জাতীয়
শাহবাগে সমাবেশে ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি
হাসিনার আমলে সব গুম-খুন ও নৃশংসতার বিচার করতে হবে

পিলখানায় ৫৭ জন সেনা অফিসারকে নির্মমভাবে হত্যা, পলাতক হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে দেশে যত গুম, খুনসহ নৃশংসতা হয়েছে তার বিচার করতে হবে। শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাঝে এখনো যারা ফ্যাসিবাদের দোসর রয়েছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। একই সাথে প্রতিটি সেক্টরে সংস্কার করে এরপর জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।

গণহত্যা এবং মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের দাবিতে ‘ন্যায় বিচার ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা আন্দোলন‘ শিরোনামে রাজধানীর শাহবাগে মঙ্গলবার বিকেলে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নেক্সাস ডিফেন্স এন্ড জাস্টিজ এর প্রধান নির্বাহী ব্রিঃ জেঃ মোহাম্মদ হাসান নাসির (অবঃ) এর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। এছাড়াও শেখ হাসিনার শাসনামেল গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিথ ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিয়া গোলাম পারওয়ার বলেন, আজকে বক্তব্য দিয়ে জাতিকে জানানোর প্রয়োজন নেই ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠার তান্ডব, ২০০৯ সালের পিলখানার নির্মম নিষ্ঠুর হত্যাকান্ড, ২০১০ সাল তথাকতিথত মানবাতাবিরোধী অপরাধের নামে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের নামে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ মানুষকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যা চালানো, আল্লামা সাইদীর রায়ের পর শ থ লোকককে হত্যা করা, এরপর ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে রাজপথে হাজার হাজার আমদের সোনার টুকরোকে গুলি করে হত্যা করা, আয়না ঘরে গুম, ক্রসফায়ার সমস্ত হত্যাকান্ডের মাস্টার মাইন্ড শেষ হাসিনা। এই কথা চিৎকার করে বলার প্রয়োজন নেই দেশ এবং সারা দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত সমস্ত হত্যাকান্ডের মাস্টার মাইন্ড শেখ াহসিনা। শেখ হাসিনা এত নিষ্ঠুর এবং ফ্যাস্টি যে তার ক্ষেত্রে শুধু ফ্যাস্টি শব্দটি প্রযোজ্য নয়। তাকে আমি স্যাডিস্ট বলি। স্যাডিস্ট ইংরেজিতে তাকে বলা হয় যে খুন, গুম নিষ্ঠুরতা এবং রক্তপাত দেখে পাষান হৃদয় একটুও কাপেনা, বরং উপভোগ করে।
আজকে বিভিন্ন মহল থেকে হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য, সেই খুনি মাস্টারমাইন্ডকে আবার রাজনীতে আনার জন্য নিজের পদপদবিকে রক্ষা করার জন্য অথবা তার আমলে সুবিধা ভোগ করে পিলখানার মতো নৃশংসতাকে আড়াল করার জন্য যারা বাবছেন তাদের ধিক্কার জানাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাড়ে ৬মাস পার করছেন, আমরা জনি খুনি সরকারের কাছে কোনোদিন ন্যায় বিচার পেতাম না। কিন্তু হাজার হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে যে সরকার গঠিত হয়েছে আমরা অবশ্যই তার কাছে ন্যয় বিচার প্রত্যাশা করি। ফলে বিলম্ব হলেও আজকে যে কমিশন গঠন করা করা হয়েছে বিডিআর, পিলখানা এবং সেনা হত্যাকান্ডে আওয়ামী লীগ এবং তাদের প্রেতাত্নাদের কী ভূমিকা ছিল আধিপত্ববাদী বিদেশি শক্তির কি ভূমিকা ছিল এসব তদন্ত করে জাতির কাছে এই কমিশনকে সেই তথ্য দিতে হবে। বিডিআর হত্যাকান্ডের পেছনে আধিপত্তবাদি শক্তির কী ভূমিকা ছিল তা প্রকাশ করতে হবে।
ফ্যাসিবাদি সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের সাড়ে সাত বছর কারাগারে ছিলাম। হাজার হাজার বিডিআর জওয়ানের কাছে শুনেছি পিলখানায় কিভাবে হত্যাকান্ড চালিয়েছে, লাশগুলো কিভাবে কেটে ড্রেনে ফেলে দিয়েছে। তারা তখন হিন্দিতে কথা শুনেছে। পরিচয় গোপন করতে তারা মুখোস পরে হত্যাকান্ড চালিয়েছে। ফলে এই হত্যাকান্ড নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করার অর্থ হলো বিচার প্রক্রিয়াকে চাপা দিতে চাওয়া। অন্তবর্থী সরকার যে তদন্ত কমিশন গঠন করেছে তারা বিলম্ব না করে এর পেছনে রাজনৈতিক শক্তি জড়িত ছিল কি না, বিদেশি শক্তির কি হাত ছিল ফ্যাসিবাদি খুনি হাসিনার কি ভূমিকা ছিল জাতির সামনে তার শ্বেতপত্র অবিলম্বে প্রকাশ করুন। কারাগারে এখনো নিরিহ, নিরপরাধ ব্যক্তি বন্দি হয়ে আছে যারা একেবারেই নিষ্পাপ কিছু জানতো না, সেখানেও নিষ্ঠুরভাবে অনেককে হত্যা করা হয়েছে এরসাথে যারা জড়িত তাদের বিচার করতে হবে। বিচার হীনতার কারণে খুনগুমের মতো ঘটনা ঘটছে, আয়না ঘরের মতো নিষ্ঠুর নির্মম দৃশ্য সারা দুনিয়া দেখেছে। পূনরায় এধরণের লোমহর্ষক ঘটনার পূণরাবৃত্তি বাংলাদেশ হোক তা আমরা চাই না। এসব কারণে আজকে এগুলোর বিচার হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আজকের এই মানবিক ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন এবং স্পর্শকাতর এধরণের একটি সমাবেশে সংহতি ও সমবেদনা জানানোর জন্য উপস্থিত হয়েছি। কেউ আসুক বা না আসুক বাংলাদেশের দেশ্রপমিক মানুষ এই সমাবেশের আয়োজকদের পাশে থাকবে ইনশা আল্লাহ। পরিশেষে সাংবাদিকদেরকে উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, স্বামী হারা, সন্তান হারা, মানুষের আকুতি এবং মানবিক ঘটনা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জাতির কাছে তুলে ধরুন। রাষ্ট্রের কোনো অংশ থেকে বিভ্রান্তিকর কোনো কথা বলে থাকলে সেই কথার সত্যতা তুলে ধরুন। জাতির প্রতিবাদের ভাষা আপনাদের মাধ্যমে প্রকাশিত হোক সেই প্রত্যাশা রাখি।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, আমিও একজন ভুক্তভোগী, আমিও শেখ হাসিনার নিষ্পেশনের শিকার, আমাকেও রাজপথে গুলি করা হয়েছে। সামনে থেকে গুলি ঢুকে পেছন থেকে বের হয়ে গেছে। আমি তিনবার গুমের শিকার হয়েছি। াথচ অনেক মা এখনো তার সন্তানের খোঁজ পাননি। তিনি বলেন, পিলখানায় ৫৭ জন চৌকস সেনা অফিসারকে হত্যার আসামি শেখ হাসিনা তাকে যদি ধরা যায় জিজ্ঞাসাবাদ করা যায় তাহলে কেবল আসল রহস্য উদঘাটিত হবে। আমরা ডলপালারে চেয়ে পৃকৃত খুনিকে ধরতে পারলে সব হত্যার তথ্য বেরিয়ে আসবে। তাকে বারত থেকে ফিরিয়ে এনে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার বিচার করতে হবে। তাকে বুঝিয়ে দিত হবে কোনো মায়ের কোল খালি করলে তার পরিণতি কেমন হতে পারে। সেই মায়ের কত কষ্ট হতে পারে। শেখ হাসিনার সাথে তার সাঙ্গপাঙ্গ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চিহ্নিত সদস্য যারা শেখ হাসিনাকে সহযোগীতা করেছে তাদেরকে আটক করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
