জাতীয়
সাড়ে ১৬ হাজার গায়েবি মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে : আইন উপদেষ্টা
শেখ হাসিনাকে ফেরতের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, এখন ভারতের যে মনোভঙ্গি, এটি দেখে মনে হচ্ছে, তারা নানা অজুহাতে এটিকে (শেখ হাসিনাকে ফেরত) নাকচ করার চেষ্টা করবে।
Printed Edition
শেখ হাসিনাকে ফেরতের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, এখন ভারতের যে মনোভঙ্গি, এটি দেখে মনে হচ্ছে, তারা নানা অজুহাতে এটিকে (শেখ হাসিনাকে ফেরত) নাকচ করার চেষ্টা করবে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আসিফ নজরুল এ কথা বলেন। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকা-ের বিচারকাজের অগ্রগতিসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করতে বলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের এই আইনে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন) পলাতকদের বিচারের বিধান রয়েছে। সাধারণ খুনের ক্ষেত্রেও রয়েছে। আমরা তো আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। এখন ভারতের যে মনোভঙ্গি, এটা দেখে মনে হচ্ছে, তারা নানান অজুহাতে এটিকে নাকচ করার চেষ্টা করবে। তারা (ভারত) শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে তাঁকে অবাধে বাংলাদেশ সম্পর্কে কুৎসামূলক, উসকানিমূলক, বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলতে দিয়ে বরং বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে। তাতে আমাদের মনে হয় না এই আইনটি (চুক্তি) সরল বিশ্বাসে প্রতিপালন করার ইচ্ছা তাদের রয়েছে। আমরা আমাদের দাবি জানাতে থাকব।
সংবাদ সম্মেলনে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকা-ের বিচারকাজের অগ্রগতি তুলে ধরে আইন উপদেষ্টা বলেন, আগামী অক্টোবরের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে তিন-চারটি মামলার রায় পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করছেন।
আ’লীগ আমলের সাড়ে ১৬ হাজার ‘গায়েবি’ মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হওয়া ১৬ হাজার ৪২৯টি ‘গায়েবি’ মামলা প্রত্যাহার করা হচ্ছে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, এরমধ্যে এক হাজার ২১৪টি মামলা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে।
তিনি বলেন, ১৬ হাজার ৪২৯টি মামলার তালিকা করা হয়েছে। তালিকার পর প্রতিটি মামলার রেকর্ড ঘেঁটে আমাদের দেখতে হয়, এটা জেনুইনলি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক গায়েবি মামলা কি না। নাকি এটা কোনোরকম অনিয়ম বা কারচুপি করে ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যক্তির মামলা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যক্তির হত্যা মামলা তো প্রত্যাহার করতে পারি না। প্রতিটা কেস রেকর্ড দেখে দেখে নিশ্চিত হতে হচ্ছে।
আসিফ নজরুল বলেন, এ প্রক্রিয়ায় ১৬ হাজার ৪২৯টি গায়েবি মামলার মধ্যে এক হাজার ২১৪টি মামলা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে। আর এক হাজার ২১৪টি মামলার মধ্যে ৫৩টি মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত গেজেট আজ-কালের মধ্যেই প্রকাশ করা হবে।
মামলা প্রত্যাহারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করেছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, অনেক ক্ষেত্রে আমরা ওনাদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গায়েবি মামলা হচ্ছে আওয়ামী লীগ আমলে নিপীড়নের উদ্দেশ্যে দায়ের করা মামলা।
বিগত সরকারের আমলে কথা বলা বা লেখালেখির কারণে (স্পিচ অফেন্স) ৩৯৬টি মামলা করা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আইন মন্ত্রণালয় পাবলিক পসিকিউটরদের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ৩৩২টি মামলা প্রত্যাহার করেছে। ৬১টি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। এটাও আগামী তিন-চার কার্যদিবসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ফেব্রুয়ারি মাস যখন শেষ হবে তখন স্পিচ অফেন্স সংক্রান্ত আর কোনো মামলা সাইবার সিকিউরিটি আদালতে থাকবে না।
তিনি বলেন, তবে তিনটি মামলা আমরা প্রত্যাহার করতে পারবো না। কারণ উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেগুলো স্থগিত রয়েছে।
পাওয়ার অব অ্যাটার্নি বিধিমালা সংশোধন
আসিফ নজরুল বলেন, ২০১৫ সালের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা নিয়ে প্রবাসীরা প্রচুর অভিযোগ করতেন। এই বিধিমালা অনুযায়ী কেউ যদি পাওয়ার দিতে চাইতো তবে তার পাসপোর্ট থাকতে হতো, বাংলাদেশের দূতাবাসে গিয়ে তাকে পাসপোর্ট জমা দিতে হতো। প্রবাসীদের সন্তানরা অনেকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেন না। তাই ওনাদের পক্ষ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি হতে গেলে অনেক জটিলতা হতো।
আইন উপদেষ্টা বলেন, সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে আমরা এই বিধিমালার সংশোধন এনেছি। সংশোধন অনুযায়ী প্রবাসী বাংলাদেশিদের যদি বাংলাদেশি পাসপোর্ট নাও থাকে তাহলেও তারা তাদের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে পারবেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তির পাসপোর্টে নো ভিসা রিকোয়ার স্টিকার থাকলে, কিংবা তার জন্মসনদ থাকলে কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে তিনি বিদেশ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে পারবেন। আমি মনে করি এটি আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকের ভোগান্তি লাঘবে বিরাট ভূমিকা রাখবে।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে মামলা ও তদন্তের গতি যাতে ধীর না হয় এজন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা।