DailySangram-Logo-en-H90

স্বাস্থ্য

ক্যানসারের ঝুঁকি ধরা পড়বে জন্মের আগেই!

কর্কট রোগের একাধিক কারণের মধ্যে একটি জিনের ‘অ্যাক্সিডেন্টাল’ মিউটেশন। অর্থাৎ ক্যানসারের নেপথ্যে বংশধারা, জীবনযাত্রা, পরিবেশ— সব কিছুরই প্রভাব রয়েছে। এই তথ্যটি অজানা নয়। কোনটির প্রভাব কতটা, সে নিয়ে গাণিতিক মডেলও তৈরি হয়েছে।

অনলাইন ডেস্ক
1740404529_woman-1

জন্মের আগেই বলে দেওয়া যাবে, ক্যানসারের আশঙ্কা আছে কি না! মাতৃগর্ভে থাকার সময়েই সেই পরীক্ষা হয়ে যাবে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি। এমনই এক পদ্ধতির খোঁজ পেয়েছেন আমেরিকার মিশিগানের ভ্যান অ্যান্ডেল ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা।

‘নেচার ক্যানসার’ মেডিক্যাল জার্নালে সেই গবেষণাপত্র প্রকাশিতও হয়েছে। গবেষকদের দাবি, গর্ভস্থ ভ্রূণের জিন পরীক্ষা করলেই ধরা যাবে, ভবিষ্যতে তার ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে কি না।

কর্কট রোগের একাধিক কারণের মধ্যে একটি জিনের ‘অ্যাক্সিডেন্টাল’ মিউটেশন। অর্থাৎ ক্যানসারের নেপথ্যে বংশধারা, জীবনযাত্রা, পরিবেশ— সব কিছুরই প্রভাব রয়েছে। এই তথ্যটি অজানা নয়। কোনটির প্রভাব কতটা, সে নিয়ে গাণিতিক মডেলও তৈরি হয়েছে।

তবে ভ্যান অ্যান্ডেল ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা নতুন যে বিষয়টি তুলে ধরেছেন, তা সম্পূর্ণ জিনতত্ত্বের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ ক্যানসার হবে কি হবে না, সেটা নির্ধারণ করে কিছু বিশেষ জিন। ভ্রূণ অবস্থাতেই সেই জিনের বিন্যাস ঘটতে শুরু করে দেয়। বিজ্ঞানীরা দেখবেন, সেই জিনের বিন্যাস স্বাভাবিক ভাবে ঘটছে, না কি তাতে ‘মিউটেশন’ বা কোনও রকম রাসায়নিক বদলের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তেমন হলে বুঝতে হবে, ভবিষ্যতে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

গবেষক জে অ্যান্ড্রিউ পসপিসিলিক এই ব্যাপারে আলোকপাত করেছেন। তিনি জানান, এক দিনেই যে জিনের বিন্যাসে বড়সড় বদল ঘটে যাবে তা কিন্তু নয়। হঠাৎ করেই জিনের গঠন বদলে গেল আর কোষের অনিয়মিত বিভাজন শুরু হয়ে ক্যানসার কোষের জন্ম হল— তা না-ও হতে পারে। বদলটা হয় ধীরে ধীরে। যখন থেকে জিনের বিন্যাস শুরু হয়, সেই সময় থেকেই। তাই গোড়ার দিকেরই যে অসামঞ্জস্য, সেটাই ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ইচ্ছামতো ওষুধ খেয়ে বাড়ছে বিপদ, ঘটছে মৃত্যু! কেন? আইসিএমআরের নজরে কলকাতার প্রবীণরা

‘ট্রিম২৮’ নামে একটি জিন আছে, যা কোষ গঠন ও বৃদ্ধি এবং কোষের বিভাজনে বিশেষ ভূমিকা নেয়। ১৯ নম্বর ক্রোমোজ়োমে এই জিনটি থাকে।

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এই বিশেষ জিনটিকে যদি ভ্রূণ অবস্থা থেকেই পরীক্ষানিরীক্ষা করা যায়, তা হলেই ধরা যাবে ভবিষ্যতে সেটিতে কী কী বদল আসতে পারে এবং ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা আছে কি না। ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে সে ব্যাপারে অনেক তথ্যও পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, ওই বিশেষ জিনটি স্টেম কোষের গঠন ও বিভাজনেও ভূমিকা নেয়। আর স্টেম কোষ যদি বার বার বিভাজিত হতে থাকে এবং সেই বিভাজন অনিয়মিত ও অসামঞ্জস্যপূ্র্ণ হয়, তা হলে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

তবে গোড়ায় গলদটা ধরা কি এত সহজ? এই ব্যাপারে কলকাতার ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের মত, “জিন নিয়ে অনেক পরীক্ষাই চলছে। আগেও হয়েছে। মিশিগানের বিজ্ঞানীদের এই গবেষণাটি আশাব্যঞ্জক হলেও তা তখনই ভরসার যোগ্য হবে, যখন মানুষের উপর পরীক্ষায় তা সফল হবে। জিনের মিউটেশন কখন হবে বা কী ভাবে, তা আগে থেকে বলা সম্ভব নয়।

ভ্রূণ অবস্থাতেই জিনের বিন্যাসে অস্বাভাবিক কিছু ধরা পড়বে কি না বা সেটি বোঝার মতো পরিকাঠামো সব জায়গায় থাকবে কি না, সেটাই বড় ব্যাপার।” ক্যানসারের ঝুঁকি একেবারে ভ্রূণ অবস্থাতেই ধরা সম্ভব হলে সেটি মাইলফলক গবেষণা হয়ে থাকবে। তবে এই ব্যাপারে আরও পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়োজন আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।