স্বাস্থ্য
প্রতিবছর ১৩ হাজার নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে
বাংলাদেশে নারীদের ক্যানসারের ক্ষেত্রে স্তন ক্যানসার সবচেয়ে বেশি হলেও সচেতনতার অভাবের পাশাপাশি চিকিৎসায় সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি বড় চ্যালেঞ্জ। এ থেকে উত্তরণে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই। তাই চিকিৎসা শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে।

ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিবছর প্রায় ১৩ হাজার নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। যাদের মধ্যে অর্ধেকই মারা যাচ্ছে। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় স্তন ক্যানসারের অস্ত্রোপচারে বাংলাদেশ কিছুটা পিছিয়ে বলে মত দিয়েছেন ক্যানসার বিশেষেজ্ঞরা
রোববার ( ২৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মিন্টু রোডের শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন হলে আয়োজিত দু-দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক স্তন ক্যানসার সম্মেলনের অংশ নিয়ে চিকিৎসকেরা এই আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ স্কুল অব অনকোপ্লাস্টিক সার্জারি আয়োজিত দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের প্রথম দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৪শ ক্যানসার চিকিৎসক অংশ নিয়েছেন।
এ ছাড়াও যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, ভারত ও চীনসহ আটটি দেশের স্তন ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা এতে অংশ নিয়েছেন।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে সোমবার মহাখালীর জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে বিদেশি চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দেশের চিকিৎসকদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেবেন।
সম্মেলনে ক্যানসার চিকিৎসকেরা বলেন, বাংলাদেশে নারীদের ক্যানসারের ক্ষেত্রে স্তন ক্যানসার সবচেয়ে বেশি হলেও সচেতনতার অভাবের পাশাপাশি চিকিৎসায় সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি বড় চ্যালেঞ্জ। এ থেকে উত্তরণে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই। তাই চিকিৎসা শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে।
ডা. তানজিরা আক্তার নিতু বলেন, ‘ক্যানসারসহ ব্যয়বহুল যেকোনো রোগ হলেই আমাদের রোগীরা দেশের বাইরে চলে যান, এটিকে কমাতে হলে নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে আমাদের চিকিৎসকেরা যাতে এই সেবা দিতে পারেন, সেজন্যই এই বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন। এখানে সারাদেশের ৪০০ জন চিকিৎসক এসেছেন। এ ছাড়া তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের ৮ জন প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। আগামীকাল মহাখালীর ক্যানসার হাসপাতালে সরাসরি সার্জারির প্রশিক্ষণ দেবেন বিদেশি চিকিৎসকেরা।’
জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মিনহাজ ভুঁইয়া বলেন, ‘স্তন ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো, সেই সঙ্গে চিকিৎসকদের আরও দক্ষ করে তোলাই এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য। স্তন ক্যানসার এখন দেশে নারীদের প্রধান ক্যানসারে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে স্তন ক্যানসারের উন্নতমানের ডায়াগনোসিস থেকে শুরু করে চিকিৎসা সবধরনের ব্যবস্থাই আছে৷ তারপরও অনেককিছু জানার বাকি। এখানে বিভিন্ন দেশের ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা এসেছেন। তাদের দেশে তারা কিভাবে চিকিৎসা দিচ্ছেন, আমরা কিভাবে দিচ্ছি- সেই পদ্ধতি ও অভিজ্ঞতা বিনিময় হচ্ছে। আমরাও যে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সর্বাধুনিক চিকিৎসা দিচ্ছি সেটিও তুলে ধরা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এক সময় স্তনে ক্যানসার হলে পুরো স্তনটাই ফেলে দিতে হতো। বর্তমানে ৮০ ভাগের বেশি চিকিৎসাই কেমো ও রেডিও থেরাপিতে হচ্ছে। ফলে কাটতে হচ্ছেনা। তবে আমাদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। সেই সঙ্গে চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধারও অনেক ঘাটতি আছে। যেহেতু ব্যয়বহুল রোগ, তাই প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা দিতে পারলে সবচেয়ে ভালো।’
বাংলাদেশ স্কুল অব অনকোপ্লাস্টিক সার্জারির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘দেশে সব ধরনের ক্যানসারের রোগীই রয়েছে। কিন্তু নারীদের স্তন ক্যানসার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ক্যানসার নিয়ে এর আগে বহু প্রোগ্রাম হলেও কেবল স্তন ক্যানসার নিয়ে এতো ব্যাপক আকারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো প্রোগ্রাম হয়নি। অথচ স্তন ক্যানসার এখন গোটা পৃথিবীতে গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্ট। সে অনুযায়ী বহুদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক এগিয়েছে। তারই সূত্র ধরে বাংলাদেশে নতুন প্রজন্মের দক্ষ সার্জন দরকার। যেটার অভাব আমরা পদে পদে বোধ করি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা দক্ষ লোকের অভাব। স্তন ক্যানসার চিকিৎসার মান বাড়াতে হলে শিক্ষা ও টেকনোলজিতে গুরুত্ব দিতে হবে। কাজে লাগাতে হবে অভিজ্ঞতা। এজন্য আমরা শিক্ষায় জোর দিচ্ছি। ইউরোপে কিভাবে শিক্ষাটা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের পার্থক্য কতটা- এসব বিষয় নিয়ে মত বিনিময় হচ্ছে।’