DailySangram-Logo

জাতীয়

বিচারে সরকার তাড়াহুড়ো করবে না -প্রধান উপদেষ্টা

গুম-খুন ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারে সরকার তাড়াহুড়ো করবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, সব হত্যাকাণ্ড ও গুম-খুনের বিচার হবে।

স্টাফ রিপোর্টার
Printed Edition

গুম-খুন ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারে সরকার তাড়াহুড়ো করবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, সব হত্যাকাণ্ড ও গুম-খুনের বিচার হবে। তবে বিচার তাৎক্ষণিকভাবে করতে গেলে অবিচার হয়ে যায়। আমরা অবিচারে নামব না। এসময় তিনি আইন হাতে তুলে না নিয়ে অপরাধীদের পুলিশের কাছে হস্তান্তরের আহ্বানও জানান।

গতকাল সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা ২১টি জুলাই শহীদ পরিবার ও সাতজন আহতের মধ্যে আর্থিক চেক হস্তান্তর করে এর উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সবসময় ভাবি, যাদের কারণে, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে দেশটাকে আমরা নতুন বাংলাদেশ বলার সাহস করছি তাদের এই ত্যাগ কোনো নিক্তি দিয়ে মাপা যায় না।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদের ইতিহাসের স্রষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘আপনারা জীবন্ত ইতিহাস। মনের গভীর থেকে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যে জাতি ইতিহাসকে স্মরণ করতে পারে না সে জাতি, জাতি হিসেবে গড়ে ওঠে না। এই স্বীকৃতিটা জাতির পক্ষ থেকে আমি আপনাদের কৃতজ্ঞতা।

শহীদ পরিবার ও আহতের উদ্দেশ্যে বলেন, আজকে থেকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের অংশ হলেন। এটা হলো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি। এর বাইরেও আপনাদের দায়িত্ব সমাজের সবাইকে গ্রহণ করতে হবে।

গুম-খুন ও গণহত্যা ও নানা অপরাধে জড়িতদের বিচার প্রসঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বিচার তাৎক্ষণিকভাবে করতে গেলে অবিচার হয়ে যায়। বিচারের মূল জিনিসটা হলো এটা সুবিচার হতে হবে...অবিচার যেন না হয়। আমরা অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম বলেই এই সংগ্রাম হয়েছে, এই আত্মত্যাগ হয়েছে। আমরা যদি অবিচারে নামি তাহলে তাদের আর আমাদের মধ্যে তফাৎটা থাকল কোথায়। আমরা অবিচারে নামব না। আমরা যারা অপরাধী তাদের পুলিশের হাতে, আইনের হাতে সোপর্দ করব। যারা অপরাধী নয়, পুলিশের হাতে দেওয়ার মতো নাই তাদের মানুষ করব।

‘ভাই, এদেশ আমরা একসঙ্গে গড়ি, যেদেশ আমরা একসঙ্গে গড়ার স্বপ্ন দেখছি, তোমরাও সে স্বপ্ন দেখো। এদেশ আমার একার না, তোমারও দেশ এটি। তুমি এদেশের সন্তান। আমিও এদেশের সন্তান। তুমি আমাকে বহু কষ্ট দিয়েছে। আমি তোমারে কষ্ট দেব না। আমরা এক যোগে যত তাড়াতাড়ি পারি এটাকে একটা সুন্দর দেশ বানাব... যারা অপরাধী তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। যারা অপরাধী নয় তাদের সৎ পথে নিয়ে আসতে হবে।’

এসময় তিনি জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের আহ্বান জানান, দেশে কোনো সহিংসতা ও হানাহানি যেন না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

বৈঠকে আহত ও শহীদ পরিবারের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের জন্য সরকারের গৃহীত কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।

কানাডার উৎপাদন কারখানা স্থানান্তরের আহ্বান: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশকে একটি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে কানাডাকে তাদের উৎপাদন কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তরের আহ্বান জানিয়েছেন।

সোমবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী আহমেদ হুসেনের সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি এ আহ্বান জানান।

বৈঠকে বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে ‘বিদেশী বিনিয়োগ প্রচার ও সুরক্ষা চুক্তি (এফআইপিএ)’ নিয়ে চলমান প্রযুক্তিগত আলোচনার বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেন কানাডিয়ান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এফআইপিএ স্বাক্ষরিত হলে কানাডার ব্যবসায়ীরা এতে উৎসাহিত হবেন এবং এটি তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করবে।’

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুততর করার আহ্বান জানান।

জবাবে কানাডার মন্ত্রী বলেন, আমরা শিক্ষার্থী ভিসার সংখ্যা কিছুটা কমিয়েছি, তবে এটি বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে করা হয়নি। বৈধ বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের দরজা সবসময় খোলা।

প্রধান উপদেষ্টা কানাডাকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগে সহায়তা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘কানাডার একটি এলাকাকে ‘বেগম পাড়া’ বলা হয়, যেখানে দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের পরিবার বসবাস করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি, কারণ এটি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।’

এ প্রসঙ্গে কানাডার মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দুর্নীতির অর্থ বা লুটপাট করা সরকারি টাকা কানাডায় রাখতে চাই না।’

বৈঠকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কানাডার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন কানাডার মন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমি জানি, বাংলাদেশের জনগণ আপনাদের প্রতি তাদের আশা ও প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে আছে।’

এছাড়া, বাংলাদেশে চলমান সংস্কার কার্যক্রম, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এবং মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংকট নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিং এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন।