কলাম
লেডি হিটলার ও তার সাগরেদদের বিচার না করা হবে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ
গত ১৫ বছরের মধ্যে শুধুমাত্র জুলাই-আগস্টের ২১ দিনেই ১ হাজার ৪০০ মানুষের খুনে হাত রাঙ্গিয়েছেন পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,
Printed Edition
আসিফ আরসালান
গত ১৫ বছরের মধ্যে শুধুমাত্র জুলাই-আগস্টের ২১ দিনেই ১ হাজার ৪০০ মানুষের খুনে হাত রাঙ্গিয়েছেন পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তার মন্ত্রিসভার কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, হেলমেট বাহিনী বলে পরিচিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ঘাতক বাহিনী এবং সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্র। এ ১ হাজার ৪০০ আদম সন্তান ছাড়াও বিগত সাড়ে ১৫ বছরে শেখ হাসিনা সামরিক বাহিনীর অফিসার, বুজুর্গ, আলেম ওলামা এবং আল্লামা সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর প্রতিবাদকারীদের রক্তে হোলি খেলেছেন শেখ হাসিনা এবং তার ঘাতক সাঙ্গ্যাতরা। জার্মানির দানব একনায়ক হিটলার লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিলেন। সেজন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে হলোকাস্ট (গণহত্যা) মিউজিয়াম বানানো হয়েছে। বাংলাদেশেও শেখ হাসিনাকে ‘লেডি হিটলার’ বলে সম্বোধন করেছিলেন বিএনপির প্রধান ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া। ২০১৫ সালের নবেম্বর মাসে লন্ডনে একটি হোটেলে দলীয় কর্মী সম্মেলনে হাসিনাকে লেডি হিটলার খেতাব দেন বেগম জিয়া। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে এখন চলছে রাজতন্ত্র। একজন লেডি হিটলার দেশটি পরিচালনা করছেন।
আজ থেকে ১০ বছর আগে বেগম জিয়া শেখ হাসিনাকে লেডি হিটলার বলেছিলেন। তারপর ১০ বছর পার হয়ে গেছে। তৎ পরবর্তী ১০ বছরে বুড়িগঙ্গার তল দিয়ে অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট মাত্র ২১ দিন। এই ২১ দিনে ১ হাজার ৪০০ হাজার ছাত্র জনতা দানব সরকারের বুলেটে প্রাণ হারিয়েছেন। এ তথ্য রিপোর্ট আকারে প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।
রিপোর্টের এক স্থানে বলা হয়েছে, পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কোর কমিটিকে নিয়ে বৈঠকে নিয়মিতভাবে সভাপতিত্ব করতেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কোর কমিটির বৈঠকে সামগ্রিক পদক্ষেপের কৌশলগত নির্দেশনার পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে বাহিনী মোতায়েন ও সুনির্দিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অভিযান নিয়ে আলোচনা হতো। এর পাশাপাশি সমন্বিতভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমন্বয় প্রক্রিয়ার সম্পূরক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও এ প্রক্রিয়ায় সরাসরি যুক্ত ছিল। জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে ৫ আগষ্ট পর্যন্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এসবি, ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের প্রধানদের কাছে থেকে নিয়মিতভাবে সরাসরি প্রতিবেদন পেতেন। এ ধরনের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের মধ্যে ২১ জুলাইয়ের একটি প্রতিবেদনে আন্দোলনকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের বিষয়ে শেখ হাসিনাকে সতর্ক করা হয়েছিল। একই ধরনের উদ্বেগ আগস্টের শুরুতেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হয়। আর আন্দোলনের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টারা সরাসরি ও টেলিফোনে নিরাপত্তা বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের আদেশ দিতেন ও সার্বিক অপারেশন পর্যবেক্ষণ করতেন।
এসম্পর্কে বিবিসির রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পুলিশের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের ৯৫ জন সদস্যের নাম এবং তাদের ভূমিকা কী ছিল তার বিস্তারিত বিবরণ ওএইচসিএইচআর-কে সরবরাহ করা হয়েছে। “পুলিশের মতে এসব ব্যক্তিরাই বিক্ষোভের সময় সহিংস হামলায় ব্যবহারের জন্য নাগরিকদের অস্ত্র সরবরাহ করেছিল। যাদের অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ১০ জন তখনকার সংসদ সদস্য, ১৪ জন আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ে নেতা, ১৬ জন যুবলীগ ও ১৬ জন ছাত্রলীগ নেতা এবং সাতজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন।” রিপোর্টে বলা হয়, পুলিশ ও অন্য নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর দ্বারা শিশুরা টার্গেট কিলিং এর শিকার হয়েছে। “বিশেষত শুরুর দিকে বিক্ষোভের সম্মুখসারিতে থাকা নারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকরা মারাত্মকভাবে আক্রমণ করেছে। কয়েকটি ডকুমেন্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে।”
এতে আরও বলা হয়েছে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য এবং ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ওএইচসিএইচআর নিশ্চিত হয়েছে যে, বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকদের একটি সম্প্রসারিত দল পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে বা ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কাজ করেছিল। “তারা বিক্ষোভ দমনের জন্য সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে ব্যাপকভাবে বেআইনি সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছিল। অভিযান শুরুর আগেই সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকরা পুলিশের সাথে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিল অথবা পুলিশ ফোর্সের পেছনে থেকে আক্রমণে অংশ নিয়েছিল।” রিপোর্টে বলা হয়, আন্দোলনের সময় ডিজিএফআই, এনএসআই, এনটিএমসি, ডিবি, এসবি, সিটিটিসির মতো গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আন্দোলনকারীর সহিংস দমনে সরাসরি জড়িত থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।
রিপোর্টের আরেকটি অংশ অত্যন্ত মারাত্মক। এখানে শেখ হাসিনার রক্তপিপাসা দেখানো হয়েছে। তিনি বলছেন, ১৮ই জুলাই তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি কোর কমিটির সভা হয়। ওই সভায় পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবি প্রধান ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এসব তথ্য দিয়ে রিপোর্টে বলা হয়, “ওই বৈঠকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে বিজিবি কমান্ডারকে আরও দ্রুত প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দেন।” সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাক্ষ্যকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে যে এর পরদিন অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তখনকার প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিক্ষোভ দমনের জন্য বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে বলেছিলেন এবং বিশেষভাবে বিক্ষোভের মূল হোতা, “সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের গ্রেপ্তার, হত্যা এবং হত্যার পর লাশ লুকিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।”
ইংরেজিতে দুটি চমকপ্রদ শব্দ হলো, Self explanatory, অর্থাৎ আঁটি ভেঙে শাঁশ দিতে হয় না। পড়লেই বোঝা যায়। মাত্র এ কয়েকটি উদ্ধৃতি পড়লেই বোঝা যায় যে শেখ হাসিনা, তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তার সাবেক কয়েকজন পুলিশের আইজি, কয়েকজন মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কেউ সরাসরি গুলি করেছেন। অথবা তারা সকলেই হুকুমের আসামী। এ গণহত্যায় সাংগঠনিকভাবেও আওয়ামী লীগ দায়ী।
এসব কারণে আওয়ামী লীগকে এ মুহূর্তেই নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করা যায়। বিএনপি এখনও বলছে, তারা নিষিদ্ধ করবে না। জনগণই নাকি নিষিদ্ধ করবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার আরেকটি অপশন রয়েছে। সেটি হলো, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করা। বিচার করলে প্রমাণিত হবে যে আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এটি একটি সন্ত্রাসী ঘাতক মাফিয়া ডনদের দল। তেমন সংগঠিত গ্যাংস্টারদেরকে ফৌজদারি আইনেই নিষিদ্ধ করা যায়। একমাত্র বিএনপি ছাড়া আর সবদলই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চায়। আসলে গুণ্ডামির অভিযোগে তাদেরকে নিষিদ্ধ করার এখনই সময়।
॥ তিন ॥
গত সপ্তাহে আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। সেটি হলো, ৬ জন উপদেষ্টা, কয়েকজন সাংবাদিক এবং কয়েক জন ভুক্তভোগীকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইউনূসের আয়নাঘর পরিদর্শন। আয়নাঘর শব্দটি বর্তমান সরকারের কারো কারো কাছে নতুন মনে হলেও শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছে নতুন নয়। তবে উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস আয়নাঘর পরিদর্শন করেছেন। সত্যানুসন্ধানী পর্যবেক্ষক মহল এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দায়িত্ব নেওয়ার ৬ মাস পর প্রধান উপদেষ্টা আয়নাঘর পরিদর্শন করলেন। আসলে আগেই তার এই পরিদর্শন করা উচিত ছিল। তিনি নিশ্চয়ই দেখেছেন, তার পরিদর্শন সঙ্গীরা তাকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, কোথায় কোথায় আয়নাঘরে সংঘটিত জুলুম নির্যাতন এবং হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এবং সেসমস্ত আলামত সম্পূর্ণভাবে না হলেও আংশিকভাবে মুছে ফেলা হয়েছে।
প্রশ্ন হলো, কারা এসব আলামত নষ্ট করলো? এদেরকে আইডেন্টিফাই বা চিহ্নিত করা অতি জরুরি। আলামতগুলো যে নষ্ট করা হয়েছে তার প্রমাণ তো স্বয়ং তাসনিম খলিল। ইনিই সেই তাসনিম খলিল যিনি ১/১১ এর সময় ইংরেজি ডেইলি স্টারে সাংবাদিকতা করতেন। ঐ ১/১১ এর সময়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জামিনে মুক্তির পর তিনি দেশ ছেড়ে যান এবং সুইডেনে সেট্ল করেন। অতঃপর সেখান থেকে ‘নেত্র নিউজ’ নামে একটি বাংলা নিউজ পোর্টাল বের করেন এবং নিয়মিত ইনভেস্টিগেটিভ বা অনুসন্ধানী রিপোর্ট ছাপেন।
॥ চার ॥
আয়নাঘরের অস্তিত্ব জনগণের কাছে প্রথম নিয়ে আসেন জনাব তাসনিম খলিল। ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট নেত্র নিউজে প্রকাশিত খবরে তিনিই প্রথম বলেন যে, আয়নাঘর নামে ডিজিএফআই এবং র্যাব পরিচালিত আয়নাঘর রয়েছে। ঐ রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ২৯ মে শেখ মোহাম্মদ সেলিম নামের একজন পরিবহণ ব্যবসায়ীকে সরকারি এজেন্সীর লোকজন উঠিয়ে নেয়। তারপর তাকে নেওয়া হয় ঐ রিপোর্টটির ভাষায় ডিজিএফআইয়ের গোপন বন্দীশালা আয়নাঘরে। সেলিম আয়নাঘর থেকে মুক্তি পাওয়ার পর মালয়েশিয়া চলে যান। ২০১৬ সালের আগে আয়নাঘর ছিল কিনা সেসম্পর্কে আমরা নিশ্চিত নই। তবে আয়নাঘরের বিভীষিকা, টর্চার এবং হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে দেশের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। এরা হলেন, সর্বজন শ্রদ্ধেয় জামায়াতের সাবেক আমীর মরহুম অধ্যাপক গোলাম আজমের পুত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আমান আজমী। তিনি সোর্ড অব অনার পাওয়া একজন মিলিটারী অফিসার। আরো ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা প্রভৃতি জনকল্যাণমূলক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মীর কাসের আলীর পুত্র ব্যরিস্টার আরমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) হাসিনুর রহমান। কর্নেল হাসিনকে দুইবার গ্রেফতার করে আয়নাঘরে নেওয়া হয়।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্যান্টমেন্টের অভ্যন্তরে অবস্থিত দুই’টি আয়নাঘর এবং উত্তরায় র্যাব পরিচালিত একটি আয়নাঘর পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনের পর তার প্রেস সচিব বলেছেন, এ ধরনের আয়নাঘর শুধুমাত্র ঢাকায় নয়, সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তার তথ্যমতে সারাদেশে ৭৫০ থেকে ৮০০ টি আয়নাঘর থাকতে পারে। তিনি বলেছেন যে, সংখ্যাটি আরো বেশি হতে পারে। প্রেস সচিব শফিকুল আলম আরো বলেন যে, আমরা তো আগে মনে করতাম যে দেশে হাসিনার ১৫ বছরের আমলে ৪০০/৫০০ লোককে বলপূর্বক অপহরণ (Enforced Disappearance) করা হয়েছিল। কিন্তু এখন যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো পর্যালোচনা করে মনে হচ্ছে, এ সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
আয়নাঘর সম্পর্কে আরো প্রচুর তথ্য পাওয়া যায়। স্থানাভাবে সেগুলো উল্লেখ করা গেল না। যারা ভুক্তভোগী তারা এবং ‘মায়ের ডাক’ নামক সংগঠনটির কাছে গুম হওয়া একটি তালিকা আছে। প্রয়োজন হলে পাঠকদের কাছে এসম্পর্কে আমরা আরো তালিকা দিতে পারবো। তবে এ মুহূর্তে যেটি প্রয়োজন, সেটি হলো, বিগত ১৫ বছরে কতজন মানুষকে বলপূর্বক অপহরণের ভিকটিম করা হয়েছে? কতজন তাদের মধ্যে এখনও আর ফিরে আসেননি, অর্থাৎ নিহত হয়েছেন? সবগুলো আয়নাঘরে সম্মিলিতভাবে কত হাজার বন্দী ছিলেন? কতজনকে এ পর্যন্ত ছাড়া হয়েছে? কতজন এখনও নিরুদ্দিষ্ট?
এসব বলপূর্বক অহরণ, বিচার বহির্ভূত হত্যা (বন্দুকযুদ্ধ, এনকাউন্টার বা ক্রসফায়ার) প্রভৃতির সঠিক সংখ্যা জানা প্রয়োজন কতজন মুক্তি পেয়েছেন সে সংখ্যাও জানা প্রয়োজন। শেখ হাসিনা স্বয়ং এসব আয়নাঘর প্রতিষ্ঠার এবং আয়নাঘরের গোপন বন্দীশালায় বন্দীদের ওপর নির্যাতন, জুলুম এবং হত্যার হুকুম দিয়েছেন। কিন্তু এসব খুন খারাবিতে তার দক্ষিণ হস্ত ছিলেন ৪ জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, ডিবি কমিশনার হারুন, সিআইডি, পুলিশের সাবেক আইজি বেনজির আহমেদ, অতিরিক্ত আইজি মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রফেসর ইউনূস আয়নাঘর দেখে শিওরে উঠেছেন। বলেছেন, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের রাজত্ব ছিল আইয়্যামে জাহেলিয়াত। অর্থাৎ অন্ধকার যুগ। এদের সম্পর্কেও জাতিসংঘ রিপোর্টে বলা হয়েছে। গুম ও খুন সম্পর্কে বিগত ১৫ বছর থেকেই লেখা হচ্ছে। একবার আমেরিকা র্যাবের ওপর একারণে স্যাংশন দিয়েছিল। এখন আর কাল বিলম্ব না করে প্রতিটি গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যার বিচার করতে হবে। এখানে উদারতার কোনো সুযোগ নেই। উদারতা দেখালে হাসিনার আমলে আন্দোলনে নিহত এবং গোপন বন্দীশালায় নিহত হাজার হাজার ভিকটিমের আত্মা কষ্ট পাবে।
Email: [email protected]