রাজনীতি
খুলনা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন
সংস্কার নিয়ে তর্কবিতর্কে মূল কাজ নষ্ট হচ্ছে ----তারেক রহমান
সংস্কার নিয়ে অবান্তর আলোচনা করে মূল কাজকে নষ্ট করা হচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, নিজেদের মধ্যে অযাচিত তর্কবিতর্কের মাধ্যমে এমন কোন পরিস্থিতি উদ্ভব না হয়, যাতে বাংলাদেশের ভালো চায় না এমন শক্তি আবারও সুযোগ পায়।
Printed Edition

সংস্কার নিয়ে অবান্তর আলোচনা করে মূল কাজকে নষ্ট করা হচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, নিজেদের মধ্যে অযাচিত তর্কবিতর্কের মাধ্যমে এমন কোন পরিস্থিতি উদ্ভব না হয়, যাতে বাংলাদেশের ভালো চায় না এমন শক্তি আবারও সুযোগ পায়। সোমবার খুলনা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। খুলনার সার্কিট হাউজ ময়দানে দীর্ঘ ১৬ বছর পর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলকে ঘিরে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। সকাল থেকেই নানা আনুষ্ঠানিকতায় কর্মসূচি শুরু হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তারেক রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাবে। তবে এজন্য বসে থাকলে চলবে না। নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে। ব্যক্তিস্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখে অনুপ্রাণিত হওয়ার জন্য দলের নেতাকর্মীদের আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণ আমাদেরকে আবারও সুযোগ দিলে অতীতের অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করবে বিএনপি।
রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির রূপরেখা ৩১ দফাতে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, শিল্প সহ সব সেক্টরে বিএনপি কাজ করবে। যুক্তরাজ্যে মানুষের স্বাস্থ্য সেবার সব দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তবে সেই জায়গায় পৌছাতে তাদের ৭৭ বছর লেগেছে। আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য সেই ব্যবস্থা গড়ে তুলবো।
তারেক রহমান অভিযোগ করেন, স্বৈরাচার আমাদেরকে খাদের কিনারে পৌঁছে দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তাদের শাসনামলে দেশের মানুষ প্রায় সবাই নির্যাতিত ছিল। মিথ্যা মামলা, গুম, খুন দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। চৌদ্দশ’ মানুষ শহীদ হয়েছেন মুক্ত বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার জন্য। তাদের প্রত্যাশিত দেশ গড়তে দরকার স্থিতিশীলতা।
নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দলে যতো বেশি গণতন্ত্রের চর্চ্চা করা হবে ততো ভালো মানুষ পর্যায়ক্রমে নেতৃত্বে আসতে পারবে। একই ভাবে দেশে গণতন্ত্র চর্চ্চা হলে দেশ ভালো নেতৃত্ব পাবে। গণতন্ত্রের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে বিএনপির প্রতিটি কর্মীকে অব্যাহতভাবে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর প্রথম কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছিল খুলনাতে। অনেক বছর পরে আবারও খুলনায় কাউন্সিলে থাকতে পেরে উচ্ছাস প্রকাশ করেন তারেক রহমান।
তিনি আরও বলেন, একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে, বিশেষ করে গণতন্ত্রের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সকলকে অব্যাহতভাবে চেষ্টা করতে হবে যাতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে আসে। যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার যাতে প্রতিষ্ঠিত হয়। আমরা যদি বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ যে খাদের কিনারে চলে গেছে সেখান থেকে উঠিয়ে আনতে সক্ষম হব।
দেশের মধ্যে স্থিতিশীলতা আনতে হবে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের এই শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, কৃষি ব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বাজার সিন্ডিকেটের দিকে নজর দিতে হবে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই কাজগুলো যদি না করি তাহলে এই দেশকে রক্ষা করা যাবে না।
দেশের সবকিছু ধ্বংস করে স্বৈরাচার পালিয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া একটা কথা বলেছিলেন যে এই স্বৈরাচার সবকিছু ধ্বংস করে দেশ থেকে পালিয়ে যাবে। তার বহু বছর আগের বলা সেই কথা আজ পরতে পরতে সত্য হয়েছে। স্বৈরাচার লুটপাট করে পালিয়ে গেছে, দেশকে ধ্বংস করে দিয়ে পালিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সংস্কারের কথা বলছি কিন্তু সংস্কার নিয়ে যদি প্রতিনিয়ত অবান্তর আলোচনা করতে থাকি তাহলে আমাদের যে মূল কাজগুলো অর্থাৎ দেশের মানুষের সমস্যার সমাধান করা সেটা হবে না।
বিএনপি ক্ষমতায় গেল নারী উন্নয়ন, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য খাতে কী কী করবেন তা উল্লেখ করেন তারেক রহমান। অন্তবর্তী সরকারকে এসব বিষয়ে নজর দেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। গণতন্ত্র যত প্রাক্টিস হবে তত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, এ কারণেই বিএনপি দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক উপায়ে নেতা নির্বাচিত করছে।
এর আগে সকাল থেকে খন্ড খন্ড মিছিল সহকারে রঙ বেরঙয়ের ক্যাপ-টি শার্ট পরে ও প্লাকার্ড হাতে আসেন নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ ১৬ বছর পর এ সম্মেলনে উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা।
এরআগে সকাল সোয়া ১০ টার দিকে জাতীয় সঙ্গীত ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ফেস্টুন ও কবুতর উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরী।
খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য কন্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, খুলনা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, গবেষণা সম্পাদক কৃষিবীদ শামীমুর রহমান শামীম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সাবেক এমপি সৈয়দা নার্গিস আলী, খুলনা জেলা বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, খুলনা সদর থানা সভাপতি কে এম হুমায়ুন কবির, সোনাডাঙ্গা থানা সভাপতি হাফিজুর রহমান মনি, খালিশপুর থানা সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ আলী বাবু, দৌলতপুর থানা সভাপতি মুর্শিদ কামাল, খানজাহান আলী থানা সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান বক্তব্য রাখেন। সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন সৈয়দা রেহানা ঈসা। শুরুতে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন খুলনা জেলা ওলামা দলের সভাপতি মাওলানা ফারুক হোসাইন। গীতা পাঠ করেন মহানগরীর হিন্দু বৈধ্য খ্রিস্টান ঐক্যফ্রন্টের সভাপতি সত্যানন্দ দত্ত।
দ্বিতীয় অধিবেশনে খুলনা জেলা স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়ামে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের ৬টি পদে ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ৫টি থানা কমিটির ৫০৫ জন ভোটার নির্বাচনের মাধ্যমে মহানগর বিএনপির আগামী নেতৃত্ব নির্বাচন করছেন।