পাঠকের অভিমত
সাংবাদিকতা ও সাহিত্য
সাহিত্যিক ও সাংবাদিক একই পাড়ার বাসিন্দা। তবে সাংবাদিকতা ও সাহিত্য ভিন্ন পথের পথিক। যদিও এদের ভিতর অনেক মিল আছে। সাহিত্যে থাকে কল্পনা।
Printed Edition
॥ আবু জাফর বিশ্বাস ॥
সাহিত্যিক ও সাংবাদিক একই পাড়ার বাসিন্দা। তবে সাংবাদিকতা ও সাহিত্য ভিন্ন পথের পথিক। যদিও এদের ভিতর অনেক মিল আছে। সাহিত্যে থাকে কল্পনা। ঘটনার সঙ্গে লেখক যুক্ত করেন তার কল্পনা, জীবনদর্শন, আবেগ, পরিস্থিতির বর্ণনা, চরিত্রচিত্রণ ইত্যাদি। তবে সাংবাদিকতা কখনো স্বাধীন পেশা নয়, অর্থাৎ সত্যবাদিকতা, তথ্য-বিশ্বস্ততা মেনেই একজন সাংবাদিককে কাজ করতে হয়। সে তুলনায় একজন কবি বা লেখক স্বাধীন। ‘সাহিত্য এমন কোনো লেখনী, যেখানে শিল্পের বা বুদ্ধিমত্তার আঁচ পাওয়া যায়, অথবা যা বিশেষ কোনো প্রকারে সাধারণ লেখনী থেকে আলাদা। মোটকথা, ইন্দ্রিয় দ্বারা জাগতিক বা মহাজাগতিক চিন্তা চেতনা, অনুভূতি, সৌন্দর্য ও শিল্পের লিখিত বা লেখকের বাস্তব জীবনের অনুভূতি হচ্ছে সাহিত্য।’ একজন কবি বা লেখক তার দীর্ঘমেয়াদি কাজের অনেক স্তর অতিক্রম করার পর সাফল্য প্রতীয়মান হয়। আর তখনি একটা কবিতা বা গল্প শিল্প হয়ে ওঠে। সাহিত্য সবসময় মানবসমাজে একটি জীবন্ত ও গতিশীল শক্তি হিসাবে বিরাজ করেছে। কেবল মানুষের নান্দনিক অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম হিসাবেই নয়, বরং ইতিহাসের কোন কোন পর্যায়ে তো এটা সমাজ পরিবর্তনেও ভূমিকা রেখেছে। বৃহত্তর পরিসর থেকে দেখলে, সাহিত্য কেবল মানুষের সৌন্দর্যবোধ, নান্দনিক অনুভূতি আর কল্পনার বহিঃপ্রকাশ নয়; বরং এতে সংশ্লিষ্ট সমাজের নানা ছবি ফুটে ওঠে।
সাংবাদিকতায় থাকে কৌতূহল। কী এবং কেন? এ কেন’র উত্তর নিরন্তর খুঁজতে হয় সাংবাদিককে। খবরের পেছনেও খবর থাকে, এসব খবর সামনে আনাই সাংবাদিকের কাজ। সাংবাদিকতার শক্তি সত্যের পেছনে, আশপাশে যেসব বিষয়-আশয় থাকে, তা আলোয় নিয়ে আসা, তথ্য ও সত্যের অবিকৃত উপস্থাপনায়। সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। একজন সাংবাদিক হলো, সত্য প্রকাশে নির্ভীক কলম সৈনিক। সমাজ ও জাতির জাগ্রত বিবেক। আর সংবাদপত্র হলো সমাজের দর্পণ, প্রতিদিনের সত্যিকারের ইতিহাস। একজন সাংবাদিক তার লিখনীতে তুলে ধরার চেষ্টা করেন সমাজের ক্ষত, অসংগতি, দুর্নীতি, দুঃখ-দুর্দশা, সমস্যা, সম্ভাবনা, মানুষের মৌলিক অধিকার, মানবতা, দেশপ্রেম ও আগামীর স্বপ্নগুলো। এগুলো প্রতিনিয়ত সাধারণ জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে গণমাধ্যম সংবাদপত্রের বিকল্প নেই। তাই সঠিক তথ্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে একজন ভালো সাংবাদিক হতে হলে ভাষার ওপর ভালো দখল থাকতে হয়। তাহলে লেখনশৈলী মনোমুগ্ধকর হয়।
একজন কবি-সাহিত্যিক সহজেই ভালো একজন সাংবাদিক হতে পারে, কিন্তু একজন সাংবাদিক সাহিত্যিক হতে গেলে আমার মনে হয় দীর্ঘদিন ধরে সাহিত্য চর্চার প্রয়োজন। আমাদের দেশে অনেক প্রখ্যাত কবি-লেখক তারা সাংবাদিক ছিলেন, এখনো আছেন। ভালো সাংবাদিক তাঁর লেখার জন্য যে ভাষা শৈলীর ব্যবহার করেন তা তাঁকে পাঠকের অন্তরের ভিতর ঠাঁই দেয়। এজন্য সাহিত্য ও সাংবাদিকতা একে অন্যের পরিপূরক। তবে সাংবাদিকতা কখনো স্বাধীন পেশা নয়, অর্থাৎ সত্যবাদিতা, তথ্য-বিশ্বস্ততা মেনেই একজন সাংবাদিককে কাজ করতে হয়। সে তুলনায় একজন কবি-সাহিত্যিক অনেকটাই স্বাধীন। একজন কবি বা লেখক তার কাজের মধ্য দিয়ে কাম, প্রেম, ভাব-ভাষা, বক্তব্যের প্রবহমানতা, ছন্দ, অলংকার, রস, উপস্থাপন শৈলী, শব্দের গাঁথুনিতে পাঠ ও অনুভবের আকৃতি দেন, যা পাঠককে উদ্বেলিত করে, স্বপ্নের জগতে নিয়ে যায়। যেকোনো বিষয় গল্প কাহিনীর লেখকের ভাষা ব্যবহার, উপমা, শব্দের সমাহার, লেখনশৈলী ও চিত্রকল্প থাকতে হয়, যা পাঠকের মনে দৃশ্যকল্প তৈরি করে। ‘কবিতার মূল বৈশিষ্ট্য হল ‘ছন্দ’। কবিতা, কাব্য বা পদ্য হচ্ছে শব্দ প্রয়োগের ছান্দসিক কিংবা অনিবার্য ভাবার্থের বাক্য বিন্যাস, যা একজন কবির আবেগ-অনুভূতি, উপলব্ধি ও চিন্তা করার সংক্ষিপ্ত রূপ। কবিতার ভাবের মধ্যে আসল অর্থ থাকে লুকায়িত।