সম্পাদকীয়
ভাবতে হবে পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ে
কঠিন সময় পার করছে প্রিয় স্বদেশ। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর ভেঙে পড়া প্রশাসন ও অর্থনীতির চাকা সচল করা এক কঠিন কাজ। দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রও থেমে নেই।
Printed Edition
কঠিন সময় পার করছে প্রিয় স্বদেশ। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর ভেঙে পড়া প্রশাসন ও অর্থনীতির চাকা সচল করা এক কঠিন কাজ। দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রও থেমে নেই। এসবের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হচ্ছে জাতীয় ঐক্য, সংস্কার ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে। এখন আবার চলছে পাহাড়ে অস্থিরতা সৃষ্টির নতুন ষড়যন্ত্র। ১৩ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যস্ততার সুযোগে আবার সক্রিয়া হয়ে উঠছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। এ কাজে প্রত্যক্ষভাবে মদদ দিচ্ছে পাশর্^বর্তী দেশ ভারত। খাগড়াছড়ি আর রাঙামাটির সীমান্ত এলাকাগুলোর মধ্যে অন্তত ১০টি পয়েন্ট পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। প্রতিটি পয়েন্টে ভাবনাকেন্দ্র কিংবা উপাসনালয় প্রতিষ্ঠা করেছে তারা। এসব ভাবনাকেন্দ্রের আড়ালে চলছে সন্ত্রাসী তৎপরতা। নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে এসব এলাকায় অভিযান চালালেই শুরু হয় অপপ্রচার। শতাধিক ফেসবুক পেজ ও অ্যাকাউন্ট এবং বিভিন্ন নামে-বেনামে কমপক্ষে দশটি ওয়েবপোর্টাল ব্যবহার করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য যে, অপপ্রচারের বেশিরভাগই চলছে সীমান্তের ওপর থেকে ভারতের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে।
পাহাড়ে অস্থিরতা সৃষ্টির বিষয়টি নতুন নয়। সন্ত্রাসীরা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। আর সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে অস্ত্র যোগানোর পাশাপাশি আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ভারতের বিরুদ্ধে। জাতির কালান্তরের এ সময়ে পাহাড়ের সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে সজাগ রয়েছে। তাদের অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা ভেগে গিয়ে আবার পুনর্গঠিত হওয়ার চেষ্টা করে ভারতের মদদে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে যে শান্তিচুক্তি হয়, তাতে আসলে পার্বত্য এলাকায় সেনাবাহিনীর আধিপত্য কমিয়ে আনার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে সফল হয় ভারত। কথিত ওই শান্তিচুক্তির কারণে দুর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলো থেকে ২৪৬টি সেনাক্যাম্প প্রত্যাহারে বাধ্য হয় বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালিদের বঞ্চনার দিন শুরু হয় এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রাধান্য পেতে শুরু করে পাহাড়িরা। সেনা তৎপরতা কমে আসায় সন্ত্রাসীরা সংগঠিত হতে শুরু করে। আগে তাদের একটি সশস্ত্র গ্রুপ থাকলেও এখন পাহাড়ে তৎপর রয়েছে ৬টি সশস্ত্র সংগঠন। যাদের মূল লক্ষ্য পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা করে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে দুর্বল করা। তাদের এ কাজে অর্থের যোগানে আছে নানাভাবে। এর একটি হলো চাঁদাবাজি। নানিয়াচরসহ দুর্গম এলাকাগুলোর ২২টি মোবাইল টাওয়ারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় সন্ত্রাসীরা। মোটা অংকের চাঁদা না দিলে মোবাইল কোম্পানীগুলোকে নেটওয়ার্ক চালাতে দেবে না বলে হুমিক দেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পার্বত্য এলাকায় ছয়টি সংগঠনের অস্তিত্ব থাকলেও সবচেয়ে বেশি সহিংসতা ছড়ায় জেএসএস এবং ইউপিডিএফ। পার্বত্য এলাকায় উৎপাদিত একটি আনারস বিক্রি করতে হলেও সংগঠন দু’টিকে চাঁদা দিতে হয়। এসব সংগঠনের টোকেন ছাড়া কোনো বাজারে ব্যবসা করতে পারেন না কোনো ব্যবসায়ী।
উল্লেখ্য যে, পার্বত্য এলাকা বিশেষ করে সীমান্ত এলাকাগুলোতে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর তৎপরতা রয়েছে। তবে ওরা বেশি সক্রিয়া রয়েছে রাঙ্গামাটি, লংগুদু, বরকল উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা বন্দুক ভাঙ্গায়। এলাকাটি এখন জেএসএস ও ইউপিডিএফ-এর কথিত সামরিক শাখার সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শন্তিচুক্তির আগে সেখানে একটি সেনাক্যাম্প ছিল। কিন্তু চুক্তির ধারা মানতে গিয়ে সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করে নিলে এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নেয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো। দুর্গম এলাকায় গ্রাম প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সেখানে তৈরি করা হয় একাধিক ধর্মীয় উপাসনালয় বা ভাবনা কেন্দ্র। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সম্প্রতি বন্দুক ভাঙার যমচুগ এলাকায় অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। অভিযানে এক সন্ত্রাসী নিহত হয় এবং উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের চালান। সন্ত্রাসীরা উপাসনালয় বা ভাবনা কেন্দ্রকে তাদের কৌশলের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে। অভিযানের পর সন্ত্রাসীরা সাইবার দুনিয়ায় অপপ্রচাপর চালাচ্ছে সেনাসদস্যদের বিরুদ্ধে। ফলে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এ বিশেষ সময়ে পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ে যৌক্তিক ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে বলে আমরা মনে করি।