সম্পাদকীয়
আইয়ামে জাহেলিয়াত প্রসঙ্গ
Printed Edition
‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’ প্রসঙ্গটি আবার খবরের শিরোনাম হয়েছে। আমরা জানি, ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’ শব্দ বন্ধের অর্থ আছে, তাৎপর্য আছে এবং আছে সুনির্দিষ্ট ইতিহাস। জাজিরাতুল আরবের বিশেষ সময়ের সেই ইতিহাস বর্ণনার সযুযোগ এখানে নেই। তবে ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করতে গিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফসল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন আইয়ামে জাহেলিয়াতের কথা উচ্চারণ করেন, তখন আমরা উপলব্ধি করি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে আমাদের বসবাস ছিল কেমন অন্ধকারে। অন্ধকার ও নিষ্ঠুরতারও একটা সীমা আছে, তাই বলে ‘আয়নাঘর’?
আয়নাঘর পরিদর্শনে গিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আইয়ামে জাহেলিয়াত বলে একটি কথা আছে, গত সরকার আইয়ামে জাহেলিয়াত প্রতিষ্ঠা করে গেছে সর্বক্ষেত্রে, আয়নাঘর তার একটি নমুনা। আয়নাঘর যাতে কেউ ধ্বংস করতে না পারে, প্রমাণ হিসেবে রাখতে সেগুলো সিলগালার নির্দেশ দেন তিনি। ১২ ফেব্রুয়ারি বুধবার আয়নাঘর পরিদর্শন শেষে এ নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আয়নাঘরের বর্ণনা যদি দিতে হয়, তাহলে বলবো- এটা বীভৎস। যতটাই শুনি অবিশ্বাস্য মনে হয়। এটাই কী আমাদের জগৎ, আমাদের সমাজ? যারা গুমের শিকার হয়েছেন, তারা আমাদের সঙ্গে আছেন, তাদের মুখ থেকে শুনলাম কী হয়েছে তাদের সঙ্গে, কোনো ব্যাখ্যা নেই এর। বিনা কারণে মানুষকে রাস্তা থেকে তুলে আনা হয়েছে। বিনা দোষে কতগুলো সাক্ষী নিয়ে, হাতে এক্সপ্লোসিভ ধরিয়ে দিয়ে কাউকে সন্ত্রাসী-জঙ্গি বলে রাখা হয়েছে। সন্ত্রাসী, জঙ্গি বলে এখানে (আয়নাঘরে) ঢুকিয়ে রাখা হতো। মানুষকে সামান্যতম মানবাধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেছেন, একজন বলেছেন খুপরির মধ্যে রাখা হয়েছে। এর থেকে মুরগির খাঁচাও বড়। বছরের পর বছর এভাবেই তাদের রাখা হয়েছে।
গুম-খুনের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে সমাজ টিকবে না বলে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা নতুন সমাজ গড়া, অপরাধীদের বিচার করা এবং প্রমাণ রক্ষার ওপর জোর দেন। নতুন সমাজ গড়ার বিষয়টি আসলে কোনো স্বপ্নের বিষয় নয়। পৃথিবীর বুকে টিকে থাকতে হলে নতুন সমাজ আমাদের বাস্তবেই গড়ে তুলতে হবে। কারণ আমাদের সামনে যে চ্যালেঞ্জ, তা শুধু একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের চ্যালেঞ্জ নয়। আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বিষয়টি এখন বড় হয়ে উঠেছে। ক্ষমতার রাজনীতি দিয়ে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। জাতি হিসেবে এখন আমাদের মেধা-মননে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে এবং নৈতিকতায় সমৃদ্ধ হতে হবে। বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে জাতির প্রতিটি সদস্যকে।