DailySangram-Logo

কলাম

দুর্নীতি অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করে

পাকিস্তান আন্দোলনে বাংলাদেশের মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। পাকিস্তান স্বাধীন হবার পর বাংলাদেশের মানুষ আশা করেছিল তাদের সমস্যা নিশ্চিতভাবেই দূর হবে। কিন্তু মানুষ যা প্রত্যাশা করে তা সব সময় পূরণ হয় না। পাকিস্তান অর্জিত হলেও এ অঞ্চলের মুসলমানদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।

Printed Edition

॥ এম এ খালেক ॥

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান দু’টি লক্ষ্য বা চেতনা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভোটাধিকারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার গঠন এবং পাকিস্তানের দু’অঞ্চলের মধ্যে বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ। পাকিস্তান সৃষ্টির পর যদি শর্ত দু’টি পরিপালন করা হতো তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের কোনো প্রয়োজন হতো না। পাকিস্তান আন্দোলনে বাংলাদেশের মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। পাকিস্তান স্বাধীন হবার পর বাংলাদেশের মানুষ আশা করেছিল তাদের সমস্যা নিশ্চিতভাবেই দূর হবে। কিন্তু মানুষ যা প্রত্যাশা করে তা সব সময় পূরণ হয় না। পাকিস্তান অর্জিত হলেও এ অঞ্চলের মুসলমানদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ফলে এক সময় নানা বঞ্চনার প্রতিবাদে এ দেশের মানুষকে সোচ্চার হতে হয়। কোনো একক ব্যক্তির প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি। এর পেছনে এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতার অবদান ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেলো, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের কৃতিত্ব একটি বিশেষ দল তাদের নিজেদের বলে প্রচার করতে শুরু করে। স্বাধীনতার চেতনা বা কৃতিত্ব তাদেরই এমনটাই দাবি করা হয়।

স্বাধীনতা অর্জনের পর নানা ধরনের চেতনার কথা আমরা শুনতে থাকি। সাবেক বিচারপতি আব্দুর রহমান চৌধুরী মৃত্যুবরণ করার কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বিভিন্ন ধরনের চেতনার কথা শুনতে শুনতে জাতি নিজেই আজ অচেতন হয়ে যাবার অবস্থায় উপনীত হয়েছে। সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেছিলেন, আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে চেতনাগত বিরোধে লিপ্ত না হয়ে জাতির অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে মনোযোগী হওয়া। বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক দলটি মুক্তিযুদ্ধে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার তাদের হাতেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিশ্চয় দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করা নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে ভোটারদের অংশগ্রহণ ছাড়াই নির্বাচনের নামে প্রহসনের মাধ্যমে জবরদস্তিমূলকভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে রাখা নয়।

আওয়ামী লীগ যদিও নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের ‘সোল এজেন্সি’ দাবী করে কিন্তু বিগত সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে তাদের হাতেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জাতীয় নির্বাচন স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানে অন্তর্ভুক্তকরণে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দুর্বার আন্দোলনের মুখে তৎকালীন বিএনপি সরকার ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিতে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। বিএনপি সে সময় যদি জাতীয় সংসদের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত না করতো তাহলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কোনোদিনই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির অধীনে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতো না। সত্যি কথা বলতে কী আওয়ামী লীগ কখনোই স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে বিশ^াসী নয়। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগের অধীনে। সে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছিল। অন্তত ১৮জন প্রর্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত করে আনা হয়েছিল। ড. আলীম আল রাজির ভোটের বাক্স পাট ক্ষেতে পাওয়া গিয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা প্রথম কলুষিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির প্রবক্তা হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। এখনো পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি ব্যতীত দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে কোনো সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ক্ষমতাসীন দলের পরাজিত হবার আশঙ্কা থাকে তাই কোনো সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে চলতে দেয়নি। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে চারটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তার কোনোটিতেই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল পরপর দু’বার সরকার গঠন করতে পারেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রধান সৌন্দর্য হচ্ছে এতে ভোটারগণ স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জন ম্যাকেয়াভেলি তার একটি গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, জনগণ অনেক প্রত্যাশা নিয়ে একটি রাজনৈতিক দলকে ভোট দিয়ে ক্ষমতাসীন করে। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজস্ব স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সচেষ্ট থাকে। ফলে তারা জনকল্যাণ সাধন করতে পারে না। জনগণ শাসকরগাষ্ঠীর উপর বিরক্ত হয়ে নতুন কাউকে ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা করে। আর যদি নতুন কাউকে না পাওয়া যায় তাহলো পুরনো দলকেই ক্ষমতায় বসিয়ে থাকে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমরা সে চিত্রই প্রত্যক্ষ করেছি। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কথা বলে। তারা বলে, আমরা জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করি। কিন্তু তারা কখনোই জনগণের মতামতকে মূল্যায়ন করতে চায় না। গত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে দেশের রাজনীতি-অর্থনীতি যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অতীতে কোনো সরকার আমলেও তা হয়নি। এমনকি সামরিক সরকার আমলেও দেশের এতটা ক্ষতি হয়নি। যদি জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করতে হয় তাহলে এই মুহূর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির কোনো বিকল্প নেই।

স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম চেতনা বা উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের দু’অংশের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে সুষম সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা। ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগের সে বিখ্যাত পোস্টার’ সোনার বাংলা শ্মশান কেনো’ কথা নিশ্চয়ই অনেকের মনে থাকার কথা। সেই পোস্টারে পাকিস্তানের দু’অংশের মধ্যে বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্য তুলে ধরা হয়েছিল। যারা সে বিখ্যাত পোস্টারের উদ্যোক্তা ছিলেন তারা এখন কী বলবেন? বাংলাদেশ কি স্বাধীন হবার পর অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে সমর্থ হয়েছে? আজকের দিনে বাংলাদেশ কোনো বাইরের শক্তির সঙ্গে অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে না। এখন স্বাধীন দেশে দু’টি শ্রেণি সৃষ্টি হয়েছে যাদের মধ্যে তীব্র অর্থনৈতিক বৈষম্য বিরাজ করছে। শাসকগোষ্ঠীর আনুকুল্যে সমাজের একটি শ্রেণি অনৈতিকভাবে অর্থবিত্ত কামিয়ে নিচ্ছে। ফলে সমাজে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ আর্থিক বৈষম্য। ‘গিনি সহগ’ নামক পদ্ধতির মাধ্যমে কোনো দেশের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্য পরিমাপ করা হয়। গিনি সহগের তথ্য মোতাবেক ১৯৭২-১৯৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের আয় বৈষম্যসূচক ছিল শূন্য দশমিক ৩৫৮। ২০২২ সালে এটা শূন্য দশমিক ৪৯৯ এ দাঁড়িয়েছে। ‘গিনি সহগ’ শূণ্য দশমিক ৫০০ এ উন্নীত হলে দেশটিকে ভয়াবহ আয় বৈষম্যের দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক হিসাব মতে, ১৯৭৩-১৯৭৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের ১০ শতাংশ শীর্ষ ধনী ব্যক্তি মোট জাতীয় আয়ের ২৮ শতাংশের অধিকারী ছিল। সে সময় সবচেয়ে দরিদ্র ১০ শতাংশ মানুষের অধিকারে ছিল ২ দশমিক ৮ শতাংশ সম্পদ। ২০২২ সালে এসে শীর্ষ ১০ শতাংশ বিত্তবান মানুষের হাতে বা দখলে চলে গেছে মোট জাতীয় আয়ের ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে ১০ শতাংশ দরিদ্র মানুষের সম্পদের পরিমাণ কমে হয়েছে ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। বিত্তবান এবং বিত্তহীনের মাঝে ব্যবধান ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এক শ্রেণির মানুষ রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটে নিয়ে নিজেদের বিত্তের পাহাড় গড়ে তুলছে। অন্যদিকে সমাজের বিত্তহীন মানুষগুলো ক্রমশ আরো দরিদ্র হচ্ছে।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিগত দিনগুলোতে চলছে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অবাধ লুন্ঠন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের প্রতিটি সদস্যের বিরুদ্ধেই অর্থ লোপাটের গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। অতীতে যারা বাংলাদেশের সরকার এবং রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই দুর্নীতি এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে যে ভয়াবহ দুর্নীতি এবং অর্থ লোপাটের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে আর কারো বিরুদ্ধে তেমনটি হয়নি। দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের আমলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন বেশি হয়। কারণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ থেকে অর্থ লোপাট করা সবচেয়ে সহজ। বিগত সরকার আমলে একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে; তা হলো, স্থানীয় বা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সম্পদ আহরণের পরিবর্তে বিদেশী ঋণের মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পাদন করা। বর্তমানে বাংলাদেশের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও হচ্ছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র শ্রীলঙ্কার ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও আমাদের চেয়ে কম। তাদের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও হচ্ছে ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশ বাইরের দেশ ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করেছে। এসব প্রকল্পের কোনো আবশ্যকতা আছে কিনা তা সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়নি। বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। আগামী অর্থবছর থেকে বিদেশী ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ বাড়বে। অবস্থা এমন দাঁড়াতে পারে যে নতুন করে ঋণ নিয়ে আগের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের নামে বিদেশী ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে। সে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে দেশকে বিপদে পড়তে হবে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, আগামীতে যে কোনো সময় দেশ শ্রীলঙ্কার মতো আন্তর্জাতিকভাবে ঋণ খেলাপি দেশে পরিণত হতে পারে।

দেশ ঋণের জর্জরিত হয়ে পড়ছে আর সরকারি সমর্থনপুষ্ট একটি শ্রেণি অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশের পাচার করছে। নৈতিকতার বাইরে গিয়ে কেউ যদি অর্থ উপার্জনের সুযোগ পায় তাহলেই দেশে আয়বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। অন্তর্বর্তীকালিন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য শে^তপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সে কমিটি যে রিপোর্ট প্রদান কেেরছ তাতে দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারের ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। এতে বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ থেকে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার সমতুল্য ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিবছর গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠানই সঠিকভাবে কাজ করছে না। দেশের অর্থ পাচার করে বাংলাদেশীরা দুবাইতে ৫৩২টি বাড়ি ক্রয় করেছে। মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রকল্পে ৩ হাজার ৬০০ টি বাড়ি ক্রয় করা হয়েছে। বর্ণিত সময়ে রাজনৈতিক নেতারা ঘুষ গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। আমলারা ঘুস নিয়েছেন ৯৮ হাজার কোটি টাকা। শেয়ারবাজার থেকে লুটে নেয়া হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকা। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে পৌণে তিন লাখ কোটি টাকা। বিদেশে যেসব বাংলাদেশী বাড়ি বা সম্পদ ক্রয় করেছেন তাদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশই হচ্ছেন আমলা। একজন আমলা যে বেতন-ভাতা পান তা দিয়ে স্ট্যাটাস রক্ষা করে জীবন যাপন করাই কঠিন। তিনি কিভাবে বিদেশে সম্পদ ক্রয় করেন?

অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে, যারাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বেশি বলেন তারাই সে চেতনাকে ধ্বংসের কাজে অগ্রগামী। এখন সময় এসেছে ব্যবস্থা গ্রহণের। যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন করে বিত্ত-বৈভব গড়ে তুলেছেন তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না।

-লেখক : সাবেক ব্যাংকার।