কলাম
জুলাই বিপ্লবের চেতনা লালন করতেই হবে
জুলাই বিপ্লবের ৭ম মাস অতিবাহিত হচ্ছে। আর কয়েকদিন পরই বিপ্লব তার ৮ম মাসে পদার্পণ করবে। ছাত্র জনতার এ বিপ্লব বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্বাধীনতার সমতূল্য। আমরা মুক্তি লাভ করেছি। মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা ফিরে এসেছে। সভা-সমাবেশ ও জমায়েতের অধিকার পেয়েছে।
Printed Edition
॥ আলী আহমাদ মাবরুর ॥
জুলাই বিপ্লবের ৭ম মাস অতিবাহিত হচ্ছে। আর কয়েকদিন পরই বিপ্লব তার ৮ম মাসে পদার্পণ করবে। ছাত্র জনতার এ বিপ্লব বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্বাধীনতার সমতূল্য। আমরা মুক্তি লাভ করেছি। মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা ফিরে এসেছে। সভা-সমাবেশ ও জমায়েতের অধিকার পেয়েছে। গণমাধ্যম মত প্রকাশের স্বাধীনতা। ভিন্নমতাবলম্বীরা নির্ভয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করতে পারছে। আমাদের জাতীয় জীবনে তাই এ বিপ্লবের গুরুত্ব অপরিসীম। যেসব ছাত্র-জনতা এ বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছেন, নেপথ্যে কাজ করেছেন তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। হাজার হাজার মানুষ যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের পরিচালিত আইনশৃংখলা বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের গুলিতে শাহাদাত বরণ করেছেন তাদেরকে আমরা স্বশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি। তারা আমাদের জাতীয় বীর। আর যারা আহত হয়েছেন, এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের আমরা দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
৭ মাসেরও বেশি সময় ধরে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। এ সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। সরকার তার অনেকগুলোই পূরণ করতে পেরেছে। আবার অনেকগুলো করাও সম্ভব হয়নি। অনেকগুলো বিষয় প্রক্রিয়াধীনও আছে। অনেকগুলো বিষয় তারা কোনো দাবি ছাড়া নিজেদের থেকেও জরুরি মনে করে স্বপ্রণোদিত পন্থায় করেছেন। বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ও পদায়নের ঘটনা জনমনে অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা বেশ কিছু ব্যক্তির বিতর্কিত মন্তব্য ও স্ট্যাটাস পরিস্থিতিকে আরো ঘোলাটে ও জটিল করে তুলছে। সবকিছুর মাঝে জুলাই বিপ্লবের চেতনা আস্তে আস্তে যেন ফিকে হয়ে আসতে শুরু করেছে।
রাজনৈতিক দল ও অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন আয়োজন করাকে গুরুত্ব দেওয়ায় বিপ্লবের চেতনা দুর্বল হয়েছে। বরং যদি তারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিচার ও আওয়ামী পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার সব পথ রুদ্ধ করাকে প্রথম অগ্রাধিকার দিতেন, তাহলে একদিকে যেমন ফ্যাসিস্টদের শাস্তি নিশ্চিত হতো, অন্যদিকে বিপ্লবের চেতনা রক্ষা করাও সহজ হতো। তাছাড়া, যেভাবে প্রয়োজন ছিল সেভাবে শহীদ ও আহতদের কুরবানি নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। মাত্র ৭ মাস সময় অতিক্রান্ত হয়েছে অথচ চোখের সামনে হওয়া এসব হৃদয়বিদারক ঘটনা অনেকের কাছেই এখন নিছক স্মৃতি।
রাজনৈতিক দলগুলোর বেশিরভাগই শহীদদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন না। আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ভূমিকা স্বীকৃতি দিতে চান না। ভোটের রাজনীতির হিসেব-নিকেশ তাদেরকে দিনে দিনে আরো সংকীর্ণ করে দিচ্ছে। এমনকী, ভোটের রাজনীতির সমীকরণ আওয়ামী বিরোধী বলয়ের রাজনৈতিক দলগুলোকেও আওয়ামী লীগের ব্যাপারে নমনীয় করে তুলেছে। আবার একই সাথে, জনরায় বা পাবলিক সেন্টিমেন্টের বাইরে গিয়ে তারা নিজেদের সমমনাদের সাথেও অযথাই বিতন্ডায় লিপ্ত হচ্ছেন। এ বাকবিত-ায় একটু সুবিধাজনক অবস্থায় যাওয়ার জন্য কিংবা সমমনাদের কোণঠাসা করে রাখার জন্য তারা প্রয়োজনে ফ্যাসিস্ট শক্তিকে ছাড় দিতেও কুণ্ঠাবোধ করছেন না।
অনেক প্রতিষ্ঠান এমনকী গণমাধ্যমকেও তাদের ভূমিকা পাল্টে ফেলতে দেখা যাচ্ছে। যারা প্রথম থেকে ছাত্র জনতার আন্দোলনকে ব্ল্যাক আউট করেছেন, এ আন্দোলনের চেতনার সাথে সংহতি প্রকাশ করেননি। তারাই এখন বিপ্লবের সবচেয়ে বড়ো অংশীদার হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। বিপ্লবের ক্রেডিট নিয়ে অহেতুক আলোচনাও বেশি হচ্ছে। অপরকে ক্রেডিট দেওয়া বা নিজে সব ক্রেডিট নেওয়ার একটি তাড়নাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর ক্রেডিট নিয়ে বাড়াবাড়ির অংশ হিসেবে অনেকে রীতিমতো বিপ্লবের ইতিহাস ও ধারাবাহিকতাও পাল্টে দেওয়ার প্রয়াস চালাচ্ছেন। ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে বিপ্লবকে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করার অপপ্রয়াসও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের যে দোসরেরা প্রথম কয়েক মাস ভয়ে আত্মগোপনে ছিলেন নানা ফোরামের ব্যানারে তারা আবার সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন।
সরকারী নানা সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান যেমন নিজেদের ভূমিকাকে আড়াল করতে চাইছে। তেমনি গণমাধ্যমের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরাও হুট করে জার্সি বদলের মতো করে ফ্যাসিবাদের দোসরের রূপ ছেড়ে এখন বিপ্লবের সমর্থক সেজেছেন। তবে বাস্তবতা হলো, গণমাধ্যমসহ যেসব প্রতিষ্ঠানে ফ্যাসিস্ট শাসনের দোসররা ছিলেন তারা এখনো অনেকেই বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন। তাদেরকে অপসারণে ব্যর্থতার কারণেই আওয়ামী লীগের অপরাধগুলো সেভাবে সামনে আনা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে এবং একইসাথে মুক্ত পরিবেশের সুযোগ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা বাড়তে থাকলে এক সময় আওয়ামী লীগের ব্যাপারে জনসাধারণের মধ্যে নমনীয় মনোভাব চলে আসতে পারে। সরকারের উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদ থেকে এসব বিতর্কিত গণমাধ্যমকে মূল স্পেসে আসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। গণমাধ্যগুলোর ঐতিহাসিক দ্বিচারিতা সম্পর্কে বারবার সচেতন করা সত্ত্বেও প্রশাসনিক পর্যায়ে বিপ্লবের সেন্টিমেন্ট লালনকারী গণমাধ্যমের চেয়ে বিতর্কিত গণমাধ্যমের সাথে কাজ করার ব্যাপারেই বেশি আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এরই মধ্যে আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ বাস্তবতায় খুব দ্রুত পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। রমজান মাসের পর নির্বাচনী কার্যক্রম ও প্রচারণা বেড়ে গেলে সংস্কার ও আওয়ামী লীগের বিচারিক কার্যক্রম মন্থর হয়ে যাওয়ার আশংকাও রয়েছে। আর রাজনৈতিক সরকার দ্রুত আসছে এরকম একটি বার্তা প্রশাসনের নানা মহলে চলে গেলে সরকারের প্রতি তাদের সহযোগিতার মাত্রাও কমে আসতে পারে। ইতোপূর্বে বিভিন্ন অন্তর্বর্তী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে আমরা এ ধরনের জটিলতায় পড়তে দেখেছি। দেশের মানুষের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব এবং সরকার যেন কোনো অবস্থাতেই এই দায়িত্ব থেকে পিছু না হটে তা নিশ্চিত করতে হবে।
সরকার বরাবরই দাবি করছেন যে, তাদেরকে নানা মহলের আন্দোলন, কর্মসূচি ও দাবি আদায়ের চাপ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এটি কমবেশি সব সরকারকেই করতে হয়। এ সরকারের আমলে এরকম দাবি দাওয়া বেশি আসছে। কারণ, সংশ্লিষ্ট মহলের আশংকা রাজনৈতিক সরকার আসলে এ দাবিগুলোর সিংহভাগই আর পূরণ হবে না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আরেকটি বৈশিষ্ট্যও আমরা লক্ষ্য করেছি। কিছু একটা নেতিবাচক ঘটনা ঘটলেই তারা প্রশাসনের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসরদের অভিযুক্ত করেন। জনগণ তাদের এমন কথা বিশ^াসও করেছে। কারণ আওয়ামী লীগ বিগত ১৫ বছরের শাসনামলে কী ভয়াবহ মাত্রায় দলীয়করণ করেছে তা জনগণ জানেন। কিন্তু এরপরও কথা থাকে। এরই মধ্যে ৭ মাস পার হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের এবং দিন যত যাচ্ছে তারা তত বেশি পুরনো হচ্ছেন। তাই তাদের পারদর্শিতা ও বলিষ্ঠতা বাড়বে এবং তারা ফ্যাসিবাদের সব দোসরদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা নেবেন- এমনটাই জনগণ প্রত্যাশা করেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে জুলাই বিপ্লবের চেতনা লালন কিংবা বিপ্লবের ভিকটিমদের প্রতি আশানুরূপ সহানুভূতি দেখা যাচ্ছে না। আন্দোলনরত ছাত্রদের তারা এক ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করেছেন। দু একটি রাজনৈতিক দল ছাড়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত ও শহীদদের নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মসূচিও লক্ষ্য করা যায় নি। অথচ এখন মূলধারার রাজনীতিতে যে দলগুলো সক্রিয় আছে, সবগুলোই আওয়ামী বলয়ের বাইরের দল। জুলাই বিপ্লবের আগে তারা বিগত সাড়ে ১৫ বছর কী কঠিন পরিস্থিতিতে ছিল কিংবা ছাত্রজনতার আন্দোলন সফল না হলে চলতি সময়েও তারা কতটা অসহায় অবস্থায় থাকতেন- সেই পর্যালোচনা তাদের দিক থেকে থাকা প্রয়োজন ছিল। অথচ তারা সব কিছু ভুলে অকৃতজ্ঞতাসুলভ মনোভাব প্রকাশ করছেন।
সরকারের তরফ থেকে যেটুকু সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে, তাও প্রত্যাশার তুলনায় অনেকটাই কম। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনুস তার প্রতিটি কথায়, বক্তব্যে ও সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধারণের কথা বলছেন। ছাত্র দুজন উপদেষ্টাসহ আরও দু’একজন উপদেষ্টার ভূমিকাও যথেষ্ট আশা জাগানিয়া। কিন্তু বাকিদের নিয়ে এবং প্রশাসনের অনেকের মাঝেই এই চেতনা লালনের ক্ষেত্রে দুর্বলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কাজেকর্মে মন্থরতা, পুলিশ বাহিনীর সার্বিক প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা, ট্রাফিক পুলিশের অসহযোগিতা, মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরগুলোর অনেক কর্মকর্তার মান্ধাতা মানসিকতা প্রমাণ করে দেশে যে, আদৌ একটি বিপ্লব হয়েছে এটি যেন তারা জানেন না, মানেনও না। এখনো পর্যন্ত সকলের মধ্যেই প্রধানত নিয়োগ, পদায়ন বা নানা ধরনের তদবির নিয়েই যেন আগ্রহ বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। নিজেদের অধিকার বঞ্চিত ও পদবঞ্চিত দাবি করে নিজেদের প্রাপ্তিগুলো জরিমানাসহ আদায়েই যেন সবাই তুলনামূলক বেশি তৎপর।
আওয়ামী লীগের অপরাধী নেতাদের বিচারের ঢিলেমী গতি জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। একটি ট্রাইবুনাল গঠিত হয়েছে যার উদ্দেশ্য হলো জুলাই বিপ্লবের অপরাধীদের বিচার করা। তবে ট্রাইবুনালও খুব বেশি জোরগতিতে এগুচ্ছে না। বড়ো বড়ো ব্যবধানে তারিখ দেওয়া হচ্ছে। অভিযুক্তদের আইনজীবীরা নানা ঠুনকো অজুহাতে আদালতের কার্যক্রমকে বিঘিœত করছেন আর তাদেরকে সে সুযোগও দেওয়া হচ্ছে। যেভাবে আসামীরা আদালতে হাসিমুখে আসছেন এবং মিডিয়ার সামনে নানা ধরনের উস্কানিমূলক মন্তব্য করছেন তাও জনগণকে আশাবাদি হতে দিচ্ছে না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে সবকিছু যেন মন্থর গতিতেই চলছে। বিচারিক প্রক্রিয়াগুলোর দৃশ্যমান কিছু অগ্রগতি মানুষের সামনে উপস্থাপন করার প্রয়োজন ছিল। তাহলে সরকারের কর্মকান্ডের প্রতি মানুষের আস্থা আরো বৃদ্ধি পেতো। বাড়তো।
সাম্প্রতিক সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নানামুখী অপতৎপরতার কথা জানা যাচ্ছে। কী হতে যাচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। তবে আওয়ামী লীগ যে বসে নেই এবং তারা যে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য সর্বগ্রাসী উদ্যোগ নিচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও অন্যান্য নেতার অডিও-ভিডিও বার্তা, বক্তব্য বা ফোনালাপগুলো প্রমাণ করছে যে, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের ভূমিকায় আর নেই। বরং তারা দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগের এসব তৎপরতা রোধ করতে হলে ভারত সরকারের সাথে এ নেতাদের অবাধ যোগাযোগ বা অবাধ যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মী হওয়ার পরও যারা দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিয়ে বেড়াচ্ছেন তাদের লোকেশন বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য জোর পদক্ষেপ প্রয়োজন। সরকার বর্তমানে অপারেশন ডেভিল হান্ট নামের একটি অভিযান পরিচালনা করছেন। আশা করি, এর মাধ্যমে দুর্বৃত্ত ও অপরাধীদের সংযত করা সম্ভব হবে।
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পরও এর সভাপতির সাক্ষাৎকার প্রচার করছে বেশ কিছু মিডিয়া। বিদেশে বসে এ্যাক্টিভিজম করার নামে লোকগুলো কার্যত আওয়ামী লীগের অন্যায়কে আড়াল করার চেষ্টা করছে এবং আওয়ামী লীগের বিষয়ে জনমনে সহানুভূতি তৈরিতে কাজ করছে। শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়া, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের বিচার ও চলমান প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করা এবং দেশের বিরুদ্ধে অস্থিতিশীলতা তৈরির সবগুলো কূটকৌশল তারা পরিচালনা করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢুকলেই আওয়ামী এ্যাক্টিভিস্টদের তৎপরতা চোখে পড়ছে। তারা তিলকে তাল বানিয়ে অপপ্রচার করছে। পুরনো কোনো সহিংসতা বা হত্যাকা-ের ছবি বা ভিডিওকে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের সাম্প্রতিক সময়ের অপকর্ম বলে প্রচার করছে। সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হচ্ছে। তাদেরকে ব্যর্থ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। “হাসিনার আমলেই ভালো ছিলাম’ এমন একটি চিন্তাধারাকে উপজীব্য করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের দলীয় ওয়েবসাইটে এবং ফেসবুক পেইজে একের পর এক জনদুর্ভোগের কথা প্রচার করা হচ্ছে। সাজানো লোক দিয়ে নাটক তৈরি করে সরকারের বিরুদ্ধে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সবমিলিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশে সংঘটিত ছাত্র বিপ্লবের বিপরীতে কাউন্টার বিপ্লব ঘটানোর জন্য ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সমর্থক নানা মহল থেকে সর্বাত্মক অপচেষ্টা পরিচালনা করা হচ্ছে। ফ্যাসিবাদ ফিরে এলে দেশের স্বাধীনতা, মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র ফের বিপন্ন হবে। দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষকে আবারও নিপীড়নের শিকার হতে হবে। শেখ হাসিনার বিভিন্ন বক্তব্য ও অডিও আলাপের মধ্য দিয়ে তার জিঘাংসা এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষ করে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা যারা বিপ্লবে অংশ নিয়েছেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে আছেন, ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তনে তাদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। তাই ফ্যাসিবাদ যেন আর ফিরে আসতে না পারে তা নিশ্চিত করতেই হবে। অন্যথায় ফ্যাসিবাদ নতুন আঙ্গীকে ও ভিন্নরূপে মাথাচারা দিতে পারে।