কলাম
অনুশোচনাহীন অপরাধীর দম্ভগাঁথা
৫ আগস্ট তার ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের ঠিক ৬ মাসের মাথায় ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি এ ভাষণটি প্রদান করেন। পুরো ভাষণটি শুনে তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, তার ফ্যাসিবাদী মানসিকতার ন্যূনতম কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। আর এত বেশি অপরাধ ও অন্যায় করার পরও তার মনে সামান্য অনুশোচনা দেখা যায়নি।
Printed Edition
॥ আলী আহমাদ মাবরুর ॥
গত ৫ ফেব্রুয়ারি টেলিগ্রাম এ্যাপসে আওয়ামী নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে পতিত স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ভাষণ শুনলাম। আমি অবশ্য ইউটিউবে শুনেছি। শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখনও তার ভাষণ শোনা বিরাট একটি ধৈর্যের পরীক্ষা ছিল। এবার অনেকগুলো মাস পরে গিয়ে সে ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া আরো বেশি কঠিন অনুভূত হয়েছিল। তারপরও নানা দিক চিন্তা করেই ভাষণটি শুনেছিলাম। ৫ আগস্ট তার ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের ঠিক ৬ মাসের মাথায় ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি এ ভাষণটি প্রদান করেন। পুরো ভাষণটি শুনে তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, তার ফ্যাসিবাদী মানসিকতার ন্যূনতম কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। আর এত বেশি অপরাধ ও অন্যায় করার পরও তার মনে সামান্য অনুশোচনা দেখা যায়নি।
তিনি তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বক্তব্যের শুরুতেই জানিয়ে দেন যে, বাংলাদেশ এখন অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি সময় পার করছে। তার মতে, ১৯৭১ সালের পর মাত্র তিন বছর ৭ মাস সময় পেয়েও শেখ মুজিব বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিলেন। প্রশ্ন হলো, শেখ মুজিব যদি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে এতটাই গড়ে তুলতে পেরেছিলেন তাহলে ১৯৭৫ সালে স্বপরিবারে তিনি নিহত হওয়ার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনাকে কেন দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে আরেকবার দেশ শাসন করার সুযোগ চাইতে হলো? কারণ তিনি জানতেন, তার বাবা এবং তার পরিবার ১৯৭১-৭৫ সময়ে যা করেছেন-সে জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা না চেয়ে তার কোনো উপায় নেই। অথচ এখন তিনি বেমালুম সেসব ইতিহাস অস্বীকার করেছেন। ১৯৭১ সাল পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সীমাহীন দুর্নীতি, মুজিব পরিবারের নির্যাতন, ব্যাংক লুটপাটসহ জনসম্পদ লুন্ঠন, রক্ষী বাহিনী গঠন করে সাধারণ মানুষকে নির্যাতন, একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা, মাত্র চারটি পত্রিকা বাদে বাকি সব পত্রিকা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত, ভারতের সাথে ২৫ বছরের গোলামী চুক্তি কিংবা ১৯৭৪ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কথা মানুষ জানে। সে কারণেই ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনাকে ক্ষমা চেয়ে ক্ষমতায় আসতে হয়েছিল।
নিজেকেই কেবল ঠিক মনে করার যে ঔদ্ধত্য তার ভেতর ছিল এতেও কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয়নি। তিনি তার ১৯৯৬-২০০১ সালের শাসনামলকে সোনালী যুগ হিসেবে অভিহিত করলেন। অথচ তিনি যে ৯৬ সালের নির্বাচনে কেয়ারটেকার সরকারের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন সে কথা সামনে আনেননি। তিনি তার ভাষণে আরো দাবি করলেন যে, ২০০১ সালে এক চক্রান্তের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে। অর্থাৎ অন্য কেউ আসলেই তা চক্রান্তের মধ্য দিয়ে হয় কিন্তু নিজেরা জয়ী হলে তা সুষ্ঠু নির্বাচন ও জনগণের অবাধ ভোটগ্রহণ হয়- এমনটা বলার মানসিকতায়ও কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।
