DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

জাতীয়

শহীদ সেনা অফিসারদের নৃশংস হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল

এতো বছর আমরা একটা জালিম শাসনের অধীনে ছিলাম। উনি (হাসিনা) এতো বছর ধরে পিলখানায় শহীদ সেনা অফিসারদের নৃশংসহত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাই করেছেন। আমরা তো পিলখানায় ছিলাম, অনেক সৈনিককে হত্যা করা হয়েছে। কেউ জেলে আছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই, বিচার। কারণ নিরপরাধ সেনা অফিসারদের হত্যা করা হয়েছে।

স্টাফ রিপোর্টার
Printed Edition
p1d
২৫ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক পিলখানা ট্রাজেডি দিবসে গতকাল মঙ্গলবার বনানী সেনা কবরস্থানে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের কবরে শ্রদ্ধা জানান সেনা কর্মকর্তাগণ -সংগ্রামNone

শহীদদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার বিনম্র শ্রদ্ধা

এবারের পিলখানা বার্ষিকীর দিনটি ব্যতিক্রম: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এতো বছর আমরা একটা জালিম শাসনের অধীনে ছিলাম। উনি (হাসিনা) এতো বছর ধরে পিলখানায় শহীদ সেনা অফিসারদের নৃশংসহত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাই করেছেন। আমরা তো পিলখানায় ছিলাম, অনেক সৈনিককে হত্যা করা হয়েছে। কেউ জেলে আছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই, বিচার। কারণ নিরপরাধ সেনা অফিসারদের হত্যা করা হয়েছে। আমাদের ধৈর্য ধরে থাকতে হবে। মুসলিম হিসেবে আমাদের বিশ্বাস করতে হবে যে কেউ কখনো চিরদিন বাঁচে না। কিন্তু বিচার তো হবে যারা ইনোসেন্টদের হত্যা করেছে তাদের।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার বনানীর সামরিক কবরস্থানে নিহত সেনাসদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে এসব কথা বলেন শহীদ কর্নেল এমদাদুল ইসলামের মেয়ে। শহীদ পরিবারের সদস্যরা কবরস্থানে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে যান। তারা এখন নতুন করে বিচার পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তারা সবাই বলছেন- আল্লাহ আমাদের সহায় হয়েছেন। দেরিতে হলেও আমরা ন্যায়বিচার পাবো।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার পিলখানায় সেনা সদস্যদের হত্যার ঘটনা ঘটে। সেখানে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মারা যান ৭৪ জন। হত্যার এই ঘটনাকে ‘জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি’ ও ‘শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে পালনের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল শহীদ সেনা পরিবারের। সেটি বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্ণপাত করেনি। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা করে।

কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শহীদ মেজর মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী রিতা রহমান জুলি বলেন, আমরা খুব বেশি কিছু চাইনি। চেয়েছি শহীদি মর্যাদা এবং বিচারটা সুষ্ঠুভাবে হোক। যারা দোষী তারা যেন সামনে আসে, যেন সুষ্ঠু বিচারটা হয়। শহীদ কর্নেল কুদরত এলাহীর ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান বলেন, এতদিন ধরে আমাদের বাবারা আর্মির লিস্টে শহীদ ছিলেন। এই প্রথম বাংলাদেশের লিস্টে শহীদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এজন্য এই সরকারকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। তিনি বলেন, আমাদের (শহীদ পরিবার) প্রধানত দুটি দাবি ছিল, একটি স্বাধীন তদন্তকমিশন, শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা। এখন পর্যন্ত আমাদের যে আসল দাবি স্বাধীন তদন্ত সেটি কিন্তু এখন শেষ হয়নি। যদিও একটি স্বাধীন তদন্তকমিশন গঠন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গিয়ে আমরা অভিযোগ করেছি। এর মূল কারণটা হচ্ছে যদিও তদন্তকমিশন গঠন না করা হয় কিন্তু তদন্ত যেন চলমান থাকে, সেক্ষেত্রে আমরা যেন তার (হাসিনা) বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে পারি। আমি আশা করব যে, এই তদন্তকমিশন যেটা কি না তদন্ত হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অধীনে। প্রকৃত অর্থে যারা দোষী আমরা তাদেরকে যেন এখানে আনতে পারি। বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা ও এতোদিন পর্যন্ত কেন সেনা শহীদ ঘোষণা করা হয়নি, জানতে চাইলে এ শহীদ সেনা কর্মকর্তার ছেলে বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে রেখেছিল। কারণ হচ্ছে তারা তো হত্যার ঘটনায় জড়িত। ইতোমধ্যে তিনটা তদন্তকমিশন হয়েছে। সেই তিনটা কমিশনের তদন্ত অত্যন্ত কম্প্রমাইজড ছিল। সৈনিক যারা ছিল তাদের ঠিকই অভিযুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু পেছনে ষড়যন্ত্রকারীদের আনাই হয়নি। তিনি বলেন, দুটি লেয়ারে অভিযুক্ত বা ষড়যন্ত্রকারী ছিল। একটি হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা, আরেকটি হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ। যে কারণে তাদের কোনোরকম দোষারোপ করে কোনোরকম তদন্ত করেনি কমিশন। পিলখানায় হত্যাযজ্ঞে বাধাদানকারী শহীদ বিডিআরের কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নূরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, শহীদ সেনা দিবস ঘোষণার মাধ্যমে পিলখানায় শহীদ আমাদের বাবাদের আত্মত্যাগের প্রতি জাতীয়ভাবে সম্মান দেওয়া হয়েছে বলে মনে করি। এই কি ঘোষণার মাধ্যমে আমরা যে শহীদের সন্তান, আমাদের হৃদয়ের যে ক্ষত সেটি একটু হলেও কমেছে। তিনি বলেন, ঢালাওভাবে যেন সবাইকে ছেড়ে দেওয়া না হয়। হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত কিন্তু বিস্ফোরক মামলা আসামী তাদের যেন ঢালাওভাবে মুক্তি দেওয়া না হয়। এটা করা হলে আমরা শহীদ পরিবার খুব কষ্ট পাবো। যারা এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে, যারা মাস্টারমাইন্ড ছিল তাদের যেন আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচার সুনিশ্চিত করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার বিনম্র শ্রদ্ধা: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল জাতীয় শহীদ সেনা দিবসে জাতির পক্ষ থেকে শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ।

এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি, প্রথমবারের মতো পালিত হচ্ছে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস। ২০০৯ সালের এই দিনে পিলখানায় সংঘটিত নির্মম হত্যাকা-ের শিকার সকল শহীদের স্মরণে এখন থেকে প্রতিবছর এই দিনটিকে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।’ তিনি এই দিনে জাতির সূর্য সন্তান, শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করেন ও বিনম্র শ্রদ্ধা জানান। তিনি তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। একই সাথে তাদের শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানান।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যা বললেন: পিলখানা হত্যাকা-ের দিনটিকে প্রথমবারের মতো জাতীয় শহীদ সেনা দিবস হিসেবে পালন করায় এবারের দিনটি ব্যতিক্রম বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। মঙ্গলবার পিলখানা হত্যাকা-ের বার্ষিকীতে বনানী সামরিক কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এসব কথা জানিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জানানোর পরেই তিন বাহিনী সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শ্রদ্ধা জানানোর আগে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের ৫৭ জন অফিসার শাহাদাতবরণ করেছেন, সব মিলিয়ে ৭৪ জন শাহাদাতবরণ করেছেন। তাদের আত্মার মাগফিরাতের জন্য এসেছি, এটা প্রতিবছরই আসা হয়। কিন্তু এবার একটু ডিফারেন্স হলো। এবার থেকে এটা শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ডিক্লেয়ার করা হইছে।’