DailySangram-Logo

সম্পাদকীয়

আগ্রাসনের নতুন মাত্রা

মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে, আমরা এখন কোন গ্রহে আছি? পৃথিবী নামক গ্রহে তো মানুষের বসবাস। কিন্তু এ গ্রহে এখন মানুষের তথা বিশিষ্টজনদের এবং বড় মাপের মানুষদের যে আচরণ তা দেখে প্রশ্ন জাগে, মানুষের স্বাভাবিক আচরণ বদলে

Printed Edition

মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে, আমরা এখন কোন গ্রহে আছি? পৃথিবী নামক গ্রহে তো মানুষের বসবাস। কিন্তু এ গ্রহে এখন মানুষের তথা বিশিষ্টজনদের এবং বড় মাপের মানুষদের যে আচরণ তা দেখে প্রশ্ন জাগে, মানুষের স্বাভাবিক আচরণ বদলে ফেলার কোনো নোটিশ কি জারি করা হয়েছিল সভ্যতার শাসকদের পক্ষ থেকে? হয়তো তেমন কোনো নোটিশ জারির প্রয়োজনই অনুভব করেন নি দাম্ভিক শাসকরা। তবে ‘চমৎকার’ সব কাজ করছেন এখন শাসকরা। এক সকালে ঘুম থেকে উঠে যুক্তরাষ্ট্রে গুগলের মানচিত্র ব্যবহারকারীরা ‘গালফ অব মেক্সিকোর’ জায়গায় দেখতে পেলেন ‘গালফ অব আমেরিকা।’ উপসাগরটির নামে হঠাৎ করে কেন এমন পরিবর্তন? কারণ আছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জারি করা এক নির্বাহী আদেশ মেনে স্থানীয় সময় সোমবার থেকে এ পরিবর্তন এনেছে গুগল। একটি ব্লগ পোস্টে এ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে গুগলের মানচিত্র ব্যবহারকারীরা গালফ অব মেক্সিকোর পুরানো ও নতুন উভয় নামই দেখতে পাবেন। অন্যান্য বিতর্কিত জায়গার ক্ষেত্রেও এ নীতি অবলম্বন করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। তবে আলোচ্য ক্ষেত্রে বিতর্কটি সৃষ্টি করলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। শুধু নামেই থেমে থাকার পাত্র নন ট্রাম্প। বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) সাংবাদিককে মার্কিন প্রেসিডেন্টের একটি অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহ করতে দেওয়া হয়নি। ট্রাম্পের নির্দেশ মেনে মেক্সিকো উপসাগরের নাম বদলে ‘গালফ অব আমেরিকা’ না লেখাতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প এখন যে মেজাজে, যে দৃষ্টিভঙ্গিতে কথা বলছেন, সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, অনেকেই তা ভালোভাবে নিচ্ছেন না। দেশে-বিদেশে লক্ষ্য করা যাচ্ছে নানা প্রতিক্রিয়া। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরতো ট্রাম্প অন্য দেশের কোনো অঞ্চল কিনতে চাচ্ছেন, কোনো অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিতে চাইছেন। এখন তো কোনো কোনো দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোনো শহরও কিনে নিতে চাইছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া শহর কেনার জন্য ডেনমার্কের পক্ষ থেকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে একটি পিটিশন খোলা হয়েছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে ক্রাউডফান্ডিং (গণ অর্থায়ন) পদ্ধতিতে ট্রিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করা। এতে ব্যাপক সাড়াও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে দু’লাখের বেশি ব্যক্তি পিটিশনে সই করেছেন। ডেনমার্ক ইফিকেশন ডটকম নামের একটি ওয়েবসাইটে খোলা টিপিশনে বলা হয়েছে, আপনি কখনো মানচিত্রের দিকে তাকিয়ে ভেবেছেন, আপনি কি জানেন ডেনমার্কের কী প্রয়োজন? আরও সূর্যালোক, পামগাছ ও রোলার স্কেটিং। আমাদের জীবনে এ স্বপ্নকে সত্যি করার একটি সুযোগ এসেছে।’ পিটিশনে আরও বলা হয়েছে, চলুন ডোনান্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে ক্যালিফোর্নিয়া কিনে নেই। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন। ক্যালিফোর্নিয়া আমাদের হতে পারে। এটা সত্যি করতে আপনাদের সহায়তা প্রয়োজন।

উল্লেখ্য যে, ডেনমার্কের নিয়ন্ত্রণে থাকা গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ পেতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের চ্ছিা প্রকাশের পর এ পিটিশনের বিষয়টি সামনে এসেছে। ক্যালিফোর্নিয়া কেনার প্রস্তাব থেকে ডেনমার্ক কিভাবে উপকৃত হবে, তাও তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উন্নত আবহাওয়া, অ্যাভোকোডোর নিরাপদ সরবরাহ এবং প্রযুক্তিগত আধিপত্য। আর গত ডিসেম্বরে গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি। প্রশ্ন জাগে, ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে এ কোন নতুন খেলা শুরু করেছেন?

ট্রাম্প চেয়ে বসলেন গ্রিনল্যান্ড, আর ডেনমার্কের পক্ষ থেকে কিনতে চাওয়া হলো ক্যালিফোর্নিয়া। বিষয়টা অনেকটা ব্যাঙ্গাত্মক হলেও পরিণতির কথা ভাবতে গেলে গা শিউরে ওঠে। কথাগুলো তো শাসকদের মন-মস্তিষ্কের স্তর পেরিয়ে দৃশ্যজগতে প্রকাশিত হয়েছে। আগ্রাসনের এমন দানবীয় চেতনা সভ্যতাকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে? বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, ট্রাম্পের অহংকারী ও আত্মকেন্দ্রীক মানসিকতা পৃথিবীর জন্য, এমন কী যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। বিষয়টা মার্কিনীরা উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।