গল্প
ধা রা বা হি ক উ প ন্যা স
পিঁপড়া কলোনি
আকাশছোঁয়া ছাতিম গাছের নিচে দুর্বাঘাসের ঝোপ। কয়েকজন বন্ধুর সাথে ঝোপের মধ্যে বসে আছে অ্যান্ডি। পিঁপড়া কলোনি থেকে বিতাড়িত হয়েছে তারা। অ্যান্ডি তাদের বন্ধু ও দলনেতা।
Printed Edition
খন্দকার নূর হোসাইন
আকাশছোঁয়া ছাতিম গাছের নিচে দুর্বাঘাসের ঝোপ। কয়েকজন বন্ধুর সাথে ঝোপের মধ্যে বসে আছে অ্যান্ডি। পিঁপড়া কলোনি থেকে বিতাড়িত হয়েছে তারা। অ্যান্ডি তাদের বন্ধু ও দলনেতা।
পিঁপড়ারা অনেক পরিশ্রমী। তবুও ওদের কলোনির পিঁপড়াদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় না। একের পর এক সমস্যা লেগেই আছে। পিঁপড়াদের শক্তি তাদের একতা। এটা যে-কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ঐক্যবদ্ধ থাকলে তাদের কেউ ক্ষতি করতে পারে না। কিন্তু কিছু বিষয় নিয়ে মতানৈক্য দেখা দিচ্ছে এখন। যা ওদের কলোনির কারো জন্যই ভালো নয়। বেশ কয়েক বছর ধরে ওদের নতুন সমস্যা শুরু হয়েছে। ওদের পরিশ্রমে জমানো খাদ্য-শস্যের ওপর অন্যায়ভাবে ভাগ বসাচ্ছে ঘাসফড়িংরা। এ যেন উড়ে এসে জুড়ে বসা। ধূসর বর্ণের ঘাসফড়িংগুলো বেশ শক্তিশালী। তাই সবাই ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস করে না। পিঁপড়ারা রাতদিন পরিশ্রম করে। ঘাসফড়িংরা শুয়ে-বসে সময় কাটায়। খাদ্যের জন্য করতে হয় না আলাদা কোনো পরিশ্রম। সবাই মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছে তাদের সব অত্যাচার। অ্যান্ডি ছোটোবেলা থেকেই এসব দেখে আসছিল। এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে গলা উঁচু করে কথা বলতে যেত সে। বাবা-মা মুখ চেপে ধরতেন। ঘাসফড়িংরা শুনে ফেললে সমস্যায় পড়ে যাবে। বাবা-মা ওদের সমীহ করতে শিখিয়েছে। কিন্তু অ্যান্ডি একরোখা। এ নিয়ে ছোটোবেলায় ওর আব্বুর সাথে ফাসফড়িংয়ের সর্দারের ঝামেলাও হয়েছিল কয়েকবার। অ্যান্ডি ছোটো বলে শেষ পর্যন্ত আর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ঘাসপোকারা।
শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে অ্যান্ডি এখন যুবক। তারুণ্যের শক্তি তার মধ্যে। সে আর এসব দেখতে চায় না। তরুণ পিঁপড়েদের মধ্যে নিজের বক্তব্যগুলো তুলে ধরতে শুরু করলো সে। সাহসী তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিলো অ্যান্ডির প্রদীপ্ত আহ্বান। এর সাথে অন্য একটা সমস্যা দেখা গেল।
অ্যান্ডির পক্ষে তরুণদের স্রোত দেখে কলোনির প্রধান তার নেতৃত্ব নিয়ে শঙ্কিত হয়ে উঠলো। সে দ্রুত কিছু করতে চাইলো। অন্যদিকে সে-ও কলোনির সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজছিল। অ্যান্ডির আহ্বান ছিল ‘সম্মিলিত প্রতিরোধের মাধ্যমে ঘাসফড়িংদের থেকে মুক্ত হও’। অপর দিকে কলোনির প্রধান লিতি সহজ কোনো উপায় খুঁজছিল। সংগ্রাম-প্রতিরোধের সাহস তার নেই। তার মনোভাব অন্যদের মাঝেও সঞ্চারিত হলো। পিঁপড়াদের প্রাণের দাবি ছিল ঘাসফড়িংদের অত্যাচার থেকে বাঁচা। লিতিও সেটা উপেক্ষা করতে পারেনি। এরমধ্যেই সে ওদের চিরশত্রু ফগের ষড়যন্ত্রে পা দিলো।
ফগের সাথে যুদ্ধচুক্তি করে ফেললো লিতি। ফগ ওদের আশ্বাস দিয়েছে, পিঁপড়া কলোনির প্রবেশ পথ খুলে দিলে তার বিনিময়ে ঘাসফড়িংদের থেকে সে পিঁড়াদের বাঁচাবে। পিঁপড়া কলোনি ছিল দুর্ভেদ্য। মাটির নিচে ঘর আর ওপরে বিচরণের উন্মুক্ত প্রান্তর। সেটার চারপাশে ছিল কাঁটাযুক্ত ঘাস ও লতাপাতায় ঘেরা। যে দেওয়াল টপকে ব্যাঙ বা অন্য কিছু আসতে পারতো না। ঘাসপোকারা উড়তে পারতো বলে তারা এখানে আসতে পেরেছিল। নৃশংস ফগকে সবাই চেনে। তবুও লিতির ওপর আস্থা রাখলো পিঁপড়ারা। লিতির সিদ্ধান্তে তুমুল বিরোধিতা করলো অ্যান্ডি ও তার সমর্থকরা। এছাড়া অনেক সচেতন পিঁপড়া অ্যান্ডির সাথে একমত হলো। সচেতন পিঁপড়ারা ফগের অতীত ইতিহাস জানতো। ব্যাঙ যে ওদের কখনোই বন্ধু হবে না এটাও তারা বিশ্বাস করতো।
অ্যান্ডি বলেছিল, ‘ছোটো শত্রুর হাত থেকে মুক্ত হয়ে আমরা বড়ো শত্রুর হাতে পড়তে চাই না।’
অ্যান্ডির কথা সে সময় অধিকাংশরাই গ্রহণ করেনি। অ্যান্ডি ও তার সমর্থকরা ফগের সাহায্য নিয়ে কলোনি মুক্ত করার ঘোর বিরোধী ছিল। সে চেয়েছিল নিজেরাই এর সমাধান করতে। অনেকেই অ্যান্ডিকে সার্পোট করলেও সে সংখ্যাটা ছিল কম। সিংহভাগ পিঁপড়া স্রোতে গা ভাসালো। তারা ফগের আসল চেহারা চেনার চেষ্টাও করলো না।
ফগের জন্য কলোনির রাস্তা খুলে দিলো লিতি। শুরু হলো ফগের অ্যাকশন। ওকে সাহায্য করলো পিঁপড়াদের দল। ফক ঘাসের মধ্যে লুকিয়ে থাকতো। সুযোগ বুঝে ঘাসফড়িং ধরে খেয়ে ফেলতো। একসময় ফগ সর্বশেষ ঘাসফড়িংটিকেও খেয়ে ফেললো। পিঁপড়া কলোনিতে যেন স্বস্তি ফিরে এলো। চারদিকে চললো বিজয় উৎসব।
তখন থেকেই অ্যান্ডি ও তার সমর্থকদের কলোনি বিরোধী বলে গালি দেওয়া শুরু করলো লিতির অনেক সমর্থক পিঁপড়ারা। (চলবে)