দৈনিক সংগ্রাম লোগো

মতামত কলাম

অহংকার সবসময়ই পরিত্যাজ্য

দর্প, দম্ভ ও অহংকার শয়তানের বৈশিষ্ট্য। কোন মুসলমান কখনো দম্ভ বা অহংকার করতে পারে না। পৃথিবীর আদিকাল থেকেই বড় বড় ক্ষমতাদর্পী ও ধন-সম্পদের দম্ভ প্রদর্শনকারীদের ইতিহাস আল কুরআনে বর্ণিত হয়েছে এবং তাদের করুণ পরিণতির কথাও বর্ণিত হয়েছে। ধন-সম্পদের দম্ভ ও অহংকার করেছিল কারূন আর ক্ষমতার দম্ভ প্রকাশ করেছিল ফেরাউন।

॥ জাফর আহমাদ ॥

দর্প, দম্ভ ও অহংকার শয়তানের বৈশিষ্ট্য। কোন মুসলমান কখনো দম্ভ বা অহংকার করতে পারে না। পৃথিবীর আদিকাল থেকেই বড় বড় ক্ষমতাদর্পী ও ধন-সম্পদের দম্ভ প্রদর্শনকারীদের ইতিহাস আল কুরআনে বর্ণিত হয়েছে এবং তাদের করুণ পরিণতির কথাও বর্ণিত হয়েছে। ধন-সম্পদের দম্ভ ও অহংকার করেছিল কারূন আর ক্ষমতার দম্ভ প্রকাশ করেছিল ফেরাউন। দু’জনই হযরত মুসা (আ:) এর যুগের দুই সীমালংঘনকারী। আল্লাহ তা’আলা একজনের ধন-সম্পদকে মাটিতে দাবিয়ে দিয়েছেন এবং অপরজনকে তার সৈন্য-সামন্তসহ পানিতে ডুবিয়ে দিয়ে দম্ভচুর্ণ করে দিয়েছেন।

কারুনের ছিল অঢেল সম্পদের পাহাড়। কিন্তু এই বিপুল সম্পদ তাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “এ কথা সত্য, কারূন ছিল মুসার সম্প্রদায়ের লোক, তারপর সে নিজের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠলো। আর আমি তাকে এতটা ধনরতœ দিয়ে রেখেছিলাম যে, তাদের চাবিগুলো বলমান লোকদের একটি দল বড় কষ্টে বহন করতে পারতো। একবার এ সম্প্রদায়ের লোকেরা তাকে বললো, “অহংকার করো না, আল্লাহ অহংকারীদের পছন্দ করেন না।” (সুরা কাসাস : ৭৬)

কারূনের সমসাময়িক ক্ষমতাদর্পী শাসক ছিল ফেরাউন। ক্ষমতার বলে সে নিজেকে প্রভু বলে দাবী করেছিল। মহান আল্লাহ হযরত মুসা (আ:) ও তাঁর ভাই হারুন (আ:)কে তার কাছে প্রেরণ করেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “যাও, তোমরা দু’জন ফেরাউনের কাছে, সে বিদ্রোহী হয়ে গেছে।” (সুরা ত্বহা : ৪৩) সে তাঁদের দাওয়াত কবুল করেনি। বরং সে বললো, “আনা-রাব্বুকুমুল আ’লা” অর্থাৎ আমিই তোমাদের সবচেয়ে বড় রব”। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “সে (ফেরাউন) এবং সৈন্যরা পৃথিবীতে কোন সত্য ছাড়াই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার করলো এবং মনে করলো তাদের কখনো আমার কাছে ফিরে আসতে হবে না। শেষে আমি তাকে ও তার সৈন্যদেরকে পাকড়াও করলাম এবং সাগরে নিক্ষেপ করলাম। এমন জালেমদের পরিণাম কী হয় দেখে নাও।” (সুরা কাসাস : ৩৯-৪০) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন, “আমি মুসাকে আমার নিদর্শনসমূহ এবং সুস্পষ্ট যুক্তি সহকারে ফেরাউন, হামান ও কারূনের কাছে পাঠালাম। কিন্তু তারা বলল, এ একজন যাদুকর ডাহা মিথ্যুক।” (আল মুমিন : ২৩-২৪) কারূন ধন-সম্পদের কারণে দম্ভ বা অহংকারী হয়েছিল, ফলে সেও হযরত মুসা (আ:) এর বিরুদ্ধাচরণ করেছিল এবং বনী ইসরাঈলকে শিকড় শুদ্ধ উপড়ে ফেলার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। তাই তার এ জাতীয় বিশ^াসঘাতকতার পুরস্কার হিসাবে ফেরাউনের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছিল। আর হামান ছিল ফেরাউনের মন্ত্রী।

