পরিবেশ
হাকালুকিতে অতিথি পাখি শিকারে বিষটোপ ও কারেন্টজাল!
এশিয়া মহাদেশের বৃহৎ ও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকিতে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, বিষটোপ, আর বিল শুকিয়ে মাছ ধরার কারণে দিন দিন পরিযায়ী জলচর পাখির সংখ্যা কমছে।
এশিয়া মহাদেশের বৃহৎ ও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকিতে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, বিষটোপ, আর বিল শুকিয়ে মাছ ধরার কারণে দিন দিন পরিযায়ী জলচর পাখির সংখ্যা কমছে। এবছরের শুমারীতে হাকালুকিতে সর্বমোট ৩৫ হাজার ২ শত ৬৮ টি পাখি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। তন্মধ্যে পিংলা বিলে বিশ্বব্যাপী বিপন্ন বেয়ারের ভূতি হাঁস ২টি, নাগুয়া-লরিবাই বিলে বাংলাদেশের বিরল প্রজাতির বৈকাল তিলিহাঁস ১টি, প্রায় সংকটাপন্ন ফুলুরি হাঁস ৩টি, প্রায় সংকটাপন্ন মরচে রং ভূতিহাঁস ১হাজার ৫শত ৮৮টি, প্রায় সংকটাপন্ন উত্তুরে টিটি ৬টি, সংকটাপন্ন কালো মাথা কাস্তেচরা ৩শত ৯৩টি এবং বিশ্বব্যাপী বিপন্ন পাতি ৯শত ০৯ টি। এছাড়াও পিয়ং হাঁস ৫হাজার ৫শত ৫২টি, উত্তুরে ল্যাঞ্জ্যা হাঁস ৪ হাজার ২শত ৭২টি, এশীয় শামুকখোল ৪হাজার ২শত ২৮ টি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য ৪৫ টি বিলে জরিপ করে এতথ্য পাওয়া গেছে। জানা যায়, বাংলাদেশে প্রায় ৭৩০ প্রজাতির পাখির মধ্যে ৩৮৮ প্রজাতির পাখি'ই পরিযায়ী। শীতকালে পরিযায়ী হয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে খাবারের সন্ধানে ছুঁটে আসে বাংলাদেশে। আশ্রয় হিসেবে বেছে নেয়ে হাকালুকি হাওরের মতো জলাশয় গুলোকে। প্রায় ১৮১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ হাওরে রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ২৭৩টি বিল।২০২৩ সালের পাখিশুমারির জরিপে হাকালুকিতে এসেছে প্রায় ২৫ হাজার পাখি। এবছরের শুমারীতে এসেছে ৩৫ হাজার ২শত ৬৮ টি পাখি। গত দুই বছরের তুলনায় এবার ১০ হাজার পাখি বেশি হলেও বিগত বছর থেকে অনেক কম। যা ২০২০ সালে ছিলো প্রায় ৪০ হাজার ১২৬ পাখি। মাত্র কয়েক বছর আগে দেশে ৫-৬ লাখ পরিযায়ী পাখি আসতো। এসব পাখির বেশিরভাগ মৌলভীবাজার ও সিলেটের হাওরে অবস্থান করতো।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) এর পর্যবেক্ষণ বলছে, গত ২০ বছরে সারা বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমেছে ৩৫ শতাংশ। হাকালুকিতে কমেছে ৪৫ শতাংশ। ২০০০ সালের আগে হাওরে বিচরণ করতো প্রায় ৭৫-৮০ হাজার পাখি। তার ৮০ শতাংশই হাকালুকি হাওরে ছিলো।জলচর পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে শুমারী দলের প্রধান শাহাদাত ওমর জুড়ীর সময়'কে বলেন, প্রায় প্রতিটি জলাশয়ে মৎস্য আহরণ পরিলক্ষিত হয়েছে এবং কিছু কিছু জলাশয়ের প্রায় পানি শূন্য করে মৎস্য আহরণ করা হয়েছে। ব্যাপকভাবে বিলে ধান চাষের আবাদ করতেও দেখা গিয়েছে। তাছাড়া পিংলা বিলের পাশে বিষটোপ (কার্বোটাফ) দিয়ে পাখি শিকার, নাগুয়া বিলে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে পাখি শিকার স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। হাতেনাতে ধরে জাল নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি পরিত্যক্ত মাছ ধরার ফাঁদ সমগ্র হাওরে ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান।