DailySangram-Logo

সম্পাদকীয়

আত্ম-অনুসন্ধানের অভিযাত্রা

১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো একটি ‘হিজাব র‌্যালি’ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিক্ষার্থীরা সেখানে বক্তব্য রেখেছিলেন।

Printed Edition

১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো একটি ‘হিজাব র‌্যালি’ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিক্ষার্থীরা সেখানে বক্তব্য রেখেছিলেন। তাদের বক্তব্য আত্মসচেতন দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। অন্তত আমার মনে হয়েছিল, বর্তমান সেক্যুলার ধারার গণমাধ্যমে তাদের দুঃখ-বেদনা এবং অধিকারের বিষয়গুলো হয়তো তেমন গুরুত্ব পাবে না। বাস্তবেও সেটাই হয়েছে। তাই আমি পোশাক ও হিজাব প্রসঙ্গে একটি সম্পাদকীয় লিখেছিলাম, যাতে নাগরিকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের আকাক্সক্ষা ও বিশ্লেষণ সম্পর্কে সাধারণ মানুষ এবং বুদ্ধিজীবীরা বিশেষভাবে জানতে পারেন। প্রশ্ন জাগতে পারে, একই বিষয় নিয়ে আবার কেন লিখতে গেলাম? যৌক্তিক কারণ তো অবশ্যই রয়েছে। আসলে জানা শোনার দৈন্য থেকেই কোনো বিষয়ে ভুল ধারণা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন হিজাবের বিষয়টি। ভুল ধারণা অপনোদনে আলোচনা এবং ভাবনা বিনিময় ভালো মাধ্যম হতে পারে। সেজন্য আবারও লেখার চেষ্টা করছি। আশাকরি এ থেকে হিজাব সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের ধারণা স্বচ্ছ হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর আন্তর্জাতিক হিজাব দিবস পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে এবার শিক্ষার্থীদের সাথে যুক্ত হয়েছেন শিক্ষকরাও। তাদের বক্তব্যে লক্ষ্য করা গেছে নতুন বিষয়ও। ৫ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পুরোনো রেজিস্ট্রার ভবন থেকে ‘কুরআন অ্যান্ড কালচালার স্টাডি ক্লাব’ (ফিমেল সেকশন)-এর উদ্যোগে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। পরে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। আলোচনায় দর্শন-৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা বলেন, ‘মুসলিম প্রধান একটি দেশে মুসলিম নারীদের হিজাব পরার অধিকার চাওয়া একই সঙ্গে হাস্যকর ও বেদনাদায়ক। ইসলামে যেখানে হিজাব পরা বাধ্যতামূলক, সেখানে কেন আমাকে হিজাবের জন্য অধিকার চাইতে হবে? হিজাবকেও পোশাকের স্বাধীনতার আওতায় আনতে হবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময় ইসলামি বিধিনিষেধ মানার জন্য আমাদের বিভিন্ন ট্যাগিংয়ের শিকার হতে হতো। আমরা এসব ট্যাগ থেকে মুক্তি চাই।’

উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শামীমা নাসরিন জলি বলেন, ‘গত ১ ফেব্রুয়ারি ছিল আন্তর্জাতিক হিজাব দিবস। এটি গত ১২ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে এলেও বাংলাদেশে এবার প্রথম। আমরা বিভিন্ন জায়গায় হিজাব পরার জন্য লাঞ্ছিত হতে দেখি। সেটার বিপরীতে আমরা এ কর্মসূচি পালন করছি। হিজাব আমাদের অধিকার ও আধুনিকতা। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছেÑযারা অভিজাত, ভদ্র, মুসলিম ও বিশ্বাসী নারী তারা পর্দা করবে। সচেতনতা বাড়ানোর জন্যই আমরা আজকে এ শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা করেছি।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘মায়ের দুধ পান করা যেমন সন্তানের অধিকার, ঠিক তেমনি হিজাবকে ধারণ করা আমাদের অধিকার।’ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এটা আমাকে বলতে হবে কেন? অধিকার হরণ করতে করতে পৃথিবীর নিয়ম এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, সেটাকে স্মরণ করিয়ে দিতে হচ্ছে। আমি শুধু এটুকুই বলবো, হিজাব পরা যেমন আমার মা-বোনদের অধিকার, তেমনি সে অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। আর জাবির উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘মানবসভ্যতার বিকাশের সঙ্গে কাপড় পরিধানের একটা বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। যখন আমরা বলি, আমরা সভ্য হয়েছি-এর মানে আমরা বলি আমরা কাপড় পরা শিখেছি। তাহলে কেউ যদি কাপড়ের পরিমাণ নির্ধারণ করতে গিয়ে হিজাবটাকে সংযুক্ত করে, তাহলে এটা কীভাবে সভ্যতার পরিপন্থি হয়? হিজাব শুধু নারীদের অধিকার নয়, এটি সভ্যতার একটি উপাদানও বটে।’

আন্তর্জাতিক হিজাব দিবসকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা তরুণ শিক্ষার্থীদের বক্তব্য ও বিশ্লেষণ জানলাম। আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে আমাদের জানাটা আরো পরিশীলিত হলো। কারণ, এখানে তরুণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন অধ্যাপক এবং উপাচার্য মহোদয়ও। তাদের বহুমাত্রিক আলোচনায় আমরা সমৃদ্ধ হয়েছি। সম্মানিত এক অধ্যাপক বলেছেন, হিজাব পরা যেমন আমার মা-বোনদের অধিকার, তেমনি সে অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। আর উপাচার্য মহোদয় তো বললেন, হিজাব শুধু নারীদের অধিকার নয়, এটা সভ্যতার একটি উপাদানও বটে। উপলব্ধি করা যায়, আমরা আত্মঅনুসন্ধানের পথে হাঁটছি এবং স্বাধীন দেশের মানুষের মতো কথা বলছি। যা আমাদের আগামী দিনের করণীয় নির্ধারণে সহায়ক হবে।