“পৃথিবীতে দম্ভভরে চলো না। তুমি না যমীনকে চিরে ফেলতে পারবে, না পাহাড়ের উচ্চতায় পৌঁছে যেতে পারবে।” (সুরা বনী ইসরাঈল : ৩৭) এর অর্থ হলো, ক্ষমতাগর্বী ও অহংকারীদের মতো আচরণ করো না। এ নির্দেশটি ব্যক্তিগত কর্মপদ্ধতি ও জাতীয় আচরণ উভয়ের ওপর সমানভাবে প্রযোজ্য। এ নির্দেশের বদৌলতেই এ ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতে মদীনা তাইয়্যেবায় যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় তার শাসকবৃন্দ, গভর্নর ও সিপাহসালারদের জীবনে ক্ষমতার গর্ব ও অহংকারের ছিঁটেফোঁটাও ছিল না। এমনকি যুদ্ধরত অবস্থায়ও কখনো তাদের মুখ থেকে দম্ভ ও অহংকারের কোন কথাই বের হতো না। তাদের ওঠা বসা, চাল চলন, পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর-বাড়ী, সওয়ারী ও সাধারণ আচার-আচরণে ন¤্রতা ও কোমলতা এবং সাদাসিধে জীবনের ছাপ স্পষ্ট দেখা যেতো। যখন তারা বিজয়ীর বেশে কোন এলাকায় প্রবেশ করতেন তখনও দর্প ও অহংকার সহকারে নিজেদের ভীতি মানুষের মনে বসিয়ে দেবার চেষ্টা করতেন না।

অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা বলছে, মরুভূমি থেকে আসা এক ধরনের শান্তাআনা বাতাস এই আগুনকে উসকে দিচ্ছে। তবু তারা মহাশক্তিধর আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে না। শান্তাআনা বাতাস মানে শয়তানের বাতাস। বাতাস আল্লাহর এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। আল কুরআনের আলোকেই বাতাস দুই প্রকারের হয়ে থাকে। এক প্রকার বাতাস রয়েছে যা আল্লাহর ফযল ও করম বয়ে নিয়ে আসে যাকে আমরা রহমতের বাতাস বলে অভিহিত করি। দ্বিতীয় প্রকারের বাতাস আল্লাহর আযাব বয়ে নিয়ে আসে যাকে আমরা গযবের বাতাস বলে থাকি। গযবের বাতাস যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তাছাড়া তোমাদের জন্য নিদর্শন আছে) আদ জাতির মধ্যে যখন আমি তাদের ওপর এমন অশুভ বাতাস পাঠালাম যে, তা যে জিনিসের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলো তাকেই জরাজীর্ণ করে ফেললো।” (সুরা যারিয়াত : ৪১) এ বাতাসের জন্য ‘আকিম’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে যা বন্ধ্যা নারীদের বুঝাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অভিধানে এর প্রকৃত অর্থ ‘ইয়াবিস’ বা শুষ্ক । যদি শব্দটিকে আভিধানিক অর্থে গ্রহণ করা হয় তাহলে এর অর্থ হবে, তা ছিল এমন প্রচ- গরম ও শুষ্ক বাতাস যে, তা যে জিনিসের ওপর দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে তাকে শুষ্ক করে ফেলেছে।

যদি শব্দটিকে পারিভাষিক অর্থে গ্রহণ করা হয় তাহলে তার অর্থ হবে তা ছিল বন্ধ্যা নারীর মত এমন হওয়া যার মধ্যে কোন কল্যাণ ছিল না। তা না ছিল আরামদায়ক, না চিল বৃষ্টির বাহক। না ছিল বৃক্ষরাজির ফলবানকারী, না এমন কোন কল্যাণ তার মধ্যে ছিল যে জন্য বাতাস প্রবাহিত হওয়া কামনা করা হয়। অন্য স্থানসমূহে বলা হয়েছে এ বাতাস শুধু কল্যাণহীন ও শুষ্কই ছিল না বরং তা প্রচ- ঝড়ের আকারে এসেছিল যা মানুষকে শূন্যে তুলে তুলে সজোরে আছড়িয়ে ফেলেছে এবং অবস্থা একাদিক্রমে আটদিন ও সাত রাত পর্যন্ত চলেছে। এভাবে আদ জাতির গোটা এলাকা তছনছ করে ফেলেছে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আর আদকে কঠিন ঝঞ্ঝাবাত্যা দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। যা তিন সাত ও আট দিন ধরে বিরামহীনভাবে তাদের ওপর চাপিয়ে রেখেছিলেন। (তুমি সেখানে থাকলে) দেখতে পেতে তারা ভূলুন্ঠিত হয়ে পড়ে আছে যেন খেজুরের পুরানো কা-।” (সুরা হাক্কাহ : ৬-৭) সুতরাং এটি শান্তাআনা বাতাস নয় বরং আল্লাহর পাঠানো বাতাস।