শেখ হাসিনা তার ভাষণে তার উন্নয়নের বহু ফিরিস্তি দিলেন। কিন্তু সবচেয়ে বড়ো লজ্জা আমি পেয়েছি তার কথায় যখন তিনি দম্ভভরে বলেছেন, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ এ সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে এবং জনগণ অবাধে এবং নিরাপদে ভোট প্রদান করতে পেরেছে। এসব কথা যে আওয়ামী লীগের মিত্র ও শুভাকাক্সিক্ষরাও দাবি করেন না, শেখ হাসিনা কি তা জানেন না? যে দেশে তিনি এখন আশ্রয়ে আছেন, সে ভারতের মিডিয়া এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এখন স্বীকার করছেন যে, বাংলাদেশের বিগত তিনটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি এবং ভোটাররা ভোট দিতে পারেননি। অথচ এসব হাস্যকর ও প্রহসনমূলক নির্বাচন নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রেও শেখ হাসিনা দম্ভ প্রকাশ করতে ছাড়েননি।
২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৪ জন প্রার্থী বিনাভোটে অর্থাৎ ভোটের আগেই নির্বাচিত হয়ে গিয়েছিল। কোনো বিরোধী দল তখন নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং এসে ব্ল্যাকমেইল করে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। সে নির্বাচন নিয়ে জনগণের ভেতর কোনো আগ্রহও ছিল না। ফলে ইতিহাসের সবচেয়ে কম লো টার্নআউটের একটি ভোট হয়েছিল ২০১৪ সালে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটের দিন আসার আগেই রাতভর ভোট দিয়ে ভোটের বাক্স ভরে ফেলা হয়েছিল। বিএনপির মতো বড়ো দলকে ৭টি আসন ভিক্ষা দেয়া হয়েছিল। অন্য কোনো বিরোধী দল কোনো আসনই পায়নি। সরকারের সাথে আন্ডারস্ট্যান্ডিং করার মধ্য দিয়ে গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও সেবার নির্বাচন করেছিল। আর ২০২৪ সালে এসে ডামি নির্বাচন করলো আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ যে প্রার্থী সেও আওয়ামী লীগের আর যে প্রতিপক্ষ সেও আওয়ামী লীগের। এসব ডামিরা বেশ ভালো সিট পাওয়ার পরও তাদেরকে বিরোধী দল করতে না দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম সিট পাওয়ার পরও আবারও জাতীয় পার্টির মাধ্যমেই বিরোধী দল গঠন করা হয়। জাতীয় পার্টিও রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের টানাপোড়েন নিয়ে পরিহাসের খেলা করে সরকার। জাতীয় পার্টি এ নির্বাচনে আসনও কম পায় আবার শেখ হাসিনার সাথে আপোষে যাওয়ার কারণে রাজনৈতিকভাবেও সমালোচনার শিকার হয়। জুলাই-আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানের পরও রাষ্ট্রীয় বা সরকারি কোনো আয়োজনেই এ দলটিকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। কারণ আন্দোলনকারী ছাত্ররাসহ সাধারণ মানুষজনও এ দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার পরও এ নির্বাচনগুলোকে গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু বলার মাধ্যমে শেখ হাসিনা তার ঘৃণ্য দম্ভের বহিঃপ্রকাশ ঘটালেন। নির্বাচনগুলোকে কেন্দ্র করে কত সহিংসতা ঘটেছে, কত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। অথচ এগুলোকে তিনি হিসেবেই আনলেন না। জাতীয় আন্তর্জাতিক পরিসরে নির্বাচনগুলোর কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। অসংখ্য সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান নির্বাচনগুলোর ব্যাপারে তাদের আপত্তি জানিয়েছে। সেখানে এসব নির্বাচনকে সুষ্ঠু বলার মাধ্যমে শেখ হাসিনা মূলত নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলেন।
শেখ হাসিনা দাবি করলেন তিনি তার আমলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছিলেন। এর মতো নির্জলা মিথ্যা দ্বিতীয়টি আর নেই। ১০ টাকা সের চাল কিংবা ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনার আমলে দ্রব্যমূল্য ও মুল্যস্ফীতি ইতিহাসের সবচেয়ে আকাশছোঁয়া অবস্থানে চলে গিয়েছিল সে সত্য তিনি আড়াল করলেন। সবচেয়ে জঘন্য বক্তব্য তিনি দিয়েছেন জুলাই-আগষ্ট মাসের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। তিনি ছাত্রদের ঘাড়ে সব দায় চাপিয়েছেন। তাদেরকে দেশজুড়ে অগ্নিসন্ত্রাস করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। এর আগে তিনি বিএনপি ও জামায়াতকে এ ধরনের অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করতেন। এবারও একই অভিযোগ, শব্দচয়নও এক। শুধুমাত্র অভিযোগের তীরটি ভিন্নদিকে।
আওয়ামী সভানেত্রী তার ভাষণে সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবী, মিডিয়া ব্যক্তিত্বসহ নানা শ্রেণীর লোকদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুললেন। অথচ এরা যে সবাই আওয়ামী লীগের ভক্ত ও অনুকূল্য পাওয়া ব্যক্তি, যারা টাকা পয়সা বা প্লট পাওয়ার বিনিময়ে দলীয় তোষামোদি করেছেন কিংবা তাদের একাউন্টে শত শত কোটি টাকা পাওয়া যাচ্ছে- এ বিষয়টি তিনি বললেন না। সাংবাদিকেরা গণভবনে প্রশ্নোত্তরের নামে কেবল তার মিথ্যা স্তুতি করেছেন আর সাংস্কৃতিক কর্মীরা হাজার হাজার ছাত্রদের জীবন বিসর্জনকে আমলে না নিয়ে বিটিভির ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে ক্রন্দন করে জাতির সাথে তামাশা করেছেন সেই আলাপ শেখ হাসিনা এড়িয়ে গেলেন।
শেখ হাসিনার এবারের ভাষণের সবচেয়ে অসহনীয় দিক হলো, তিনি নাম ধরে ধরে জুলাই বিপ্লবের শহীদদের নিয়ে পরিহাস করেছেন। তিনি শহীদ আবু সাইদকে সন্ত্রাসী বলেছেন। তাকে হামলাকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। দাবি করেছেন তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে এসব হত্যাকান্ডের ভিডিও করে মানুষকে উত্তেজিত করা হয়েছে। আবু সাইদকে নির্বিচারে গুলী করার ভিডিওটি এআই নির্মিত বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, যদি এআই (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স) নির্মিত না-ই হবে তাহলে গুলী লাগার পরে রক্তপাত হলো না কেন? একই রকমের প্রশ্ন তিনি শহীদ মীর মুগ্ধকে নিয়েও তুলেছেন? কারা তাকে হত্যা করলো- এ প্রশ্ন তুলে তিনি মন্তব্য করেছেন যে, আন্দোলনকারী ছাত্রদের লাশের দরকার ছিল আর সে কারণেই কিছু নিরীহ ছেলেকে জীবন দিতে হলো। পুলিশ বা ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনীর তান্ডব ও গণহত্যার বিষয়টিও তিনি সচেতনভাবে এড়িয়ে গিয়েছেন।
শেখ হাসিনা ইউনুস সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা ও ব্যাংকের দখলদারিত্বের অভিযোগ তুলেছেন। অথচ তার সময়ে বাংলাদেশের কয়েক বছরের বাজেটের সমপরিমাণ টাকা যেভাবে পাচার হয়েছে- তার কোনো ব্যাখ্যা তিনি দেননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ভল্ট থেকে টাকা চুরির বিষয়টিও তিনি এড়িয়ে গেছেন। এস আলমের মাধ্যমে বাংলাদেশের অন্তত আধা ডজন ব্যাংক তার সময়ে যেভাবে দখল করা হয়েছে এবং এস আলমকে যেভাবে তিনি টাকা পাচারের সুযোগ দিয়েছেন- সে বিষয়টিও তিনি সামনে আনেননি। এস আলম বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন এবং এর কয়েকঘন্টা পর বিশেষ প্রক্রিয়ায় তাকে পিআর স্ট্যাটাস দেয়ার মতো জালিয়াতি তিনি কেন করলেন- তাও তিনি খোলাসা করেননি। নাগরিক না হয়েও কীভাবে এস আলম ও তার ছেলে একাধিক ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন, বোর্ড অব ডিরেক্টরস এর সভা করেছেন কিংবা তার পরিবারের সাথে এই ব্যাংক মাফিয়ার সম্পর্ক- কিছুই তিনি স্পষ্ট করেননি।
