DailySangram-Logo-en-H90

পাঠকের অভিমত

মত অভিমত

পিআর সিস্টেমের নির্বাচনের আবশ্যকতা

পিআর সিস্টেমে নির্বাচন (p r o p o r t i o n a l representation) নিয়ে রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।

Printed Edition

নুর আহমেদ সিদ্দিকী

পিআর সিস্টেমে নির্বাচন (p r o p o r t i o n a l representation) নিয়ে রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক প্রকার বাকবিতণ্ডা হচ্ছে পিআর বা সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন নিয়ে। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বড় দল সেটা যে কাউকে স্বীকার করতেই হবে। রাজনীতিতে তাদের অবদান কোন অংশে কম নয়। তবে পিআর সিস্টেমের নির্বাচন নিয়ে বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো পুরোপুরি বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। বিএনপির পরে রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচিত রাজনৈতিক সংগঠন হলো জামায়াত এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ একপ্রকার অনিশ্চিত। এমন বাস্তবতায় রাজনীতির মাঠে মূলত তিনটি দলই ব্যাপকভাবে আলোচনায়। বিএনপি বড় দল হিসেবে আগামীতে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবার আশা নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে মাঠে সরব। অপরদিকে তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র, যাদের সাথে একত্রে দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতি করেছে তারা রাজনৈতিক ময়দানে সক্রিয়া রয়েছে। এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ইতোপূর্বে কোন জোটে না থাকলেও বর্তমানে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে একটি জোট করার চেষ্টা করছে। বিএনপির সাথে কিছু ছোট ছোট রাজনৈতিক দল থাকলেও বিএনপির বলয়ের বাইরে রাজনৈতিক দলের বড় একটি অংশ পিআর তথা সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। জামায়াত পিআর সিস্টেমে নির্বাচনের দাবি সভা-সমাবেশে তুলে ধরছে।

পিআর বা সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের গুরুত্ব :

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে পিআর সিস্টেমে নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পিআর সিস্টেমে নির্বাচন হলে সংসদে কোন দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে না। যেহেতু ভোটের হার অনুসারে আসন বরাদ্দ হবে তাই অতীতের মত একক ক্ষমতা পেয়ে কেউ ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠার সুযোগ পাবে না। বিএনপির পিআর সিস্টেমের বিরোধিতার অন্যতম কারণ হতে পারে সংসদে তাদের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হ্রাস পাবে। পিআর সিস্টেমের নির্বাচন হলে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রায় সবাই সংসদে কম-বেশি আসন পাবে। ফাস্ট পাস্ট দ্যা পোস্ট ভোটিং সিস্টেমের চেয়ে পিআর সিস্টেমে নির্বাচন অনেকটাই মডার্ন সিস্টেম হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। বিগত চারটি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৯৯১ সালে বিএনপি ভোট পেয়েছিল ৩০.৮১ শতাংশ এবং আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৩০.০৮ শতাংশ, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৩৭.৪৪ শতাংশ এবং বিএনপি পেয়েছিল ৩৩.৬১ শতাংশ। ২০০১ সালে বিএনপি পেয়েছিল ৪০.৮৬ শতাংশ আর আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৪০.২১ শতাংশ। আর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৪৯ শতাংশ এবং বিএনপি পেয়েছিল ৩৩.২০ শতাংশ ভোট। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী ২৩০ টি এবং বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ৩০ টি আসন। পিআর সিস্টেমে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের আসন কমে দাঁড়াতো ১৪৭টিতে। অপরদিকে বিএনপির আসন বেড়ে দাঁড়াতো ৯৯ টিতে। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, পিআর সিস্টেম বা সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন হলে একদিকে বড় দলগুলোর আসন কমবে এবং ছোট দলগুলোর আসন বাড়বে। হয়তো এ কারণেই বিএনপি পিআর সিস্টেমে নির্বাচন চায় না।

বিএনপির বিপরীতে জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন কতটা সফল হবে? : দেশের প্রধান এবং বড় রাজনৈতিক দল এখন বিএনপি। তারা একবাক্যে বলে দিচ্ছে তারা পিআর সিস্টেমে নির্বাচন চায় না। রাজনীতিতে পিআর সিস্টেমে নির্বাচন দাবি করা জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির বিপরীতে পিআর সিস্টেমে নির্বাচনের দাবি আদায় করতে পারবে কিনা সেটাই এখন জনমনে প্রশ্ন। বিএনপি যদি সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের দাবির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায় সেক্ষেত্রে যারা পিআর সিস্টেমে নির্বাচন চায় তারা ঐক্যবদ্ধ হবার সম্ভাবনা বেশি। জামায়াত এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর মধ্যে আকিদা বিরোধ দীর্ঘদিনের। এরই মধ্যে দল দুটির মধ্যে অনেকটা সম্প্রীতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য এখন নেই বললেই চলে। জামায়াত এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর মধ্যে ভোটের জোট হবে না কিনা সেটা অন্য বিষয়। তবে জামায়াত এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মিলে ছোট ছোট দলগুলোকে একত্রিত করে পিআর সিস্টেমে নির্বাচন আদায়ে সোচ্চার হবার সম্ভাবনা বেশি। হতে পারে সেটি যুগপৎ আন্দোলন বা ঐক্যবদ্ধ তথা একই ব্যানারে দাবি আদায়ের আন্দোলন। জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের মধ্যে ঐক্যের আলাপ চলমান। ইসলামী দলগুলোর সাথে সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটি, সিপিবি গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও বামজোট। ইসলামী দলগুলোর সাথে বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শিক মতপার্থক্য থাকলেও পিআর সিস্টেমে নির্বাচনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এক্ষেত্রে বিএনপি খুব একটা সুবিধা করতে পারবে বলে মনে হয় না। নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পরপরই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হতে পারে। এটা স্বীকার করতেই হবে যে, সংখ্যানুতিক হারে নির্বাচন হলে দেশে একটি জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশা করা যায়, যা খুবই কাক্সিক্ষত ও সময়োপযোগী।

লেখক : সাংবাদিক ও সমাজকর্মী।