রাজনীতি
তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ২৮ ফেব্রুয়ারি
আপাতত একটি উত্তেজনাকর অপেক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটলো। অন্তত জানা গেল আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে।
Printed Edition
আপাতত একটি উত্তেজনাকর অপেক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটলো। অন্তত জানা গেল আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। এর আগে ২২ ফেব্রুয়ারি না ২৩ ফেব্রুয়ারি নাকি ২৪ ফেব্রুয়ারি এভাবে তারিখ পেছানো হচ্ছিল। আর উত্তেজনার পারদ বৃদ্ধি পাচ্ছিল এই আলোচনায় যে কবে আত্মপ্রকাশ করছে তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল। সবশেষ ২৬ তারিখ আত্মপ্রকাশের কথা জানাচ্ছিল দেশের প্রথম শ্রেণির মিডিয়াগুলো। অবশেষে জুলাই বিপ্লবের শীর্ষ নায়কেরা নিজেরাই ঘোষণা দিল যে তারা রাজনৈতিক দলের ব্যানারে মাঠে নামছে ২৮ ফেব্রুয়ারি। এঘোষণা দিতে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে বলা হয়, আসছে শুক্রবার দুপুর ৩টায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে তরুণদের এই নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হবে। অবশ্য দৈনিক সংগ্রাম রমযানের আগেই নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের কথা জানান দিয়েছিল।
সাংবাদিক সম্মেলনের পরও অবশ্য উত্তেজনার জায়গাটা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। রাজনৈতিক দলের যিনি মূল সিপাহশালার হওয়ার কথা তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে আসেননি। তিনি অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তার পদত্যাগের কথা থাকলেও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন পক্ষ থেকেই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গতকাল সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করেননি। তিনি ঠিক কবে পদত্যাগ করবেন তাও জানাননি। পদত্যাগের বিষয় এবং রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি নাহিদ ইসলামের ব্যক্তিগত বলে জানান প্রেস সচিব।
দল গঠনের বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে আসা জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, হাজারো শহীদের জীবনের ওপরে লাখ লাখ ভাই-বোনের রক্তের ওপর দাঁড়িয়েছে যে নতুন বাংলাদেশ, এই বাংলাদেশে দীর্ঘ লড়াই করে আগামী প্রজন্মকে কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ উপহার দেওয়া আমাদের কাছে একটি আমানত। আমরা আমাদের এই লড়াইটি করে যেতে চাই। তিনি বলেন, ‘সেই লড়াইকে সামনে রেখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি ঐক্যবদ্ধভাবে একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে।
সারজিস বলেন, অভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশে সময়ের দাবি হচ্ছে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল গঠন। অভ্যুত্থান পরবর্তী এই সাত মাসে আমাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে সেই ৫ আগস্ট নতুন বাংলাদেশকে যে জায়গায় কল্পনা করেছি সেই জায়গায় নিয়ে যাওয়া একটা দীর্ঘ লড়াই। আমাদের জায়গা থেকে বিশ্বাস করি হাজারো শহীদের জীবনের ওপর, ভাইবোনের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে নতুন বাংলাদেশে দীর্ঘ লড়াইটি করে সেই কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ আগামীর প্রজন্মকে উপহার দেওয়া আমাদের কাছে একটি আমানত। আমরা এই লড়াইটি করে যেতে চাই। তিনি বলেন, সেই লড়াই সামনে রেখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি ঐক্যবদ্ধভাবে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল তিনটায় জাতীয় সংসদ ভবন সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে। সারজিস আলম বলেন, আমরা আমাদের নতুন রাজনৈতিক দলের শপথটি এই বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের আকাক্সক্ষার যে প্রতীক সেই জাতীয় সংসদকে সামনে রেখে এই শপথটি করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, যুগের পর যুগ ধরে এই সংসদ ভবনকে মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক না বানিয়ে ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত, দলীয় স্বার্থ উদ্ধারে পলিসি মেকিংয়ের জায়গা বানিয়ে রাখা হয়েছিল। জায়গাটিকে স্বৈরাচারের উৎপাদন ক্ষেত্র বানিয়ে রাখা হয়েছিল। তাই আমরা বাংলাদেশের ছাত্র-জনতাকে সামনে রেখে, জাতীয় সংসদকে সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের নতুন রাজনৈতিক দলে ব্যক্তিস্বার্থ, গোষ্ঠীর স্বার্থ, দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ প্রাধান্য পাবে। সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদসহ জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীর কমিটির অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, নতুন দলের বিষয়ে জনমত জরিপ করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। এ লক্ষ্যে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি কর্মসূচি চলছে। এ কর্মসূচির আওতায় জনমত জরিপ করা হচ্ছে। অনলাইনের পাশাপাশি জেলায় জেলায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত (প্রশ্নোত্তর) সংগ্রহ করা হচ্ছে। জরিপে রোববার বিকেল পর্যন্ত তিন লাখের বেশি মানুষ মতামত দিয়েছেন বলে জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা।
নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন নাহিদ ইসলাম। আর দলের সদস্যসচিবের পদে আখতার হোসেনের নাম-ই চূড়ান্ত। তিনি এখন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব। তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ গতকাল পর্যন্ত পদত্যাগ করেননি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।