কলাম
প্রসঙ্গ ফ্যাসিবাদ
ফ্যাসিবাদ শব্দটি ইতালীয় শব্দ “fascismo” থেকে উদ্ভূত, যা “fascio”শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ ‘লাঠির বান্ডিল’, যা প্রাচীন রোমান প্রতীক “ভধংপবং” থেকে উদ্ভূত। প্রতীকটি একাধিক লাঠির বান্ডিলের সাথে একটি কুড়ালকে ঘিরে রাখা হতো, যা শক্তি এবং ঐক্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
Printed Edition
মোঃ মোস্তফা মিয়া
ফ্যাসিবাদ শব্দটি ইতালীয় শব্দ “fascismo” থেকে উদ্ভূত, যা “fascio”শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ ‘লাঠির বান্ডিল’, যা প্রাচীন রোমান প্রতীক “ভধংপবং” থেকে উদ্ভূত। প্রতীকটি একাধিক লাঠির বান্ডিলের সাথে একটি কুড়ালকে ঘিরে রাখা হতো, যা শক্তি এবং ঐক্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
ফ্যাসিবাদের মূল আদর্শ ছিল একদলীয় শাসনব্যবস্থা, যেখানে জাতীয়তাবাদ ও কর্তৃত্ববাদ ছিল প্রধান বৈশিষ্ট্য। প্রাচীন রোমান ফ্যাসেসের মতোই এটি শক্তি ও শৃঙ্খলার উপর জোর দেয়া হয়।
ফ্যাসিবাদ প্রথম উদ্ভব ঘটে ইতালিতে ১৯১৫ সালে, বেনিটো মুসোলিনি ইতালিতে ফ্যাসেস অফ রেভোলিউশনারি অ্যাকশন প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে, ১৯১৯ সালে, মুসোলিনি মিলানে ইতালীয় ফ্যাসিস অফ কমব্যাট গঠন করেন। দুই বছরের মধ্যেই এটি জাতীয় ফ্যাসিস্ট পার্টিতে রূপান্তরিত হয়। শাসনব্যবস্থাটি একটি কর্তৃত্ববাদী এবং জাতীয়তাবাদী ডানপন্থী ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত। এটি মানুষের স্বাধীনতাকে সীমিত করে, যেখানে একক শাসক বা দলই সব ক্ষমতা ধরে রাখে। এক দলের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয় এবং এর বাইরে কোন দলকে স্বীকার করা হয় না। জাতীয়তাবাদের চেতনা থেকেই মূলত ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়েছে।
ফ্যাসেস প্রতীক ঐক্যের মাধ্যমে শক্তির ধারণা প্রকাশ করে। একটি একক লাঠি সহজেই ভেঙে যায়, কিন্তু লাঠির বান্ডিল ভাঙা অনেক কঠিন। প্রতীকটি বিভিন্ন ফ্যাসিবাদী আন্দোলনে ব্যবহৃত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, স্পেনের ফ্যালাঞ্জ প্রতীক ছিল একটি জোয়ালের মাধ্যমে সংযুক্ত পাঁচটি তীর। ফ্যাসিবাদী নেতারা, যেমন আডলফ হিটলার এবং বেনিটো মুসোলিনি, এই প্রতীককে ব্যবহার করে তাদের শক্তি ও শাসনের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে ছিলেন।
ফ্যাসিবাদ প্রথমে ইতালিতে শুরু হলেও, এটি জার্মানি, স্পেন এবং অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। জার্মানিতে হিটলারের অধীনে নাৎসি শাসন এবং স্পেনে ফ্রাংকোর শাসন ফ্যাসিবাদী আদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছিল।
ফ্যাসিবাদের ধরণগুলো বিশ্বে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণ হয়। এটি বিশ্বযুদ্ধ এবং গণহত্যার মতো ঘটনা ঘটায়, যা মানুষের জীবনে চিরস্থায়ী দাগ রেখে গেছে। এর ফলে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ এই মতবাদকে প্রচন্ডভাবে ঘৃণা করে।
ফ্যাসিবাদ কেবল একটি রাজনৈতিক আদর্শ নয়; এটি একটি দুঃখজনক ইতিহাস, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে কর্তৃত্ববাদ এবং স্বাধীনতা হরণের মধ্যে কী ক্ষতি লুকিয়ে থাকে? শক্তি এবং ঐক্যের ভুল ব্যাখ্যা মানবজাতির জন্য ধ্বংস ডেকে আনে। ফ্যাসিজমের আদর্শে বিশ্বাসীদের মধ্যে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হয়। জাতীয়তাবাদের দোহাই দিয়ে দুর্নীতিবাজ এবং সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে সমাজের অধিকাংশ পুঁজির মালিকানা গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ফলে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গোষ্ঠীর প্রভাব বিকশিত হতে থাকে। বর্তমান বিশ্বে জাতীয়তাবাদ তথা ফ্যাসিবাদ মানবিক সমাজ ও অংশ গ্রহণমূলক রাষ্ট্র গঠনের পথে প্রচণ্ড বাধা হিসেবে ভূমিকা পালন করে। মানবিক সমাজ এবং অংশ গ্রহণমূলক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে আমাদের উচিত এ মতবাদকে পরিহার করা এবং গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার মূল্যকে সুরক্ষা করা। ফ্যাসিবাদের প্রভাবমুক্ত হয়ে অংশ গ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক মানবিক সমাজ গঠনে আমাদের মনোযোগী হওয়া আবশ্যক। (তথ্য সূত্র: ইন্টারনেট)
লেখক : শিক্ষাবিদ ও এনজিও ব্যক্তিত্ব।