DailySangram-Logo

জাতীয়

রাজধানীতে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশে ডা. শফিকুর রহমান

অবিলম্বে এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দিন

অবিলম্বে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, এটিএম আজহারের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত এই সমাবেশ, প্রথমও নয় শেষও নয়।

স্টাফ রিপোর্টার
Printed Edition
005
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন মোড়ে ঢাকা মহানগরী জামায়াত আয়োজিত বিক্ষোভপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের আমীর ডা. শফিকুর রহমান -আজিজ ফারুকী

জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক দ্রুত ফিরিয়ে দেয়ার দাবি

অবিলম্বে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, এটিএম আজহারের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত এই সমাবেশ, প্রথমও নয় শেষও নয়। সমাবেশ, বিক্ষোভ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আমরা আশা করবো সরকার শুভবুদ্ধির পরিচয় দিবে। এক এক করে বাকী মজলুমদের যেভাবে মুক্তি দিয়েছেন; সর্বশেষ মজলুমকেও দেশবাসীর কাছে মুক্তি দিয়ে ফিরিয়ে দিন। তার জীবন থেকে ১৩টি বছর হারিয়ে গেল। এগুলো কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবেন না। আর ১৩ মিনিট তিনি জেলে থাকুক তা আমরা চাই না। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব এক বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।

সমাবেশে অন্যান্য নেতৃবৃন্দ দ্রুত জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। আসরের নামাযের পর ক্বারী বেলাল হোসাইনের কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম। মঞ্চে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেনসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি সারাদেশে এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে।

এটিএম আজহারের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে জনতার ঢল নামে পল্টন মোড়েসহ আশপাশের এলাকাতে। বিজয়নগর, কাকরাইল মোড় থেকে শুরু করে আরামবাগ, মৎস্যভবনসহ আশপাশের এলাকা মানুষে মানুষে সয়লাব হয়ে যায়। মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হয় ঢাকা শহর।

বক্তব্যের শুরুতে জামায়াতের আমীর বলেন, আপনারা সাক্ষী ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের কবলে ছিল। ফ্যাসিবাদ প্রতিপক্ষ সংগঠন হিসেবে তার হিং¯্রতম থাবাটি বিস্তার করেছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওপর। সকল শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে এক এক করে বন্দী করেছিল। প্রথম দফায় বন্দী হওয়ার পর সংগঠন এটিএম আজহারুল ইসলামের ওপর সেই সময়ের গুরু দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল। ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। পথের কাঁটা সরানোর জন্য বাকীদের ধারাবাহিকতায় ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখে তাকেও গ্রেফতার করা হলো। এক এক করে ১৩টি বছর অতিবাহিত হয়েছে। কারাগার প্রকোষ্ঠের অন্ধকারে তিনি আছেন। তারপরও তিনি মুক্ত হননি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হলো। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হলো ফ্যাসিবাদের কঠিন সাক্ষী এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্ত হলেন না কেন ? কোন জিনিস তাকে কারাগারে আটকে রাখতে বাধ্য করেছে ? কেন এই বৈষম্য ? আমরাতো নিজে থেকেই অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবি জানিয়েছিলাম। এই উদারতা আমরা দেখিয়েছিলাম। উদারতা দেখিয়ে যাবো। কিন্তু এটিএম আজহারুল সাহেব কেন মুক্তি পেলেন না তা সুস্পষ্টভাবে জানতে চাই বর্তমান সরকারের কাছে। আমরাতো চাইনি, কল্পনাও করিনি যে আমাদের এইভাবে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হবে প্রিয় আজহার ভাইয়ের মুক্তির দাবিতে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা ভদ্র কিন্তু বোকা নই। আমাদের ভদ্রতা এবং উদারতাকে কেউ যেন দুর্বলতা মনে না করেন। ভদ্র যখন শক্ত হয় তখন কতটা শক্ত হতে পারে তা সাড়ে ১৫ বছর আপনারা দেখেছেন। কোন অপশক্তির কাছে জামায়াত ১৫ বছর মাথা নত করেনি। জীবন দিয়েছে কিন্তু আপস করেনি। বহু আপসের প্রস্তাব আমাদের কাছে এসেছিল। বাংলাদেশের বীর সন্তানেরা সেই প্রস্তাবগুলো পায়ের তলে ফেলে দিয়েছিলেন। আমরা তাদের উত্তরসূরী। সুতরাং দয়া করে আর ধৈর্য্যরে পরিচয় নিবেন না। এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দিন।

জামায়াতে ইসলামীর আমীর প্রশ্ন রাখেন, কেন আমাদের নিবন্ধন আটকে রেখেছেন ? নিবন্ধনতো জালিম সরকার কেড়ে নিয়েছিল। সেই জুলুম আপনারাও কি আমাদের ওপর করবেন? এজন্য হাজার জনতা জীবন দিয়েছে? হাজার হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে ? আবার সেই বৈষম্য দেখার জন্য? আমরা বাংলাদেশের মাটিতে আর কোন বৈষম্যকে বরদাস্ত করবো না। সকল বৈষম্যের কবর রচনা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।

তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন একটি বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লড়াই করার জন্য কি রাজি আছেন? লাখো কন্ঠে আওয়াজ আসে জি¦......।

প্রায় ১০ মিনিটের বক্তব্য রাখেন ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ছাত্র যুবকের কন্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বার বার বলতে চাই ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’।

তিনি আরও বলেন, আমাদেরকে মেহেরবানি করে চোখ রাঙাবেন না। ফ্যাসিবাদের ভাষায় কেউ কথা বলবেন না। কথা বলবেন রাজনীতিবিদের ভাষায়। আমরা ওয়েলকাম করবো অভিনন্দন জানাবো। সমালোচনা করলে চুমু দিবো। কিন্তু চোখ রাঙাবেন না মেহেরবানি করে। এই সংগঠন কারো চোখ রাঙানোকে পরোয়া করে না।

তিনি বলেন, দেশের বিরুদ্ধে জাতির বিরুদ্ধে অতীতেও ষড়যন্ত্র ছিল। ফ্যাসিবাদের পতনের পরও ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। এক এক করে আল্লাহ তায়ালা সকল ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আসুন, দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে ফ্যাসিবাদকে রুখে দাঁড়াই। তিনি এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্ত বাতাসে নিঃশ^াস নেওয়ার জন্য আল্লাহতায়ালার সাহায্য কামনা করেন।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ৫ আগস্টের পর দেখেছি প্রধান উপদেষ্টাকে মামলা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। অথচ মানবিক নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দেওয়া হলো না। এর পেছনে কি কোন ষড়যন্ত্র রয়েছে ? দেখা যাচ্ছে বৈষম্যহীন দেশে এটিএম আজহারুল ইসলাম বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। তিনি এটিএম আজহারের মুক্তির পাশাপাশি দলের নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।

মহানগর উত্তরের আমীর ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ১৯০ দিন পর জামায়াতে ইসলামী আবার রাজপথে নেমেছে। আমরা ন্যায়বিচারের আহ্বান জানাই। যদি এটিএম আজহারকে মুক্তি না দেওয়া হয় তাহলে রাজপথ অচল করে দেবো।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, অনেক রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটিএম আজহারকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। সরকারকে বলবো চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। নইলে যেভাবে মুক্ত করতে হয় সেটাই করা হবে। সমাবেশ শেষে পল্টন মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়।