DailySangram-Logo-en-H90

আদালত

স্ত্রীসহ নিক্সন চৌধুরী খাইরুল আবেদ আলীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সালমান পরিবারের ৩৫৮ ও হেনরীর ৬৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান,তার পরিবারের সদস্য ও তার সহযোগীদের নামে থাকা ৩৫৮ টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।

স্টাফ রিপোর্টার
Printed Edition

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান,তার পরিবারের সদস্য ও তার সহযোগীদের নামে থাকা ৩৫৮ টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।

আদালতে দুদকের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা আক্কাস আলী বলেছেন, দুদকের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন এ আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করে আদেশ দেন।

আবেদনে বলা হয়েছে, শেয়ারবাজারে জালিয়াতি, প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ার হোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে সালমানের বিরুদ্ধে। এছাড়া অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক হতে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎসহ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ করা হয়েছে। অনুসন্ধানে সালমান এফ রহমান, তার পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ অন্যান্যদের নামে ব্যাংক হিসাবের তথ্য পেয়েছে। এছাড়া সালমানও তার পরিবারের সদস্যরা অস্থাবর সম্পদসমূহ অন্য জায়গায় হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করারও চেষ্টা করছেন বলে দুদক জেনেছে।

দুদকের ভাষ্য, অনুসন্ধান কাজ শেষ হওয়ার আগেই সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে পরবর্তীতে টাকা উদ্ধার করা কঠিন হয়ে যাবে। মামলা রুজু, আদালতে চার্জশিট দাখিল, বিচার শেষে সাজার অংশ হিসেবে অপরাধলব্ধ আয় থেকে অর্জিত সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করাসহ সকল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে। সেজন্য সালমান তার পরিবারের সদস্য এবং তার সহযোগীদের নামে থাকা ৩৫৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা আবশ্যক।

সরকার পতনের পর ১৩ অগাস্ট সদরঘাট থেকে সালমানকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছিল ঢাকার পুলিশ। গ্রেপ্তারের সময় সালমানের কাছ থেকে পাঁচটি সবুজ রঙের পাসপোর্ট ও একটি কূটনৈতিক পাসপোর্ট পাওয়ার তথ্য রিমান্ড আবেদন যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আটক আছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হত্যার ঘটনায় করা মামলায় সালমানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সে সব মামলায় তাকে দফায দফায় রিমান্ডেও নেওয়া হয়।

সাবেক এমপি হেনরীর ৬৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ

দুদকের করা মামলায় সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর ৬৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছে আদালত। এসব হিসাবে তার ২০ কোটি ৬২ লাখ ৩৬ হাজার ৭০২ টাকা রয়েছে। গতকাল সোমবার দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।

আদালতে দুদকের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা আক্কাস আলী বলেন, দুদকের সহকারী পরিচালক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসিফ আল মাহমুদ তার ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন। হেনরী ও তার স্বামী শামীম তালুকদার লাবুর বিরুদ্ধে ‘অবৈধভাবে’ ৭৮ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দু’টি মামলা করেছে দুদক। এ মামলায় গত ১ জানুয়ারি তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে দুদক। পরে ৬ জানুয়ারি এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এর আগে গত ২৫ নবেম্বর হেনরী, তার স্বামী শামীম তালুকদার ও মেয়ে মুনতাহা রিদায়ী লামের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।

গত ১২ জানুয়ারি দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত হেনরীর ৫০ বিঘা জমি ও তার মালিকানাধীন ১৬টি গাড়ি জব্দের আদেশ দেন। একইসঙ্গে তার ১৯টি ব্যাংক হিসাব ও তার চারটি কোম্পানির শেয়ারও অবরুদ্ধ করা হয়েছে আদালতের আদেশে।

শিক্ষকতা ছেড়ে রাজনীতিতে আসা হেনরী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-২ আসনে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য হন। ২০০৮ সালে সিরাজগঞ্জের সবুজ কানন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক থেকে সরাসরি সংসদ নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেন। যদিও সেই নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী রুমানা মাহমুদের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর হেনরী সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হন। সেসময় ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি এবং অন্যান্য ঘটনায় তার নাম আলোচনায় আসে। হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করে দুদক।

খাইরুল আর আবেদ আলীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক নির্বাহী সদস্য খাইরুল ইসলামের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। প্রশ্নফাঁস কা-ে আলোচিত পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়ি চালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবনের ক্ষেত্রেও একই আদেশ এসেছে। দুদকের পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব। খাইরুল ইসলামের বিদেশযাত্রার নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন দুদকের সহকারী পরিচালক (মানিলন্ডারিং) এস এম মামুনুর রশীদ।

আবেদনে বলা হয়, খাইরুলের বিরুদ্ধে ভুয়া সম্পত্তিকে জামানত দেখিয়ে বেসিক ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখা থেকে ১০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। তিনি বিদেশে পালাতে পারেন বলে জেনেছে দুদক। সেই কারণে তার বিদেশ গমন ঠেকানো প্রয়োজন। আর আবেদ আলীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন দুদকের সহকারী পরিচালক আল-আমিন।

আবেদনে বলা হয়, আবেদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক। ওই মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন।

স্ত্রীসহ নিক্সন চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী ও তার স্ত্রী তারিন হোসেনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব গতকাল সোমবার এ আদেশ দেন।

আদালতে দুদকের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা আক্কাস আলী বলেছেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শিহাব সালাম তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেছিলেন। হাকিম জাকির হোসেন গালিব ওই আবেদন মঞ্জুর করে সস্ত্রীক নিক্সন চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন।

আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নিক্সন চৌধুরী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলছে। তারা দেশত্যাগের চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। তাই অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন দুদক। নিক্সন চৌধুরী ও তার স্ত্রী তারিন হোসেনের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আলাদা দু’টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। নিক্সন ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে বৈধ উৎসের বাইরে ১৯ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনেছে দুদক। দুজনের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ৭২টি ব্যাংক হিসাবে ৩ হাজার ১৬২ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে।

নিক্সন চৌধুরী নিজের ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ৫৫ ব্যাংক হিসাবে এক হাজার ৪০২ কোটি ৫১ লাখ ৮৮ হাজার ৫৯১ টাকা ‘অস্বাভাবিক’ লেনদেন করেছেন। মামলায় তার বিরুদ্ধে ১১ কোটি ২৩ লাখ ৬২ হাজার ৪৩৫ টাকার ‘অবৈধ’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। নিক্সনের স্ত্রী তারিন হোসেনের বিরুদ্ধে করা মামলায় তার নিজের ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ১৭টি ব্যাংক হিসাবে এক হাজার ৭৬০ কোটি ৩৪ লাখ ৫১ হাজার ৩২০ টাকা ‘অস্বাভাবিক’ লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তারিনের বিরুদ্ধে ৮ কোটি ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭০৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাকে সহযোগিতার অভিযোগে নিক্সন চৌধুরীকেও এ মামলায় আসামী করা হয়েছে।