DailySangram-Logo-en-H90

ইউরোপ

ইউক্রেনের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি চায় রাশিয়া

ইউক্রেনে মার্কিন সমর্থিত তড়িঘড়ি যুদ্ধবিরতি চায় না রাশিয়া। বরং যুদ্ধের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে দীর্ঘস্থায়ী শান্তিচুক্তিতে আগ্রহী তারা। গতকাল সোমবার এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকোভ। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা এ খবর জানিয়েছে।

সংগ্রাম ডেস্ক
Printed Edition
Ukren-Rashia

২৪ ফেব্রুয়ারি, রয়টার্স : ইউক্রেনে মার্কিন সমর্থিত তড়িঘড়ি যুদ্ধবিরতি চায় না রাশিয়া। বরং যুদ্ধের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে দীর্ঘস্থায়ী শান্তিচুক্তিতে আগ্রহী তারা। গতকাল সোমবার এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকোভ। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা এ খবর জানিয়েছে।

তিনি বলেছেন, দ্রুত একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য তড়িঘড়ি করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে এমন শান্তি চুক্তি চাই, যা সময়ের পরীক্ষায় উৎরে যাবে।

তার ভাষ্য অনুযায়ী, দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের মঞ্চ তৈরি না করে যুদ্ধবিরতিতে গেলে কিছুদিন পর আবারও সংঘর্ষ শুরু হবে। আর সেটার ভয়াবহতার মাত্রা আরও তীব্র হতে পারে। এমনকি রুশ-মার্কিন সম্পর্কেও টানাপড়েন শুরু হতে পারে।

রিয়াবকোভ বলেছেন, আমাদের দীর্ঘস্থায়ী একটি সমাধান দরকার। এজন্য, ইউক্রেন ইস্যুতে সংঘাতের গোড়ার কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধান করাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

গত সপ্তাহে রিয়াদে আয়োজিত রুশ-মার্কিন বৈঠকের পর এ কথা বললেন তিনি। ওই বৈঠকে কিয়েভের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং আলোচনা বৃদ্ধিতে সম্মত হয়েছিল মস্কো।

ইউরোপীয় নেতাদের সম্মেলন : রাশিয়ার সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধের তৃতীয় বছর শেষ করে চতুর্থ বছরে পদার্পণ করেছে ইউক্রেন। সোমবার দেশটিতে এক সম্মেলনে ইউরোপ ও বিশ্বের নেতারা অংশ নিচ্ছেন। তবে তাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আর নির্ভর করা যায় কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা এ খবর জানিয়েছে।

গত সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভলোদিমির জেলেনস্কিকে জনপ্রিয়তাহীন ‘একনায়ক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন, যিনি দ্রুত শান্তি চুক্তি করতে ব্যর্থ হলে তার দেশ হারাবেন। অন্যদিকে, ইউক্রেনের এই নেতা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ‘ভুল তথ্যের বৃত্তে’ বসবাস করছেন।

কথার যুদ্ধের বাইরে গত সপ্তাহে সৌদি আরবে রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসেছে মার্কিন কর্মকর্তারা। এই যুদ্ধে নীতি পরিবর্তনের অংশ হিসেবে কিয়েভ ও ইউরোপকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

ওয়াশিংটন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, শান্তি চুক্তি হলে কিয়েভের কাঙ্ক্ষিত নিরাপত্তা নিশ্চয়তা হিসেবে তারা সেনা পাঠাবে না। এর বোঝা এখন ইউরোপীয় শক্তিগুলোর ওপর, যারা মার্কিন সমর্থন ছাড়াই লড়াই করতে বাধ্য হবে।

জেলেনস্কি ইউরোপকে নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন এবং ওয়াশিংটনকে বাস্তববাদী হতে বলেছেন। তিনি শুক্রবার থেকে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে এক ডজনেরও বেশি ফোনালাপ করেছেন, যাতে সামনের পথ খুঁজে বের করা যায়।

জেলেনস্কি কিয়েভে সম্মেলনে অংশ নেওয়া নেতাদের বলেন, “পুতিনের ‘তিন দিনের’ বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর তিন বছর পর ইউক্রেন বেঁচে আছে, লড়াই করছে এবং আমাদের দেশের বিশ্বে এখন আগের চেয়ে বেশি বন্ধু রয়েছে।”

সম্মেলনে অংশ নেওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন, ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কোস্টা এবং কানাডা, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, স্পেন ও সুইডেনের নেতারা।

আলবেনিয়া, ব্রিটেন, ক্রোয়েশিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, জার্মানি, জাপান, মলদোভা, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও তুরস্কের নেতারা ভিডিও লিংকের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন। তবে মার্কিন প্রতিনিধিত্বের কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

নেতারা যুদ্ধে নিহত ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং কিয়েভের সেন্ট্রাল স্কয়ারে পতাকা দিয়ে তৈরি একটি স্মৃতিসৌধের সামনে নীরবে দাঁড়ান। পরে আলোচনায় বসার সময় বিমান হামলা সাইরেন বাজলেও কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি।

ফন ডার লিয়েন এক্সে লিখেছেন, ‘এই বেঁচে থাকার লড়াইয়ে শুধু ইউক্রেনের ভাগ্যই নির্ধারিত হচ্ছে না, ইউরোপের ভাগ্যও নির্ধারিত হচ্ছে।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভূমি, সমুদ্র ও আকাশপথে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে হাজার হাজার ইউক্রেনীয় নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ বিদেশে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছেন। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাত।

সামরিক ক্ষয়ক্ষতি ভয়াবহ, যদিও তা গোপন রাখা হয়েছে। পশ্চিমা গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও জনসাধারণের অনুমান ভিন্ন, তবে অধিকাংশই বলছেন যে, উভয় পক্ষে হাজার হাজার মানুষ নিহত বা আহত হয়েছে।

ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, রাতে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ১৮৫টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে, তবে তা উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করতে পারেনি। কিয়েভ জানিয়েছে যে, তারা রাশিয়ার রিয়াজান তেল শোধনাগারে হামলা চালিয়েছে, যা শত্রুর শক্তি অবকাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযানের অংশ।

ইউক্রেনীয় সেনারা সংখ্যাগতভাবে শক্তিশালী শত্রুর মুখোমুখি হচ্ছে, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন সামরিক সহায়তার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মার্কিন সমর্থন কমে গেলে বা বন্ধ হয়ে গেলে ইউরোপীয় মিত্ররা কতটা শূন্যতা পূরণ করতে পারবে, তা স্পষ্ট নয়।

ইউক্রেনের স্পার্টান ব্রিগেডের প্রধান চিকিৎসক এভহেন কোলোসভ বলেন,সেনারা মানসিকভাবে ক্লান্ত। তিনি বলেন, ‘তারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু যারা প্রথম দিন থেকে এখানে আছে তারা সত্যিই ক্লান্ত, শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবে, ঠিক যেমন মেডিকেল কর্মীরা। এটা কঠিন, কিন্তু এটাই যুদ্ধ, কে বলেছে এটা সহজ হবে?’