গ্রাম-গঞ্জ-শহর
৭ মাস ধরে বেতনভাতা পান না ফেনীর দেড়শ স্বাস্থ্যকর্মী
প্রকল্প থেকে ট্রাস্টের আওতায় নেওয়াসহ নানা জটিলতায় সিএইচসিপিদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন মহলের চিঠি চালাচালিতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে সমস্যার সমাধান। ফলে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা যেন পিছু ছাড়ছে না। অন্যদিকে মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি।
Printed Edition
ফেনী সংবাদদাতা : সারাদেশের মতো দীর্ঘ সাত মাস ধরে বেতনভাতা ছাড়াই দায়িত্ব পালন করে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন ফেনীতে কর্মরত ১৪৭ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। ফলে গ্রামীণ পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রতি ওয়ার্ডে গড়ে ওঠা কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিদের জীবন দিন দিন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তারা আর্থিক সংকটে পড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। প্রকল্প থেকে ট্রাস্টের আওতায় নেওয়াসহ নানা জটিলতায় সিএইচসিপিদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন মহলের চিঠি চালাচালিতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে সমস্যার সমাধান। ফলে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা যেন পিছু ছাড়ছে না। অন্যদিকে মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি। এমন বাস্তবতার কাহিনি ওঠে এসেছে ফেনীর ছয়টি উপজেলায় কর্মরত সিএইচসিপিদের মুখ দিয়ে। হয়রানির ভয়ে কেউ মুখ খুলে সমস্যার কথা বলতেও সাহস পাচ্ছে না।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, গ্রামীণ জনপদে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য প্রকল্পের আওতায় ২০০৯ সালে ইউনিয়ন পর্যায়ে কয়েকটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলা হয়। ফেনী সদর উপজেলায় ৪২টিসহ জেলায় মোট ১৫৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এ ক্লিনিকে ১৪৭জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কর্মরত আছেন।
কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে কর্মরত সিএইচসিপিরা সপ্তাহে ছয়দিন মহিলাদের গর্ভপূর্ব,গর্ভকালীন, গর্ভত্তোর সেবা, শিশুদের পুষ্টিহীনতা, ডায়েরিয়াসহ প্রাথমিক চিকিৎসা, ভিটামিন-এ ক্যাপসুল, মহিলা ও কিশোরীদের রক্ত স্বল্পতা, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শ, ইপিআই শিডিউল অনুযায়ী বিভিন্ন টিকা প্রদান, তথ্য সংগ্রহসহ নবজাতকের অত্যাবশকীয় সেবা প্রদান করা হয় নিয়মিত।
প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ২৯ আইটেমের ওষুধ বিনামূল্যে নিয়মিত প্রদান করা হয়। স্বাস্থ্যসেবায় এ কমিউনিটি ক্লিনিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও ২০১১ সাল থেকে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) চাকরিতে যোগদানের পর দীর্ঘ ১৩ বছরে তাদের চাকরি রাজস্ব বা স্থায়ীকরণ হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন সিএইচসিপি জানান, আমাদেরকে নিয়োগের পর বিভিন্ন রোগসহ চিকিৎসায় ওষুধ প্রয়োগ বিষয়ে তিন মাসের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ বা ধারণা দেয়া হয়। সেই প্রশিক্ষণে ওপর ভিত্তি করে আমরা শুক্রবার ও ছুটির দিন বাদে সকাল নয়টা হতে বিকাল তিনটা পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। কতজন রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়েছে তা আমাদেরকে রিপোর্ট প্রেরণ করতে হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট।
তারা আরও জানান, প্রথম দিকে আমাদেরকে ২৭ প্রকার ওষুধ সরবরাহ করা হলেও বর্তমানে ২৯ প্রকার ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। আগে অ্যান্টিবায়োটিক সরবরাহ দেওয়া হলেও এখন তা সরবরাহ করা হয় না। আমাদের চাকরি জাতীয়করণ করা হবে এমনটা শুনেছি। এখন জাতীয়করণ তো দূরের কথা আমরা গত দীর্ঘ সাত মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। এতে আমাদেরকে ধার দেনা করে পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ দিন পার করতে হচ্ছে। আমরা রোগীদের সুস্থতায় সেবা দিলেও বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছি।
ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. শিহাব উদ্দিন জানান, ফেনীতে সিএইচসিপিদের দীর্ঘ সাত মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। তবে এই বিষয়টি নিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আশা করি সহসা বেতন চালু হবে।