DailySangram-Logo

গল্প

কুয়াশার এক ভোরে

কুয়াশায় ঘেরা এক শীতের সকালে দশ বছরের টোকাই শিশু টিপলু। খুব জড়োসড়ো হয়ে ঘুমিয়ে আছে ঢাকার হাইওয়ের ফুটপাতের পাশে।

Printed Edition

ফারুক আহম্মেদ জীবন

কুয়াশায় ঘেরা এক শীতের সকালে দশ বছরের টোকাই শিশু টিপলু। খুব জড়োসড়ো হয়ে ঘুমিয়ে আছে ঢাকার হাইওয়ের ফুটপাতের পাশে। তার পাশেই ময়লা আবর্জনা ফেলানোর ডাস্টবিন। খুব ভোর হতেই শহরের মানুষজন সেখানে তাদের বাড়ির বর্জিত খাদ্য ময়লা এসে ফেলে যাচ্ছে। সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। টিপলু ঘুমন্ত অবস্থায় শীতে থুরথুর করে কাঁপছে। তার মাথার উপর ছাদ বলতে হিমঝরা সারাটা খোলা গগন। আর নীড় বলতে স্রষ্টার সৃষ্টির সুবিশাল উন্মুক্ত এই পৃথিবী। সে ঘুমিয়ে আছে ফুটপাতের একটা কুকুর-কে জড়িয়ে ধরে। অন্য একটি কুকুর তার মাথার নিচে বালিশ হয়ে আছে। একটা অবুঝ প্রাণী কুকুর ছোট্ট শিশু টিপলুর জন্য কতোটা মায়াশীল হয়ে তার উপর মানবতার দেখাচ্ছে।

টিপলু শুয়ে আছে, নিচে ধুলোবালি ভরা। ইট খোয়ার ছোট ছোট কুচি টুকরো বোঝাই। সারারাত তুষার ঝরা হিম জলে ছিঁড়া-ছুটো ময়লা জামাকাপড় ভিজে লেপ্টে আছে তার দেহের সাথে। হয়তো গতরাতে তার পেটে দানাপানিও জোটেনি। ঐ পথ দিয়ে শো শো করে একটার পর একটা গাড়ি চলে যাচ্ছে। ঐ রোড দিয়ে প্রাইভেট কারে যাচ্ছিলো এক ধনীর দুলালি। সাত- আট বছর বয়স, নাম টিকলি। সে স্কুলে যাচ্ছিলো। হঠাৎ পথের পাশে নজর যেতেই দেখতে পেলো একটা ছোট্ট ছেলে শীতে ঠনঠন করে কাঁপছে। গায়ে শীতের কোনো গরম কাপড় নেই। ছেলেটিকে শীতে ঐভাবে কাঁপতে দেখে টিকলির খুব মায়া হলো। গাড়ি ড্রাইভিং করছিল টিকলির বাবা তিয়াস চৌধুরী। টিকলি বললো... আব্বু গাড়িটা একটু একপাশে থামাবে? তিয়াস চৌধুরী বললো, কেনো-রে মা টিকলি? কিছু কিনবি মা? টিকলি বললো..একটু দরকার আছে আব্বু। তিয়াস চৌধুরী মেয়ে বলা মাত্র গাড়ি ব্রেক করে একপাশে রাখলো।

টিকলি দরজার হুট খুলে ছেলেটির কাছে গেল। সে তার গায়ের শীতের দামী জ্যাকেট খুলে টিপলুর গায়ের উপর দিল। আশপাশের লোকজন তাকিয়ে দেখছে ছোট্ট একটা মেয়ের এমন সহানুভূতি পূর্ণ উদারতা। ওর বাবা মেয়ের অমন মহানুভবতা দেখে খুব খুশি হলো। ততক্ষণে টিপলু ঘুম থেকে জেগে উঠেছে। টিপলুর চোখেমুখে কৃতজ্ঞতা ভরা মলিন হাসি ফুটে উঠলো। টিপলু বললো...আল্লাহ আপনাকে অনেক ভালো করবেন। তা- শুনে প্রাণটা যেনো ভরে গেল টিকলির আব্বু তিয়াস চৌধুরীর। তিয়াস চৌধুরী বললো...মা টিকলি। আমি খুব খুশি হয়েছি মা, তোর এমন দয়া পূর্ণ দানশীলতার মহৎ কাজ দেখে। আসলে আমাদের সমাজে যারা সামর্থ্যবান তাদের সকলের উচিত যার যার নিজেদের অবস্থান থেকে এগিয়ে আসা। এমন শীতে ঘর-বাড়ি হারা যাদের ঠিকানা নেই এমন অসহায় পথের টোকাই শীতার্ত শিশু, কিম্বা যারা হতদরিদ্র, শীতের গরম কাপড় কিনতে অপারগ, তেমন সকল অভাবি বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের জন্য শীতের গরম কাপড় কিনে দেওয়া। টিকলি বললো...তুমি ঠিক বলেছ আব্বু। আর আমি চাই সেটা তোমার আমার থেকে শুরু হোক। আজই তুমি পাঁচশো অনাথ পথশিশুর জন্য আর পাঁচশো বৃদ্ধ বৃদ্ধা অভাবীদের জন্য শীতের জামাকাপড় কম্বল কিনে দিবে। আমি নিজে এইসব অনাথ পথশিশু আর দরিদ্রদের হাতে তুলে দিতে চাই। জানো আব্বু শীতের ঠান্ডায় এদের যে কষ্ট পেতে দেখলে আমার মনটা ভীষণ কেঁদে ওঠে। আমি চাই এদের মতো অসহায় মানুষদের জন্য সাধ্যমত কিছু করতে। তিয়াস চৌধুরী শুনে বললো..মহান আল্লাহ তোর মন আরো বড় করুক মা। অনেক বড় মনের মানুষ হ- তুই। তারপর ঐদিনেই তিয়াস চৌধুরী মেয়ে টিকলির কথা মতো একহাজার অনাথ অসহায় হতদরিদ্র মানুষদের জন্য শীতের জামাকাপড় কম্বল কিনলো। তা-দেখে টিকলি খুব খুশি। সে নিজে হাতে রাস্তার পাশে পড়ে অসহায় সকল অনাথ পথশিশু আর ঘরবাড়ি হারা নিঃস্ব মানুষদের মাঝে বিলিয়ে দিলো। তাদের খাবার বিতরণ করলো। অসহায়দের মাঝে দান করতে পেরে আজ টিকলি মনের দিক থেকে অনেক তৃপ্তি পেলো।