DailySangram-Logo

আমেরিকা

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনাকে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ বলে প্রত্যাখ্যান ফিলিস্তিনীদের

ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্য ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে আমেরিকা-ইহুদিবাদী অংশীদারত্বের আসল চেহারা তুলে ধরে। কমিটি বলেছে, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি জনগণকে গাজা থেকে উৎখাত করার একটি নতুন যুদ্ধ ঘোষণা।

Printed Edition

১২ ফেব্রুয়ারি, আনাদোলু, টিআরটি ওয়ার্ল্ড, রয়র্টার্স : ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা দখল ও সেখানকার বাসিন্দাদের অন্যত্র স্থানান্তরের পরিকল্পনাকে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ বলে অভিহিত করেছে। তারা বলেছে, এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে উৎখাত করার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের বেশিরভাগ গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস-এর ফলো-আপ কমিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্য ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে আমেরিকা-ইহুদিবাদী অংশীদারত্বের আসল চেহারা তুলে ধরে। কমিটি বলেছে, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি জনগণকে গাজা থেকে উৎখাত করার একটি নতুন যুদ্ধ ঘোষণা।

ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আরব শীর্ষ সম্মেলনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন ট্রাম্পের এই অপরাধমূলক পরিকল্পনা বন্ধে কার্যকর ও প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। তারা বলেছে, গাজা, পশ্চিম তীর এবং ইসরায়েলের ভেতরে ফিলিস্তিনি জনগণের দৃঢ়তা ও প্রতিরোধ শক্তিশালী করতে রাজনৈতিক ও বস্তুগত সমর্থন প্রয়োজন। রবিবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি গাজা কিনে সেটির মালিকানা নেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, গাজার কিছু অংশ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলিকে পুনর্গঠনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হোক।

ট্রাম্পের হুমকি ‘মূল্যহীন’ : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, সব আরব দেশ এবং অনেক ইউরোপীয় দেশ দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রত্যাখ্যান হয়েছে। হামাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ট্রাম্পকে মনে রাখতে হবে যে ইসরায়েলি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায় হলো ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতিকে সম্মান করা।

হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি রয়টার্সকে বলেন, ট্রাম্পকে মনে রাখতে হবে যে একটি চুক্তি রয়েছে, যা উভয় পক্ষকে মেনে চলতে হবে এবং এটি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায়। হুমকির ভাষার কোনও মূল্য নেই এবং এটি শুধু বিষয়গুলোকে জটিল করে তোলে। গাজায় ১৯ জানুয়ারি থেকে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর রয়েছে। যা ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধকে থামিয়েছে। এই যুদ্ধে ৪৮ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়েছে এবং গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। গত নবেম্বরে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এ ছাড়া গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের জন্য আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামলা চলছে। ফিলিস্তিনি নেতারা আশা করছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বন্ধ হবে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

পুনর্গঠনে ৫৩০০ কোটি ডলার : টানা ১৫ মাস ধরে ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসন ও হামলায় ফিলিস্তিনের গাজা ভূখ- ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অবরুদ্ধ এই উপত্যকার পুনর্গঠন ও যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলজুড়ে চলমান মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রয়োজন ৫ হাজার ৩০০ কোটিরও বেশি মার্কিন ডলার। জাতিসংঘের একটি রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে। বার্তাসংস্থাটি বলছে, গাজা উপত্যকার পুনর্গঠনের জন্য ৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলারেরও বেশি প্রয়োজন হবে বলে মঙ্গলবার জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আর এই অঞ্চলটি পুনর্গঠনের জন্য প্রথম তিন বছরে স্বল্পমেয়াদে প্রয়োজন ২০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “গাজা উপত্যকাজুড়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে পুনরুদ্ধার এবং পুনর্গঠনের জন্য ৫৩.১৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম তিন বছরে স্বল্পমেয়াদে প্রয়োজন প্রায় ২০.৫৬৮ বিলিয়ন ডলার।” সংঘাতের ভয়াবহ অর্থনৈতিক ও মানবিক ক্ষতির কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গাজার অর্থনীতি ২০২৪ সালে ৮৩ শতাংশ সঙ্কুচিত হবে, বেকারত্ব ৮০ শতাংশে পৌঁছে যাবে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, “অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখ-ে দারিদ্র্য ২০২৪ সালে ৭৪.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হয়েছে, যা ২০২৩ সালের শেষে ছিল ৩৮.৮ শতাংশ।” গুতেরেস জোর দিয়ে বলেছেন, অবিলম্বে মানবিক প্রয়োজনগুলো পূরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার ভাষায়, “তাৎক্ষণিকভাবে এবং স্বল্পমেয়াদে মানবিক সংকট মোকাবিলায় জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা প্রদানের ওপর অবিরত মনোযোগের প্রয়োজন হবে।” ২০২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ৬.৬ বিলিয়ন ডলারের মানবিক সহায়তার আবেদনের কথা স্মরণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই আবেদন থেকে ৩.৬ বিলিয়ন ডলার গাজার ২১ লাখ ফিলিস্তিনির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা মেটাতে বরাদ্দ করা হয়েছে। গাজায় ছয়-সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায় গত ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হয়েছে। সেদিন থেকেই গাজায় বন্ধ হয়েছে ইসরায়েলি আগ্রাসন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলা এই আগ্রাসনে গাজায় ৪৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী এবং শিশু।