আল্লামা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর পুত্র শামীম সাঈদী বলেন, পিলখানার ঘটনা সম্পর্কে শেখ হাসিনার আগে থেকেই জানা ছিল। আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাইদী বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলায়, ভারতের বিরোধীতা করায় পরিকল্পিতবাবে হত্যা করা হয়েছে। সারা জীভন যিনি মানবতার পক্ষে কথা বলেছেন আর ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার সাঙ্গপাঙাগরা তাকেই বলেছে মানবতা বিরোধী। তিনি বলেন, আল্লামা সাইদীর স্কাইপ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে স্পষ্ট যে কিভাবে মিথ্যা কথা বলে আদালত পরিচালিথ হতো।
আলী আহমদ মাবরুর বলেন, আমি দেখেছি কিভাবে একটি পারবার নিশেষ হয়ে যায়। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.)আবদুর রহিমের পরিবারকে আমি নি:শেষ হেয় যেতে দেখছি। একজন মানুষ ফ্যাসিবাদি শাসনের শিকার হলে পুরো পরিবার কিভাবে কত কষ্ট নিয়ে জীবন কাটে আমি দেখছি। এখনো অনেকেই তাদের স্বজনদের ফিরে পায়নি। পিলখানার ট্রাজেডিকে সেনাবহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চারিয়ে আসছিল ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা।
সভাপতির বক্তব্যে ব্রিঃ জেঃ মোহাম্মদ হাসান নাসির (অবঃ) বলেন, আমরা ২০০৬ সাল থেকে গুম, খুন ও হত্যাকান্ডের শিকার যারা আমরা সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিচার চাইতে এখানে সমবেত হয়েছি। তিনি বলেন, নেক্সাস ডিফেন্স এন্ড জাস্টিজ এটি একটি নির্দর্লী প্রতিষ্ঠান। অবসরপ্রাপ্ত নির্যাতিত পরিবারের সদস্যরা আমাদের সাথে আছেন। গত ১৬ বছর ধরে গুম-খুনের শিকার পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হলে অবশ্যই এর বিচার হবে। আমরা জাতীয় শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা পেয়েছি কিন্তু এর মাঝে যে একটি বক্তব্য এসেছে তার সাথে একমত নই। আমরা যেসব তত্য পেয়েছি যেসব তথ্য ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে তার াএলাকে বিচার করতে হবে। পিলখানায় ৩০ ঘন্টা ব্যপি তান্ডব চালিয়েছে এর বিচার করতে হবে।
এছাড়াও সমাবেশে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিয়েছেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের দফতর সম্পাদক মাওলানা আফসার মাহমুদ,গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান, আমজনতার দলের সদস্য সচিব তারেক রহমান, শহীদ মেজর তানভীরের স্ত্রী তাসনুভা মাহা, মেজর রেজাউল করিম (বরখাস্ত), মেজর ফিরোজ ইফতেখার ফুয়াদ, লেঃ কঃ হাসিনুর রহমান (বীর প্রতীক), কর্নেল মোঃ শাহ নুর রহমান, হেফাজতে ইসলাম এর সহকারী মহাসচিব মাওলানা মুসা ইজহার, হেফাজতে ইসলাম এর যুগ্মসচিব মুফতী মনির হোসাইন, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ এর পুত্র মাবরুর,মায়ের ডাক (সানজিদা ইসলাম তুলি), কুটনীতিক ক্যাপ্টেন মারুফ জামান, গুম ফেরত বীর মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল চৌধুরী প্রমুখ।