরআন মজিদ নাযিল হয়েছে। তাই এ পবিত্র মাসে রোজা বা সিয়াম সাধনাকে আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীন প্রত্যেক ঈমানদার নরনারীর উপর ফরজ বা বাধ্যতামূলক করেছেন। শুধু আল কুরআনই নয়, অন্যান্য প্রধান প্রধান আসমানি কিতাবও রমযান মাসেই নাযিল হয়েছিল এবং একারণে পূর্ববর্তী উম্মতদের উপরও রমযান মাসে সিয়াম সাধনা বাধ্যতামূলক ছিল। যেমন পবিত্র কুরআন মজিদে আল¬াহ রাব্বুল আ’লামীন স্বয়ং বলেন: ‘হে মু’মিনগণ! তোমাদের তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হইল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হইয়াছিল, যাহাতে তোমারা মুত্তাকী হইতে পার।’ -[বাকারা : ১৮৩]

রমযান মাসের পুরো সময় রোজা রাখা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ বা মৌলিক ইবাদতের অন্যতম। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন: পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের বুনিয়াদ স্থাপিত। এগুলো হলো- ১.ঈমান- আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ’র রাসূল এই প্রত্যয় ব্যক্ত করা; ২. নামাজ কায়েম করা; ৩. যাকাত প্রদান করা; ৪. রমযান মাসের রোজা রাখা এবং ৫. বাইতুল্লা’য় হজ্জ করা।

রহমতের মাস : পবিত্র রমযান মাস রহমতের মাস। এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। তাই এ মাসে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে এক পবিত্র ভাবধারা বিরাজ করে। সমগ্র মুসলিম উম্মাহ এ পবিত্র মাসে ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থেকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন। পবিত্র এ মাস হল মাগফিরাতের মাস, নাজাতের মাস। এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ রাখা হয় এবং প্রধান প্রধান শয়তানগুলোকে বন্দী রাখা হয়। তাই এ মাসে সাধারণভাবে ঈমানদারদের দিল নরম থাকে, তাদের হৃদয়, মন ও আত্মা আল্লাহ’র দিকে, মহান সৃষ্টিকর্তার দিকে রুজু থাকে।

পূণ্যের মাস : পবিত্র এ মাস অশেষ পূণ্যের মাস। মহানবী (সা.) শাবান মাসের শেষ দিন সাহাবীদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এক ভাষণে পবিত্র রমযান মাসের আগমন বার্তা ঘোষণা করে এ মাসকে এক মহিমান্বিত ও বরকতময় মাস হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এ মাসে এমন এক রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। বলাবাহুল্য, এ রাতটির নাম ক্বদরের রাত। মহানবী জানিয়েছেন, এ মাসের শেষ দশ দিনের বেজোর রাত সমূহের মধ্যেই ক্বদরের রাত নিহিত থাকে। এ শেষ দশদিনে মুসলমানদেরকে এতেকাফে বসার জন্যও তাগিদ দিয়েছেন তিনি। গুনাহ মাফ এবং জাহান্নাম থেকে নাজাতের আশায় এ সময় মুসলমানরা মসজিদে মসজিদে এতেকাফ করে থাকেন। ক্বদরের রাত ছাড়াও এ মাসের প্রতিটি রাত, প্রতিটি দিন এবং প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত বরকতপূর্ণ। মহানবী (সা.) বলেছেন, এ পবিত্র মাসে যে একটি নফল ইবাদত করবে সে অন্য সময়ে একটি ফরজ ইবাদত করার সমান পূণ্য লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি এই মাসে একটি ফরজ আদায় করবে, সে অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ আদায়ের পূণ্য লাভ করবে। একারণেই বলছিলাম যে, পবিত্র এ মাস অন্য মাসের মত নয়। এই বরকতময় সময়ের একটি মুহূর্তও হেলায় হারানো উচিত নয়। বিশেষ করে ক্বদরের রাত তো নয়ই। মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ক্বদরের রাত থেকে বঞ্চিত হল তার মত হতভাগা আর নেই। তিনি আরো বলেছেন, রমযান মাসের প্রথম দশ দিন রহমতে পূর্ণ থাকে। দ্বিতীয় দশদিন ক্ষমা লাভ এবং শেষ দশ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের উপায়। তবে এ সবকিছুই নির্ভর করে এ পবিত্র মাসের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্যকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করার উপর। তাই রমযান মাস আগমনের আগেই এ পবিত্র মাসকে উপলব্ধির জন্য যথাযথ পড়াশোনা করা প্রয়োজন।

আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভে আল কুরআন : মহাগ্রন্থ আল কুরআনে নবী-রাসূলদের দায়িত্ব সম্পর্কে যেসব বর্ণনা পাওয়া যায় তার মধ্যে তাযকিয়াহ বা লোকদের জীবনকে পরিশুদ্ধির কাজ ছিল অন্যতম। আর এ আত্মশুদ্ধির কাজে মূল চালিকা শক্তি ছিল আল্লাহ’র কালাম আল কুরআন। আমাদের সমাজের কিছু লোককে দেখা যায় যারা হেদায়াত লাভের জন্য, আল্লাহ’র নৈকট্য লাভের জন্য আল্লাহ’র কালাম আল কুরআনের কাছে পথের সন্ধান না করে এদিক সেদিক যায়; অথচ তাদের হাতের কাছেই রয়েছে মহাগ্রন্থ আল কুরআন, আল্লাহ’র নৈকট্য লাভের আসল উৎস আল কুরআন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন বলেন: যারা জ্ঞানবান মানুষ, তারা তোমার প্রতি তোমার প্রভূর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ এ গ্রন্থের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে যে, এ গ্রন্থই হচ্ছে সত্য, এটিই মানুষকে পরম পরাক্রান্ত ও প্রশংসিত প্রভূর দিকে নিয়ে যায়।’ -[সূরা আল সাবা: আয়াত-৬]

পবিত্র কুরআন মজিদের শুরুতে সূরা আল ফাতিহায় আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন নিজে আমাদেরকে দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন যেন আমরা কেবল তাঁর কাছেই সঠিক পথের সন্ধান (সিরাতুল মুশতাক্বিম) জানতে চাই।

আমরা আগেই বলেছি, পৃথিবীতে নবী-রাসূলদের অন্যতম প্রধান মিশন ছিল মানুষের জীবনকে পরিশুদ্ধ করা। পবিত্র কুরআনে যতবার এ আত্মশুদ্ধির প্রসঙ্গটি আলোচনা করা হয়েছে ততবারই অনিবার্যভাবে আলকুরআনের কথা বলা হয়েছে। যেমন : ‘যেমন আমি তোমাদের প্রতি তোমাদেরই মধ্য হতে একজন রাসূল পাঠিয়েছি, যে তোমাদেরকে আমার আয়াত পড়ে শোনায়, তোমাদের জীবনকে পরিশুদ্ধ ও উৎকর্ষিত করে, তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয় এবং যেসব কথা তোমাদের অজ্ঞাত তা তোমাদের জানিয়ে দেয়।’ -[বাকারা : ১৫১]

‘তিনি সে সত্তা যিনি নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদেরকে তাঁর আয়াতসমূহ পড়ে শোনান, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেন। অথচ এর আগে তারা সুস্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে নিমজ্জিত ছিল।’ -[জুমুয়া : ২]

‘প্রকৃতপক্ষে ঈমানদার লোকদের প্রতি আল্লাহ এ বিরাট অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদেরই মধ্য হতে এমন একজন নবী বানিয়েছেন যে তাদেরকে আল্লাহ’র আয়াত শোনান, তাদের জীবনকে ঢেলে তৈরি করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দেন। অথচ এর পূর্বে এসব লোকই সুস্পষ্ট গোমরাহির মধ্যে নিমজ্জিত ছিল।-[আল ইমরান : ১৬৪]

লেখক : সাংবাদিক।