ভারতের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক, ভারতের ইচ্ছানুযায়ী বিরোধী দলের বাছাইকৃত নেতাদের হত্যা, রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারতের হস্তক্ষেপ, ভারতের সাথে করা চুক্তি সম্মুখে না আনা কিংবা বিডিআর হত্যাকান্ডের বিচার না করা এবং দলীয় নেতাদেরকে ছাড় দেয়ার মতো অভিযোগ নিয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি। তার সময়ে হওয়া গুম, খুন কিংবা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি হওয়া ‘আয়নাঘর’ নিয়ে একের পর এক যে তথ্য বেরিয়ে আসছে কিংবা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনও যেভাবে গুম ও বিচারবহির্ভুত হত্যাকান্ডের ঘটনার সাথে তাকে জড়িয়েছে, সে ব্যাপারেও শেখ হাসিনা কোনো সদুত্তর দেননি।
পুলিশ যেভাবে ছাত্রদের হত্যা করেছে, লাশ পুড়িয়েছে, আলামত নষ্ট করেছে- এসব চিত্র জনগণের কাছে পরিস্কার হলেও শেখ হাসিনা এসব বিষয়ে নিরবতা পালন করেছেন। তার এবং তার দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে সেগুলোকে তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছেন। অথচ তিনি ক্ষমতায় থাকতে অন্য দলের লোকদের নামে মামলা হলে তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতেন, বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। অথচ তিনি এখন সেই বিচার বিভাগের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। মুখে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার বুলি ছাড়লেও নিজের বিরুদ্ধে জারি হওয়া গ্রেফতারি পরওয়ানায় সাড়া দেয়া কিংবা তার সরকারের আমলে ভারতের সাথে স্বাক্ষরিত বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করার সম্ভাব্য প্রক্রিয়া সম্পর্কেও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস, সরকারের উপদেষ্টা ও ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সম্পর্কে তিনি যেভাবে বাজে, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন এবং বিচারের হুমকি দিয়েছেন তাতে শেখ হাসিনার চিরায়ত প্রতিহিংসারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আমরা শেখ হাসিনার এহেন মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা জানাই। সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত অজস্ত্র অন্যায় ও অপরাধ নিয়ে শেখ হাসিনার ভেতর কোনো ধরনের অনুশোচনা আমাদের চোখে পড়েনি। হাজার হাজার ছাত্রের লাশের দায় যার ওপর; যার হাত ছাত্র জনতার রক্তে রঞ্জিত-এ ৬ মাস দেশ থেকে দূরে থাকার পরও তার মধ্যে কোনো আত্মপর্যালোচনা না হওয়া, কোনো ধরনের অনুতাপ না হওয়া দুঃখজনক। তার অভিব্যক্তি দেখে বরং এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, তিনি কোনো আবেগতাড়িত হয়ে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে জুলাই অভ্যুত্থান দমন করেননি বরং অত্যন্ত সচেতনভাবে এবং প্রতিহিংসাবশত সশস্ত্র পন্থায় তিনি জুলাই অভ্যুত্থানকে দমন করতে চেয়েছেন, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের হত্যা করতে চেয়েছেন। যেহেতু তিনি অনুতাপহীন, তাই আমাদেরও তার প্রতি কোনো সহানুভূতি দেখানোর বা ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। নির্লজ্জভাবে মিথ্যাচার করার কারণে এবং অপরাধ করেও অনুতপ্ত না হয়ে উল্টো দম্ভ করার কারণে এখন দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনার বিচার করা বরং জরুরি হয়ে পড়েছে।