জাতীয়
পুলিশের প্রশিক্ষণ পাঠ্যক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে
সরকারের প্রথম ছয় মাসের কার্যক্রমের বিষয়ে বাসস-এর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ নতুন পাঠ্যক্রমের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে জনগণের সঙ্গে যথাযথ ও প্রত্যাশিত আচরণ এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ বাহিনীকে আরও মানবিক করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিবর্তিত পাঠ্যক্রমের অধীনে পুনরায় প্রশিক্ষণের ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সরকারের প্রথম ছয় মাসের কার্যক্রমের বিষয়ে বাসস-এর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ নতুন পাঠ্যক্রমের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে জনগণের সঙ্গে যথাযথ ও প্রত্যাশিত আচরণ এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘পুলিশের প্রশিক্ষণ পাঠ্যক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে।’
উপদেষ্টা জানান, এই উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে পুলিশ বাহিনীকে একটি মানবিক, জনবান্ধব ও সেবামুখী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা। গত ১৬ বছরে দমনমূলক কার্যক্রমের কারণে পুলিশের প্রতি জনগণের মনে এক ধরনের ভীতিকর ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছিল, যা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
চৌধুরী বলেন, গত ছয় মাসে ঢাকায় সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অন্তত ১৫০টি বিক্ষোভ ও আন্দোলন হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু ‘নতুন বাংলাদেশে’ পুলিশ দমনমূলক ভূমিকা নেয়নি।’
তবে তিনি স্বীকার করেন যে, এসব বিক্ষোভ রাজধানীর নাগরিকদের চরম দুর্ভোগে ফেলেছে এবং ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি করেছে। তা সত্ত্বেও, পুলিশের সদস্যরা সরকারের নির্দেশনার আলোকে ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থেকেছেন।
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশের দাবি
সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, গত ১৬ বছরে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে পুলিশ বাহিনী বিভিন্ন অন্যায় কাজে জড়িত ছিল।
তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছরে রাজনৈতিক প্রভাব এতটাই বেশি ছিল যে, আমরা কোনো অপরাধ করতে বাদ রাখিনি। আপনি জানেন, আমরা সবাই জানি। আমরা সত্যিই দুঃখিত ও লজ্জিত।’
তিনি রাজনৈতিক প্রভাব থেকে পুলিশ বাহিনীকে মুক্ত করার আহ্বান জানান, কারণ রাজনৈতিক প্রভাবের ফলে পুলিশ জনগণের আস্থার সংকটে পড়েছে।
আইজিপি জানান, তিনি বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করছেন এবং বিভিন্ন স্তরের পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন, যাতে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় বের করা যায়।
পুলিশ জনগণের পাশে থাকতে চায়
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সম্প্রতি এক নির্দেশনায় পুলিশ কর্মকর্তাদের যে কোনো পরিস্থিতিতে জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘জনগণ আমাদের শত্রু নয় এবং আমরা জনগণের বিরুদ্ধে যেতে চাই না। আমরা জনগণের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে চাই।’
রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস-এর বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে এক সম্মেলনে ডিএমপি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও জানান, পুলিশের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা বোঝার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হচ্ছে।
অপরাধ দমনে বিশেষ অভিযান
জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী গঠনের পাশাপাশি সরকার অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও কুখ্যাত অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ এলাকা ছাড়াও সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পরিচালিত হচ্ছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশ তিন দিনের জন্য অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় কতটা সফল হয়েছে, সে বিষয়ে সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিকরাই ভালো বলতে পারবেন।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু আপনারা (সাংবাদিকরা) জানেন, কোন পরিস্থিতিতে সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। আপনারাই ভালো বলতে পারবেন যে, আমরা যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখনকার তুলনায় এখন পরিস্থিতি কতটা উন্নত হয়েছে।’
তবে উপদেষ্টা স্বীকার করেন, সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছয় মাস আগের তুলনায় ভালো হলেও এখনও আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে।
সূত্র: বাসস