রাজনীতি
প্রেসক্লাবে জামায়াতের আলোচনা সভা
ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতেই পিলখানা হত্যাকান্ড সংঘটিত করা হয়েছে : ডা. তাহের
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, এই হত্যাকান্ড সংঘটিত করা হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে। ভারত আওয়ামী লীগ কে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা রাখার স্বপ্ন দেখিয়ে আওয়ামী সরকারের মদদে পিলখানা হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। ঐ হত্যাকান্ড পরিচালিত করেছে

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, এই হত্যাকান্ড সংঘটিত করা হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে। ভারত আওয়ামী লীগ কে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা রাখার স্বপ্ন দেখিয়ে আওয়ামী সরকারের মদদে পিলখানা হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। ঐ হত্যাকান্ড পরিচালিত করেছে ভারতীয় আজ্ঞাবহ বিডিআর জোয়ানেরা। কিন্তু তাদের কোন বিচার না করে নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের আটক করে বিচারের নামে অবিচার করে দন্ড দিয়েছে, চাকুরীচ্যুত করেছে।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ২০০৯ সালে পিলখানায় দেশপ্রেমিক সেনাকর্মকর্তাদের নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি, অন্তবর্র্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত পিলখানা হত্যাকান্ডের তদন্ত কমিশনের সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপি সহ সকল দলকে পাঁচ বিষয়ে ঐক্যমত হয়ে জাতির সামনে শপথ করার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্ল্যাহ্ মোহাম্মদ তাহের বলেন, স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নো কম্প্রোমাইজ (কোন আপষ নয়), দুর্নীতি-চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, জাতীয় স্বার্থে এক ও অভিন্ন, দেশের উন্নয়নে জন্য দলের চেয়ে দেশ বড় নীতি অবলম্বন এই পাঁচ বিষয়ে ঐক্যমত হয়ে জাতির সামনে শপথ গ্রহন করতে না পারলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ারও আহ্বান জানান। এসময় তিনি বলেন, ভিন্ন মত ও দল থাকবে, থাকতে পারে। কিন্তু দেশ ও জাতির স্বার্থে এই পাঁচ বিষয়ে ঐক্যমত হতে পারলে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ হবে একটি শক্তিশালী জাতি ও রাষ্ট্র। প্রসঙ্গে ক্রমে ডা. তাহের বলেন সিঙ্গাপুরের একটি প্রতিনিধি দল জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় অফিসে নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করতে আসেন। সেসময় তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, ১৯৬৭ সালে স্বাধীন হয়ে এতো অল্প সময়ে কিভাবে সিঙ্গাপুর এতো সমৃদ্ধ হলো?- প্রতিনিধি দলের একজন মুহূর্তে জবাব দিলেন, আমরা একজন সৎ যোগ্য ও দেশপ্রেমিক আদর্শিক নেতা পেয়েছি। যিনি আমাদের দেশকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছেন। ডা. তাহের বলেন, পক্ষান্তরে বাংলাদেশের জনগণ দেশ স্বাধীনের পর একজন দুর্নীতিবাজ নেতা পেয়েছে। সেজন্যই আমাদেরকে আজও সংগ্রাম করতে হয়। ১৯৪৭ সালে আমরা প্রথম স্বাধীন হয়েছি তারপর ১৯৭১ সালে। কিন্তু জনগণ পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা পায়নি বলেই ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাই তথা ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদের হাত থেকে জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আর কোন সংগ্রাম, সংঘাত নয় উল্লেখ করে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, পিলখানা হত্যাকান্ডের দিনটিকে আড়াল করতে নানা রকম ষড়যন্ত্রের আয়োজন করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে পিলখানা হত্যাকান্ড ছিল একটি কালো অধ্যায়। স্বাধীনতা সংগ্রামের চেয়েও অধিক সেনাকর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে পিলখানা হত্যাকান্ডের মাধ্যমে। এমনকি বাঁছাই করে করে উচ্চপদস্থ সেনাকর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়েছে। সেনাকর্মকর্তাদের হত্যা করা হচ্ছে অথচ সেনানিবাসে সংবাদ দিলেও সেনাপ্রধান কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বরং তারা তখন পিকনিক করে বিরিয়ানি খাচ্ছে। বিরিয়ানি খেয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক আর মির্জা আজমকে পাঠানো হয়েছে পিলখানায় সেনাকর্মকর্তাদের উদ্ধার করতে! এর দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় সরকারের সরাসরি মদদে পিলখানা হত্যাকান্ড চালানো হয়েছে। তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনায় গঠিত কমিশন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ভাবে তদন্ত করতে হবে এবং সঠিক বিচারের মাধ্যমে জড়িতদের ফাঁসি দিতে হবে। এসময় তিনি পিলখানা হত্যাকান্ড সহ প্রতিটি হত্যার বিচারের দাবি জানান।
সভায় কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির বলেন, সেদিন পিলখানার দরবার হলে শেখ হাসিনার উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সেদিন সেখানে কেন যাননি?- কারণ পিলখানা হত্যাকান্ড পরিকল্পিত, তাই তিনি সেখানে যাননি। হত্যাকান্ডের পর শেখ হাসিনা বিডিআর সদস্যদের চায়ের দাওয়াত দিয়ে সেনাসদস্যদের রক্তের সাথে শুধু বেঈমানী নয়, ঠাট্টা করা হয়েছে। পিলখানা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের আটক না করে হাসিনার নিদের্শে নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের আটক করা হয়েছে, চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। তিনি চাকুরীচ্যুতদের চাকুরি ফিরিয়ে দিতে এবং ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের দাবি জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, শেখ হাসিনা অতন্ত্য পরিকল্পিত ভাবে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার কিছু দিনের মাথায় সুপরিকল্পিত ভাবে পিলখানায় দেশপ্রেমিক সেনাকর্মকর্তাদের নৃশংস হত্যা করেছে। শেখ হাসিনা এক ঢিলে পাঁচ পাখি মেরেছে। প্রথমত ৫৭জন চৌকস সেনাকর্মকর্তাদের হত্যা করেছে, দ্বিতীয়ত চৌকস দেশপ্রেমিক সেনাকর্মকর্তাদের হত্যা করার মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে দুর্বল করতে চেয়েছে, তৃতীয় শেখ হাসিনা পিতা হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে সেনাবাহিনীকে পঙ্গু করেছে, চতুর্থত বিডিআরকে নিঃস্ব করেছে, পঞ্চমত বিডিআরকে নিঃশেষ করে নতুন বাহিনী গঠন করে তাদের নতজানু বাহিনী সৃষ্টি করেছে। এতে ভারতের আধিপত্যবাদ বিস্তারের পথ সুগম করেছে। পিলখানা হত্যাকান্ডের পর ইতোপূর্বে যেই তদন্ত করা হয়েছে সেই তদন্ত একতরফা এবং নিজেদের মনগড়া তদন্ত। নতুন তদন্ত কমিশন গঠন করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনার বিচার করতে হবে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলরুমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে ড. আব্দুল মান্নান ও শামসুর রহমান, ঢাকা বারের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট এস. এম কামাল উদ্দিন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, পল্টন থানা আমীর শাহিন আহমেদ খান প্রমুখ। অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদের সদস্য বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম, কর্মপরিষদের সদস্য সৈয়দ সিরাজুল হক, শাহজাহানপুর পূর্ব থানা আমীর শরিফুল ইসলাম সহ নেতৃবৃন্দ।