জাতীয়
১৮ উন্নয়ন সহযোগী দেশের রাষ্ট্রদূতের সাথে সিইসির বৈঠক
ডিসেম্বর ধরেই জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু
চলতি বছরের ডিসেম্বরে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে- সরকারের পক্ষ থেকে এমন আভাস পাওয়ার পর সে হিসেবেই ভোটের প্রস্তুতি শুরুর কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস ধরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
Printed Edition
চলতি বছরের ডিসেম্বরে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে- সরকারের পক্ষ থেকে এমন আভাস পাওয়ার পর সে হিসেবেই ভোটের প্রস্তুতি শুরুর কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস ধরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে বেলা ১১টায় কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ইউএনডিপির প্রতিনিধিসহ ১৮টি উন্নয়ন সহযোগী দেশের রাষ্ট্রদূতরা। এ সময় অন্য নির্বাচন কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে জাপান, যুক্তরাজ্য, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, কানাডা, জার্মানি, চীন, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের প্রতিনিধি অংশ নেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কশিমশনার বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ১৬ ডিসেম্বরের বক্তব্যে বলেছিলেন, যদি অল্প পরিমাণে সংস্কারসহ নির্বাচন করতে হয় সেখানেই যদি রাজনৈতিক মতৈক্য গিয়ে দাঁড়ায় তাহলে এ বছরের শেষ নাগাদ, ডিসেম্বর ২০২৫ এ ইলেকশন; আর যদি আরেকটু সংস্কার করার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে ২০২৬ এর জুন নাগাদ ইলেকশন করা সম্ভব।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আমরা বলেছিলাম, আমাদেরকে আর্লিয়েস্ট ডেটটা ধরে নিয়ে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। আমাদের অবস্থান এখনো অপরিবর্তিত। আমরা ডিসেম্বরকে ধরে নিয়েই আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আমাদের ভিন্ন প্রস্তুতি নেই, একটি প্রস্তুতি (জাতীয় নির্বাচন)।
ইসি বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, পাঁচ স্তরের স্থানীয় নির্বাচন করতে হলে এক বছরের মতো সময় লাগে। আমাদের সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান অকার্যকর হয়নি, কিছু হয়েছে। এ কন্ডিশনাল বিষয়গুলো নিয়ে স্পেসিফিক টাইমলাইন দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা ধারণা করি, সরকার তো আমাদের হাতের টাইমগুলো বিবেচনায় নেবেন এবং তারা যদি মনে করেন জাতীয় নির্বাচনকে কোনো একটা টাইমে ফ্রেম করে তারপর কতটুকু অনুশীলন করা যায় তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। জাতীয় নির্বাচন ব্যহত হয় এমন কিছুর বিষয়ে কমিশনও সজাগ থাকবে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন কতটুকু হবে, কোন কোন ইনস্টিটিউশনে হবে সে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। তখন আমরা বলতে পারব। এটা জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে কি, করবে না। তার আগে সম্ভব না।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো নির্বাচন হবে।
স্টেফান লিলার বলেন, ‘আমরা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সমর্থন করছি। আশা করি বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা নির্বাচন হবে এবং সেটিই আমাদের আকাক্সক্ষা।’
পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন কবে হবে সেটি ‘অন্তর্বর্তী সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত’ বলেও মন্তব্য করেন স্টেফান। বলেন, ‘এর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’
এ সময় নির্বাচনের চ্যালেঞ্জের বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি স্টেফান। তিনি বলেন, গত ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়েছিল কমিশন। এর প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ কমিশনকে কী ধরনের কারিগরি সহায়তা দিতে পারে সেটা জানানোর জন্য জানুয়ারিতে একটি দল দুই সপ্তাহ ধরে নির্বাচন কমিশন পরিদর্শন করেছে।
বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে চাপ রয়েছে। এর মধ্যেই সম্প্রতি একটি বিদেশি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইঙ্গিত দেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে পারে। সেই ইঙ্গিত আরও জোরালো হয় গত সোমবার বিএনপির প্রতিনিধি দলের সাক্ষাতের পর। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা তাদের আশ্বস্ত করেছেন।
ফখরুল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সঙ্গে যারা আছেন তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, অতি দ্রুত তারা নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন। তিনিও (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা করার জন্য কাজ করছেন।
এদিকে একই দিন রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, সব রাজনৈতিক দল একমত হলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দিতে সরকারের আপত্তি নেই।
সোমবার মানিকগঞ্জে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকারও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্ততি নেওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, কমিশনের কাছে ভালো নির্বাচন না করার কোনো বিকল্প নেই। দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক নেতারাসহ বিভিন্ন মহলের সহায়তা দরকার। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যাতে জাতীয় নির্বাচন হয়, সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন।