DailySangram-Logo

জাতীয়

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের যে ফর্মুলা দিল সংবিধান সংস্কার কমিশন

আইনসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কিংবা আইনসভা ভেঙে গেলে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার শপথ না নেয়া পর্যন্ত একটি অন্তর্বর্তী সরকার নিয়োগের সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন।

অনলাইন ডেস্ক
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের যে ফর্মুলা দিল সংবিধান সংস্কার কমিশন
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের যে ফর্মুলা দিল সংবিধান সংস্কার কমিশন

আইনসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কিংবা আইনসভা ভেঙে গেলে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার শপথ না নেয়া পর্যন্ত একটি অন্তর্বর্তী সরকার নিয়োগের সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। আর এই অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৯০ দিন। তবে যদি নির্বাচন আগে অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শপথ গ্রহণ করা মাত্র অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ শেষ হবে।

শনিবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

অধ্যাপক আলী রিয়াজের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা হলেন—অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইকরামুল হক, সিনিয়র অ্যাডভোকেট ড. শরীফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার এম মঈন আলম ফিরোজী, ফিরোজ আহমেদ, মো. মুসতাইন বিল্লাহ, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি মো. মাহফুজ আলম ও ছালেহ উদ্দিন সিফাত।

রাষ্ট্রীয় কার্যাবলিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনা এবং রাষ্ট্রীয় অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করতে একটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন।

জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল

জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। এনসিসির সদস্য হবেন: রাষ্ট্রপতি; প্রধানমন্ত্রী; বিরোধীদলীয় নেতা; নিম্নকক্ষের স্পিকার; উচ্চকক্ষের স্পিকার; বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি; বিরোধীদল মনোনীত নিম্নকক্ষের ডেপুটি স্পিকার; বিরোধীদল মনোনীত উচ্চকক্ষের ডেপুটি স্পিকার; প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতার প্রতিনিধিত্বকারী সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের উভয় কক্ষের সদস্যরা ব্যতীত, আইনসভার উভয় কক্ষের বাকি সব সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে তাদের মধ্য থেকে মনোনীত একজন সদস্য।

ওই ভোট আইনসভার উভয় কক্ষের গঠনের তারিখ থেকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। জোট সরকারের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল ব্যতীত জোটের অন্য দলের সদস্যরা ওই মনোনয়ন ভোট দেওয়ার যোগ্য হবেন।

তবে আইনসভা ভেঙে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শপথ না নেওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান এনসিসি সদস্যরা কর্মরত থাকবেন। আইনসভা না থাকাকালীন এনসিসির যারা সদস্য হবেন, তারা হলেন—রাষ্ট্রপতি; প্রধান উপদেষ্টা; বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি; প্রধান উপদেষ্টার মনোনীত উপদেষ্টা পরিষদের দুই জন সদস্য।

আর এই এনসিসি বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নাম পাঠাবে। যেসব পদে নিয়োগের জন্য নাম পাঠাবে সেগুলো হলো—নির্বাচন কমিশনের প্রধানসহ অন্যান্য কমিশনার; অ্যাটর্নি জেনারেল; সরকারি কর্মকমিশনের প্রধানসহ অন্যান্য কমিশনার; দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধানসহ অন্যান্য কমিশনার; মানবাধিকার কমিশনের প্রধানসহ অন্যান্য কমিশনার; প্রধান স্থানীয় সরকার কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার; প্রতিরক্ষা-বাহিনীসমূহের প্রধান; আইন দ্বারা নির্ধারিত অন্য কোনো পদে নিয়োগ।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠন

কমিশনের সুপারিশসমূহের সার-সংক্ষেপে অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে বলা হয়, কমিশন আইনসভার মেয়াদ শেষ হবার পরে কিংবা আইনসভা ভেঙে গেলে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার শপথ না নেওয়া পর্যন্ত একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সুপারিশ করছে।

এই সরকারের প্রধান ‘প্রধান উপদেষ্টা’ বলে অভিহিত হবেন। আইনসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিন আগে অথবা আইনসভা ভেঙে গেলে, পরবর্তী অন্যূন ১৫ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা সর্বোচ্চ ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা পরিষদের মাধ্যমে কার্য পরিচালনা করবেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৯০ দিন হবে। তবে যদি নির্বাচন আগে অনুষ্ঠিত হয় তবে নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শপথ গ্রহণ মাত্র এই সরকারের মেয়াদের অবসান ঘটবে।

যেভাবে প্রধান উপদেষ্টার মনোয়ন

কমিশন আইন সভার সদস্য হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের সুপারিশ করেছে। তবে সে ক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। সেগুলো হলো—জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) নয় সদস্যের মধ্যে ন্যূনতম সাত সদস্যের সিদ্ধান্তে এনসিসির সদস্য ব্যতীত নাগরিকদের মধ্য থেকে একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন।

এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব না হলে, সকল অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের মধ্য থেকে একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি এনসিসির নয় সদস্যের মধ্যে ন্যূনতম ছয় সদস্যের সিদ্ধান্তে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন।

এতেও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব না হলে, এনসিসির সকল সদস্যের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

এনসিসি এ ক্ষেত্রে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে, বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিদের মধ্যে যিনি সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি প্রধান উপদেষ্টা হবেন।

যদি সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে না পাওয়া যায় অথবা তিনি প্রধান উপদেষ্টা হতে অসম্মত হন, তাহলে তার অব্যবহিতপূর্বে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি প্রধান উপদেষ্টা হবেন। একইভাবে তাকেও না পাওয়া গেলে অথবা তিনি প্রধান উপদেষ্টা হতে অসম্মত হলে পর্যায়ক্রমে অব্যবহিত পূর্বে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি প্রধান উপদেষ্টা হবেন। এরপর যদি কোনো অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে না পাওয়া যায় অথবা তিনি প্রধান উপদেষ্টা হতে অসম্মত হন, তবে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের মধ্যে যিনি সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি প্রধান উপদেষ্টা হবেন।

যদি আপিল বিভাগের সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারককে পাওয়া না যায় অথবা তিনি প্রধান উপদেষ্টা হতে অসম্মত হন, তাহলে তার অব্যবহিত পূর্বে অবসরপ্রাপ্ত আপিল বিভাগের বিচারক প্রধান উপদেষ্টা হবেন। একইভাবে তাকেও না পাওয়া গেলে অথবা তিনি প্রধান উপদেষ্টা হতে অসম্মত হলে পর্যায়ক্রমে অব্যবহিতপূর্বে অবসরপ্রাপ্ত আপিল বিভাগের বিচারক প্রধান উপদেষ্টা হবেন।