সম্পাদকীয়
চলমান অভিযান সফল হোক
এক অনিবার্য বাস্তবতায় দেশে একটি গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। ফলে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটেছে। দেশ যেন নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। মানুষ খোলা মনে কথা বলছে। সেন্সরশিপ ছাড়াই মিডিয়াগুলো কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছে।
Printed Edition
এক অনিবার্য বাস্তবতায় দেশে একটি গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। ফলে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটেছে। দেশ যেন নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। মানুষ খোলা মনে কথা বলছে। সেন্সরশিপ ছাড়াই মিডিয়াগুলো কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছে। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের ওপর থেকেও অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। কারো জমায়েত হওয়ার জন্য বা করার জন্য প্রশাসনের অনুমতি নিতে হচ্ছে না। প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও রাজনৈতিক ক্যাডারের ভাষায় কথা বলছেন না।
এরকম একটি অবস্থাতেও আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পুরো দেশে না হলেও বিশেষ কিছু অঞ্চলে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঢাকার পাশর্^বর্তী জেলা গাজীপুর। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এবং এক সময়ে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কৃত নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসানের পরও তার ফ্যাসিবাদী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তার একটি সিক্রেট গ্রুপ এবং এখানকার একটি বৈঠকের অডিও প্রকাশিত হয়েছে যেখানে সাবেক মেয়রকে উস্কানিমূলক কথা বলতে শোনা যাচ্ছে। মানুষ যাতে শান্তিতে থাকতে না পারে তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি নেতাকর্মীদের নির্দেশনাও দিয়েছেন। যা রীতিমত উদ্বেগের।
একই ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন তার নেত্রী, আওয়ামী লীগ প্রধান ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিও তার বিরুদ্ধে বর্তমানে ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকার ও ছাত্র সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানিয়ে যাচ্ছেন। শোনা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের ভেতর দুর্বৃত্তদের একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তাদেরকে নির্দিষ্ট দায়িত্বও অর্পন করা হয়েছে যাতে দেশজুড়ে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা যায়। এরই অংশ হিসেবে গাজীপুরের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী আ খ ম মোজাম্মেল হকের বাসভবন ঘিরে একটি স্যাবোটেজ ঘটানো হয়।
একটি ডাকাতির নাটক সাজিয়ে তার জন্য ছাত্র সমন্বয়কদের দায়ী করা হয়। ছাত্ররা এর প্রতিক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট ডাকাতদের ধরিয়ে দিতে অগ্রসর হলে তাদেরকে টার্গেট করে হামলা করা হয়। পরিকল্পিত সে হামলায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্র আহত হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতি সাধন হয়। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রশাসনের সাবেক কিছু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে গাজীপুর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নাশকতা ও বিশৃংখলা সৃষ্টির চক্রান্ত ধরা পড়ে যায়। গাজীপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাইরে যাওয়ার উপক্রম হলে এক পর্যায়ে সরকার হার্ডলাইনে চলে যায়। গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী দুর্বৃত্ত ও ঘাপটি মেরে থাকা দুষ্কৃতিকারীদের আটক করার জন্য সরকার অপারেশন ডেভিল হান্ট নামের একটি অভিযানও শুরু করে।
গত দু-তিনদিনে এ অভিযান পরিচালিত হওয়ার পর সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আওয়ামী দুষ্কৃতিকারীসহ অনেকেই ধরা পড়েছে। অস্থিতিশীল স্থানগুলোর আইন-শৃংখলা পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে উত্তেজিত জনতার মব কার্যক্রমও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। অপারেশনের প্রথম দিনেই এমন কিছু পুলিশ কর্মকর্তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে যাদের বিরুদ্ধে জুলাই বিপ্লবের সময় হত্যা অভিযান পরিচালনার অভিযোগ ছিল এবং যারা এতদিন পালিয়ে ছিলেন। এ ধরনের আটকাভিযান ও আইন-শৃংখলার উন্নয়নে পরিচালিত অপারেশন জনমনে স্বস্তি দিয়েছে। তবে নিরাপরাধ কেউ যেন এ অভিযানের ভিকটিম না হয়, সে বিষয়েও সংশ্লিষ্ট মহলকে সচেতন থাকতে হবে।
এখানে উল্লেখ্য যে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই গাজীপুর জেলায় বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকবার অশান্তি ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করা হয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিকসহ নানা মহল থেকে আন্দোলন করা হয়েছে। মহাসড়ক অবরোধ করা হয়েছে। এসব কথিত আন্দোলনের নেপথ্যেও আওয়ামী দুর্বৃত্তদের কোনো উস্কানি ও ইন্ধন ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আমরা আশা করি, সরকারের এ অপারেশন চলমান থাকবে এবং সামনের দিনগুলোতে আরো বেশি সংখ্যক চিহ্নিত অপরাধী ও সন্ত্রাসী আটক হবেন এবং আইন শৃংখলা পরিস্থিতিরও প্রত্যাশিত উন্নতি হবে।