রাজনীতি
আমার অপরাধ ছিলো আমি দিল্লির আধিপত্যবাদকে ‘না’ বলেছিলাম: লুৎফুজ্জামান বাবর
বিএনপির সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বলেছেন, আমার ওপর শত অত্যাচার হলেও আমি মাথা নত করিনি, আমি আপোস করিনি। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও আমি সত্য কথা বলবো। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমি আমার জীবন বাজি রাখতে রাজি। এদেশ আমাদের, এদেশের মালিক জনগণ।

বিএনপির সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বলেছেন, আমার ওপর শত অত্যাচার হলেও আমি মাথা নত করিনি, আমি আপোস করিনি। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও আমি সত্য কথা বলবো। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমি আমার জীবন বাজি রাখতে রাজি। এদেশ আমাদের, এদেশের মালিক জনগণ। তাই জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নেত্রকোণার ঐতিহাসিক মোক্তারপাড়া মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, আমার সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিলো আমি দিল্লির আধিপত্যবাদকে ‘না’ বলেছিলাম। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমার অবস্থান ছিল সর্বদা বাংলাদেশের পক্ষে। দিল্লির আধিপত্যবাদের বিপক্ষে। ভারতীয় আশীর্বাদপুষ্ট আওয়ামী সরকার চেয়েছিল আমাকে মিথ্যা মামলায় দুনিয়া থেকে বিদায় করতে। কিন্তু ২৪ এর ছাত্র-জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানের পর আমি মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছি। যদি প্রয়োজন হয়, আমি আবারও যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করবো, কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবো না ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, আজ আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আবেগাপ্লুত। দীর্ঘ ১৭ বছর কারাগারে কাটিয়ে আমি আবার আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছি। আপনাদের ভালোবাসা, দোয়া এবং সমর্থন আমাকে এই দীর্ঘ পথ চলতে শক্তি যুগিয়েছে। আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আওয়ামী লীগ সরকার আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে, ফাঁসির দণ্ড দিয়ে, অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে আমাকে দমিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি আপস করিনি, মাথানত করিনি। আমি সত্যের পথে ছিলাম, আছি এবং থাকবো ইনশাআল্লাহ। তারা চেয়েছিল আমাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে, কিন্তু আল্লাহর রহমত ও আপনাদের ভালোবাসা আজ আবার আমাকে আপনাদের সামনে নিয়ে এসেছে।
লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে। বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে আমাকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে। আমার পরিবারকে নিপীড়ন করা হয়েছে। আমার স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে, নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। শুধু আমি নয়, আমার দলের নেতাকর্মীরাও স্বৈরাচারী সরকারের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী গুম হয়েছেন, খুন হয়েছেন, কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। কিন্তু এই নির্যাতন আমাদের আদর্শ থেকে সরাতে পারেনি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী চরিত্র আজ কারও অজানা নয়। তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে। বিরোধী দলকে দমন করতে বিচার বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করেছে। জনগণের কণ্ঠ রোধ করেছে। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে দেশকে স্বৈরতন্ত্রের কারাগারে পরিণত করেছে।
লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ হয়েছে। ছাত্ররা তাদের রক্ত দিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। ছাত্র, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, শ্রমিক, রিকশাচালক তথা দেশের সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ফ্যাসিজমের প্রতীক হাসিনার পতন হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ছাত্র-জনতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। যাদের নেতৃত্বে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি।
সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপসহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজও গণতন্ত্রের প্রতীক হয়ে আছেন। তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, শত নির্যাতন সয়ে, আপসহীনভাবে গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি কখনো আপস করেননি। তার নেতৃত্বেই আমরা নতুন বাংলাদেশ দেখবো ইনশাআল্লাহ। দেশনায়ক তারেক রহমান আজ প্রবাসে থেকেও দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দেশের মানুষের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তার দূরদর্শী নেতৃত্বে আমরা বাংলাদেশকে পুনরুদ্ধার করবো। আজকের তরুণদের সামনে তারেক রহমানই একমাত্র আশার আলো। উনার নেতৃত্ব, আমাদের দল, আমাদের সংগ্রাম সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশ এক গভীর সংকটের মুখ থেকে ফিরে এসেছে। দিল্লির দাসত্ব আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের সার্বভৌমত্বকে পদদলিত করা হয়েছে। কিন্তু বাংলার জনগণ আধিপত্যবাদ মেনে নেয়নি। আমরা কোনো পরাশক্তির গোলাম নই। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে চাই। যেখানে জনগণ হবে সর্বক্ষমতার উৎস, যেখানে জাতীয় স্বার্থই হবে সবার আগে।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক আনোয়ারুল হক এবং সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য রফিকুল ইসলাম হিলালী। এছাড়াও বিএনপির জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।