গ্রাম-গঞ্জ-শহর
একমাত্র ভরসা ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো
ফেনীর সোনাগাজীতে বন্যায় ব্রিজ ভেঙে খালে চলাচলে দুর্ভোগ সাধারণ মানুষের
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় চরদরবেশ ইউনিয়নের চরসাহাভিকারী গ্রামে বন্যার সময় ব্রিজ ভেঙে খালে গিয়ে পড়ে। স্থানীয় বদর মোকাম খালের ওপর নির্মিত ব্রিজটি বন্যার পানির তীব্র স্রোতে ধসে পড়ে।
Printed Edition
![1000023769](https://static.dailysangram.com/images/1000023769.original.jpg)
ফেনী সংবাদদাতা : ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় চরদরবেশ ইউনিয়নের চরসাহাভিকারী গ্রামে বন্যার সময় ব্রিজ ভেঙে খালে গিয়ে পড়ে। স্থানীয় বদর মোকাম খালের ওপর নির্মিত ব্রিজটি বন্যার পানির তীব্র স্রোতে ধসে পড়ে। এতে সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ থেকে দাসের হাট- চরদরবেশ কেরামতিয়া- বগাদানা কাজিরহাট সড়কে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। দুই ইউনিয়নের ১৮টি গ্রামের লাখো মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বাশেঁর সাঁকোতে চলাচল করছে। এলজিইডি কর্তৃক ২০ লাখ টাকা ব্যায়ে ৩০ মিটারের একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণের প্রদক্ষেপের কথা জানালেও দীর্ঘ ৬ মাসেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
সরেজমিন দেখা যায়, ব্রিজের দুই পাশের মাটি সরে গেছে। মাঝখানের ব্রিজটি মুল সড়ক থেকে হেলে খালের পানিতে অর্ধেক ডুবে আছে। ব্রিজটি ভেঙে পড়ায় পাশেই করা হয়েছে বাঁশের তৈরী সাঁকো। সেই সাঁকোতেই ছাত্র-ছাত্রীসহ স্থানীয়দের ঝুঁকি নিয়ে খাল পারাপার হতে হচ্ছে। খালের দুই পাশে রিক্সা নিয়ে চলাচল করতে হচেছ।
স্থানীয়রা জানান, ২৪ আগস্ট বন্যার পানির তীব্র স্রোতে ব্রিজের উত্তর পাশের মাটি সরে যায়। ২৬ আগস্ট মুছাপুর রেগুলেটর পানির স্রোতে ভেঙে যাওয়ার পর ছোট ফেনী নদী থেকে সরাসরি জোয়ারের পানি খালে প্রবেশ করলে দক্ষিণ পাশ থেকেও মাটি সরে যায়। ফলে ব্রিজটি খালে ধসে পড়ে। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় চরদরবেশ ইউনিয়ন ও বগাদানা ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী গ্রামের হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। প্রতিদিন বিকল্প পথে গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেক সময় লেগে যায় এবং যাত্রীদেরকে দ্বিগুন ভাড়া গুণতে হচ্ছে। এছাড়াও চর সাহাভিকারী গ্রামের বাগিসপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডার গার্টেন ও মাদরাসার ছাত্রছাত্রীরা ব্রিজ না থাকায় স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের ছেলে মেয়েরা বিকল্প পথে দূর দূরান্তের পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যাওয়াটা অনেক কষ্টের। এদিকে ব্রিজ ধ্বসে যাওয়ার পর উপজেলা প্রশাসন ও এলজিইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সড়কটি পরিদর্শন করে যাওয়ার পর আর কোনো খবর নেই বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। চলাচলের সুবিধার্থে সড়কের ভাঙনস্থানের পাশে খালের ওপর বিকল্প স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকোটি তৈরি করেন স্থানীয় জনগন।
স্থানীয়রা বলেন, ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় এ এলাকার মানুষ চলাচলে অনেক কষ্ট করছে। বিশেষ করে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ব্রিজের অভাবে ঠিকমত স্কুলে যেতে পারছেনা। তারা ঝুলন্ত সাঁকো ওপর দিয়ে স্কুলে যেতে ভয় পায়। গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। অতি দ্রুত ব্রিজটি পুনঃনির্মাণ করার জন্য কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান তারা।
কয়েকজন গাড়ি চালক বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ায় নদীতে অতিরিক্ত জোয়ার ভাটার কারণে নদীর পাড় ভেঙ্গে জনপদ বিলীন হচ্ছে। মানুষের ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে ফসলি জমি,রাস্তাঘাট,পোল কালভার্ট কিছুই রক্ষা করা যাচ্ছে না। সরকারের এ বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
সোনাগাজী এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী নাজমুল হুদা জানান, বদর মোকাম খালের ওপর নির্মিত ব্রিজটি এলজিইডি করেনি। ব্রিজটি ২৫ বছর আগে নির্মাণ করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। তখন এ ব্রিজটি পাইল ফাউন্ডেশন দিয়ে করা হয়নি। ব্রিক পিলারের ওপর আরসিসি গার্ডার দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। তাই বন্যার সময় পানির তীব্র স্রোতে পিলারের নিচের মাটি সরে গিয়ে ব্রিজটি সম্পূর্ণ ধ্বসে পড়ে। বন্যার পরে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলসহ আরো অন্যান্য প্রতিনিধি দল ব্রিজের ভাঙ্গন স্থান পরিদর্শন করে গেছেন।
সোনাগাজী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল কাদের মোজাহিদ বলেন, জনসাধারণের স্বাভাবিক চলাচল অব্যাহত রাখার জন্য এলজিইডি কর্তৃক ২০ লাখ টাকা ব্যায়ে ৩০ মিটারের একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণের প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কাজের অনুমোদন হয়েছে। দ্রুত নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান।