কৃষি
চকরিয়ার বরইতলী গ্রামে গোলাপের হাসি
ফুল ভেদে প্রতিটি গোলাপের দাম হয় তিন টাকা থেকে শুরু করে ৫০ টাকা পর্যন্ত। গোলপের মধ্যে জাত ভেদ আছে। সাদা রঙের একটি গোলাপ ফুলের কাছে নিেেয় গিয়ে দেখালেন আর বললেন, এই গোলাপ সচরাচর পাওয়া যায় না। ফুটলেই দাম হয়ে যায় ৫০ টাকা।
Printed Edition
ইবরাহীম খলিল, চকরিয়া কক্সবাজার থেকে : আমাদের দেখে মুখে চওড়া হাসি দিয়ে এািগয়ে এলেন ফুলচাষি আনোয়ারুল ইসলাম। দুষ্টুমি করেই জানতে চাই, গম আছেননি বদ্দা? তিনি জবাব দিলেন, ‘বালা আছি’। আমাদের কথোপকথন শুনে পাশে দাঁড়িয়ে আনসার অফিসার মোসলেহ উদ্দিন ফারুক হাসছে। কৃষক আনোয়ারুল ইসলামের এই জবাবের একটা মানে আছে। তিনি আমার মুখের কথা শুনেই বুঝে গেছেন আমি তাদের এই চকরিয়ার মানুষ না। কাছে এলে জানতে চাই গোলাপ চাষে লাভ কেমন? তিনি উদাহরণ দিয়ে জানান, গাভী আছে না, গাভী। গাভী যেমন প্রতিদিন দুধ দেয়। তেমনি গোলাপ ক্ষেতও প্রায় প্রতিদিন অর্থাৎ একদিন পর পর দুধ দেয়, মানে লাভ দেয় (টাকা দেয়)। টানা তিন বছর একটি গোলাপ গাছ ফুল দেয়। ফুল ভেদে প্রতিটি গোলাপের দাম হয় তিন টাকা থেকে শুরু করে ৫০ টাকা পর্যন্ত। গোলপের মধ্যে জাত ভেদ আছে। সাদা রঙের একটি গোলাপ ফুলের কাছে নিেেয় গিয়ে দেখালেন আর বললেন, এই গোলাপ সচরাচর পাওয়া যায় না। ফুটলেই দাম হয়ে যায় ৫০ টাকা।
অবশ্য গোলাপের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির গ্ল্যাডিওলাস ফুলের বাগান বেড়ে গেছে বরইতলী গ্রামে। তাতেও বেশ লাভবান হচ্ছে কৃষক। তবে গোলাপের প্রতি চাষিদের আগ্রহ বেশি। গোলাপ চাষে কর্মসংস্থান বেড়েছে একশ্রেণির শ্রমিকদের। তারা সকাল বিকাল ফুল কেটে দেয়। এতে এক বেলাতেই হাজার টাকা উপার্জন হয়ে যায়। চকরিয়া উপজেলা থেকে বরইতলী গ্রামে এসেছিলেন দুই বান্ধবি রেফা আর সালিহা, গোলাপ বাগান দেখার জন্য। কথা প্রসঙ্গে জানালেন, তারা প্রায় আসেন বরইতলী গ্রামে। ঘুরতে এসে মাঝে মাঝে নিজেরাই ফুল কাটেন গোলাপ ক্ষেতে। এগুলো কিনেও নিয়ে যান তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে। অবশ্য ফুল হাতেই তারা ধরা পড়লেন এই প্রতিবেদকের ক্যামেরায়।
চাষিদের সাথে আলাপ করে জানা গেলো চকরিয়ার বরইতলী গ্রামে প্রায় একশোটির মতো গোলাপের বাগান হয়ে গেছে। যারাই গোলাপের চাষ করছে তারা মোটামুটি সবাই লাভবান। তারা প্রতিবছরই ফুলচাষ বৃদ্ধি করছেন।
বিভিন্ন জনের সাথে আলাপে জানা যায়. ২০ বছর আগে চকরিয়ার এই গ্রামে
প্রথম গোলাপের চাষ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে অন্য ফসল বাদ দিয়ে গোলাপের চাষ বাড়ছে। চাষী আজিজুল ইসলাম জানালেন, এ জায়গাতে পানি আসে না। তাই ফুল চাষের উপযোগী এই এলাকা। গোলাপক্ষেত ঘুরে দেখা গেল, ফুলগুলো বেশ তরতাজা এবং সতেজ। জমিতে নষ্ট ফুল নাই বললেই চলে। এখানকার ফুলগুলো সাইজে বেশ বড় আর পাপড়িগুলো বেশ পুরো। সকাল-বিকালে জমি থেকে ফুল উত্তোলন করা হয়। শ্রমিকরা জানালেন, একটি ফুল চার-পাঁচ দিন পর্যন্ত সতেজ থাকে। বিক্রিরও উপযোগী থাকে। ফুল চাষের পাশাপাশি কেউ কেউ গড়ে তুলেছেন গোলাপফুলের চারা বা নার্সারি। ফুলের ডাল থেকে কলম দেয়া হয়। এসব কারিগর অবশ্য বাইরে থেকে ভাড়া করে আনা হয়। এমন একজনের সঙ্গে দেখা হলো এই প্রতিবেদকের। তার নাম শফিকুল ইসলাম। যশোর থেকে এসেছেন চকরিয়াতে। তিনি গোলাপের কলম বানাচ্ছিলেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি দৈনিক সংগ্রামকে জানালেন, তিনি ফুলের জন্য বিখ্যাত যশোরের গদখালীর মানুষ। তিনি গত কয়েকদিনে ২০ হাজার কলম বানিয়েছেন। এসব চারা বা কলম ২০ টাকা করে বিক্রি হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে গোলাপের চারা নিয়ে যায়। গোলাপের পাশাপাশি গোলাপের নার্সারি ব্যবসা বেশ লাভজনক।
বরইতলীর গোলাপক্ষেতের ওপর ভিত্তি করে এখানে গড়ে উঠেছে ফুলের আড়ত। আড়তদার জানালেন, প্রতিদিন রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যায় এখানকার ফুল। সকালে যায় নিজ জেলাশহর সহ আশপাশের এলাকাতে। ফুলের দামের ব্যাপারে জানতে চাইলে একজন আড়তদার মোজাম্মেল জানালেন, ফুলের দাম প্রতিদিন এক রকম থাকে না। সোমবার সকালে এই প্রতিবেদকের সামনে নিখুঁত ও বড় আকৃতির এক শত গোলাপ বিক্রি হয় তিন শত টাকা দরে। আমার ধারণা ঢাকাতে এসব গোলাপ প্রতি পিছ কম করে হলেও ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে বিক্রি হয়। দামের এই আকাশ পাতাল পার্থক্য কেন? এই প্রশ্নের উত্তর আড়তদার দেওয়ার সময় পেলেন না। ফুল ব্যবসাতেও সিন্ডিকেট হয় না-কি? একথা শুনে কেবল মুচকি হাসলেন।