DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

রাজধানী

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে আলোচনা সভা

ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতেই পিলখানা হত্যাকাণ্ড---ডা. তাহের

ভারত আওয়ামী লীগ কে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা রাখার স্বপ্ন দেখিয়ে আওয়ামী সরকারের মদদে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ঐ হত্যাকাণ্ড পরিচালিত করেছে ভারতীয় আজ্ঞাবহ বিডিআর জোয়ানেরা। কিন্তু তাদের কোন বিচার না করে নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের আটক করে বিচারের নামে অবিচার করে দন্ড দিয়েছে, চাকুরীচ্যুত করেছে।

স্টাফ রিপোর্টার
Printed Edition

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে। ভারত আওয়ামী লীগ কে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা রাখার স্বপ্ন দেখিয়ে আওয়ামী সরকারের মদদে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ঐ হত্যাকাণ্ড পরিচালিত করেছে ভারতীয় আজ্ঞাবহ বিডিআর জোয়ানেরা। কিন্তু তাদের কোন বিচার না করে নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের আটক করে বিচারের নামে অবিচার করে দন্ড দিয়েছে, চাকুরীচ্যুত করেছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ২০০৯ সালে পিলখানায় দেশপ্রেমিক সেনাকর্মকর্তাদের নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত পিলখানা হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কমিশনের সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

বিএনপি সহ সকল দলকে পাঁচ বিষয়ে ঐক্যমত হয়ে জাতির সামনে শপথ করার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্ল্যাহ্ মোহাম্মদ তাহের বলেন, স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নো কম্প্রোমাইজ (কোন আপষ নয়), দুর্নীতি-চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, জাতীয় স্বার্থে এক ও অভিন্ন, দেশের উন্নয়নে জন্য দলের চেয়ে দেশ বড় নীতি অবলম্বন এই পাঁচ বিষয়ে ঐক্যমত হয়ে জাতির সামনে শপথ গ্রহন করতে না পারলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ারও আহ্বান জানান। এসময় তিনি বলেন, ভিন্ন মত ও দল থাকবে, থাকতে পারে। কিন্তু দেশ ও জাতির স্বার্থে এই পাঁচ বিষয়ে ঐক্যমত হতে পারলে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ হবে একটি শক্তিশালী জাতি ও রাষ্ট্র।

প্রসঙ্গেক্রমে ডা. তাহের বলেন সিঙ্গাপুরের একটি প্রতিনিধি দল জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় অফিসে নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করতে আসেন। সেসময় তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, ১৯৬৭ সালে স্বাধীন হয়ে এতো অল্প সময়ে কিভাবে সিঙ্গাপুর এতো সমৃদ্ধ হলো?- প্রতিনিধি দলের একজন মুহূর্তে জবাব দিলেন, আমরা একজন সৎ যোগ্য ও দেশপ্রেমিক আদর্শিক নেতা পেয়েছি। যিনি আমাদের দেশকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছেন। ডা. তাহের বলেন, পক্ষান্তরে বাংলাদেশের জনগণ দেশ স্বাধীনের পর একজন দুর্নীতিবাজ নেতা পেয়েছে। সেজন্যই আমাদেরকে আজও সংগ্রাম করতে হয়। ১৯৪৭ সালে আমরা প্রথম স্বাধীন হয়েছি তারপর ১৯৭১ সালে। কিন্তু জনগণ পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা পায়নি বলেই ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাই তথা ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদের হাত থেকে জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আর কোন সংগ্রাম, সংঘাত নয় উল্লেখ করে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া আহ্বান জানান।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে আড়াল করতে নানা রকম ষড়যন্ত্রের আয়োজন করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে পিলখানা হত্যাকা- ছিল একটি কালো অধ্যায়। স্বাধীনতা সংগ্রামের চেয়েও অধিক সেনাকর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে। এমনকি বাঁছাই করে করে উচ্চপদস্থ সেনাকর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়েছে। সেনাকর্মকর্তাদের হত্যা করা হচ্ছে অথচ সেনানিবাসে সংবাদ দিলেও সেনাপ্রধান কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বরং তারা তখন পিকনিক করে বিরিয়ানি খাচ্ছে। বিরিয়ানি খেয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক আর মির্জা আজমকে পাঠানো হয়েছে পিলখানায় সেনাকর্মকর্তাদের উদ্ধার করতে! এর দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় সরকারের সরাসরি মদদে পিলখানা হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত কমিশন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ভাবে তদন্ত করতে হবে এবং সঠিক বিচারের মাধ্যমে জড়িতদের ফাঁসি দিতে হবে। এসময় তিনি পিলখানা হত্যাকাণ্ড সহ প্রতিটি হত্যার বিচারের দাবি জানান।

সভাপতির বক্তব্যে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, শেখ হাসিনা অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার কিছু দিনের মাথায় সুপরিকল্পিত ভাবে পিলখানায় দেশপ্রেমিক সেনাকর্মকর্তাদের নৃশংস হত্যা করেছে। শেখ হাসিনা এক ঢিলে পাঁচ পাখি মেরেছে। প্রথমত ৫৭জন চৌকস সেনাকর্মকর্তাদের হত্যা করেছে, দ্বিতীয়ত চৌকস দেশপ্রেমিক সেনাকর্মকর্তাদের হত্যা করার মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে দুর্বল করতে চেয়েছে, তৃতীয় শেখ হাসিনা পিতা হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে সেনাবাহিনীকে পঙ্গু করেছে, চতুর্থত বিডিআরকে নিঃস্ব করেছে, পঞ্চমত বিডিআরকে নিঃশেষ করে নতুন বাহিনী গঠন করে তাদের নতজানু বাহিনী সৃষ্টি করেছে। এতে ভারতের আধিপত্যবাদ বিস্তারের পথ সুগম করেছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর ইতোপূর্বে যেই তদন্ত করা হয়েছে সেই তদন্ত একতরফা এবং নিজেদের মনগড়া তদন্ত। নতুন তদন্ত কমিশন গঠন করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনার বিচার করতে হবে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলরুমে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে ড. আব্দুল মান্নান ও শামসুর রহমান, ঢাকা বারের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট এস. এম কামাল উদ্দিন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, পল্টন থানা আমীর শাহিন আহমেদ খান প্রমুখ। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি: একযোগে সারা দেশের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘সম্মিলিত নন-এমপিও ঐক্য পরিষদ’ ব্যানারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে এসে এই একাত্মতা ঘোষণা করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মু. তাহের। নন-এমপিও শিক্ষকরা ১৪ দিন যাবৎ প্রেস ক্লাবের ফুটপাতে অবস্থান করছেন।

ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মু. তাহের বলেন, নন-এমপিও শিক্ষকরা যে দাবি করছেন সেটা ন্যায্য দাবি। শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য দাবি আদায় করার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে এসে রাজপথে আন্দোলন করছেন। দিনের পর দিন আন্দোলন করলেও সরকারের কানে পানি ঢুকছে না এখন পর্যন্ত। এটা উচিত ছিল শিক্ষকরা দাবি করার আগেই সব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা। বাইরের দেশে শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হওয়ার জন্য কোনো দাবির প্রয়োজন হয় না। এটা সরকারের নিজস্ব দায়িত্ব শিক্ষা ব্যবস্থায় তাদের গ্রহণ করা।

তিনি বলেন, আমি আপনাদের এই দাবির সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে একাত্মতা ঘোষণা করছি। আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাকে অনুরোধ করবো, আপনি তাদের কথা শুনেন এবং ন্যায্য দাবি মেনে নেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা সুন্দর কথায় ভালো কথায় ন্যায্য দাবির কথা বললে তা পূরণ হয় না এই দেশে। আমরা আশা করছি আপনাদের সেই পর্যায়ে যাওয়ার লাগবে না।