রাজধানী
আমার বাবার বিচার পাওয়ার জন্যই আইন পড়েছি: এডভোকেট সাকিব
পিলখানায় নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার শহীদ কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফিকের ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান বলেছেন আমি আমার বাবার জন্যই আইন পড়েছি এবং আমার বাবার বিচার হওয়ার আগ পর্যন্ত এই লড়াই চালিয়ে যাব।
Printed Edition

পিলখানায় নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার শহীদ কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফিকের ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান বলেছেন আমি আমার বাবার জন্যই আইন পড়েছি এবং আমার বাবার বিচার হওয়ার আগ পর্যন্ত এই লড়াই চালিয়ে যাব। কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফিক পিলখানায় বিপথগামী বিডিআরদের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মর্মান্তিক অধ্যায়। তিনি স্ত্রী লবী রহমান ও একমাত্র পুত্র সাকিব রহমানকে রেখে গেছেন।
বর্তমানে তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পিতার ন্যায়বিচারের দাবিতে তিনি আইন পেশায় যুক্ত হয়েছেন এবং দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি অবিচল আস্থা রেখে কাজ করে যাচ্ছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে এডভোকেট সাকিব রহমান দৈনিক সংগ্রামকে জানান, বাবার স্মৃতি ও তার আত্মত্যাগ আমাকে শক্তি দেয়। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা আমার জীবনের মূল লক্ষ্য। আইনজীবী সাকিব রহমান বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছি, তাতে আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগকে তো অ্যাভয়েড করা যাচ্ছে না, কারণ অনলাইনে অনেক তৎপরতা আছে তাদের। মূলত আমরা তাদের তরফ থেকে হুমকি পাচ্ছি। সাকিব বলেন, বিডিআর আইনে যে বিচারটা হয়েছিল সেখানে সর্বোচ্চ সাজা ছিল সাত বছর। তারা (বিডিআর সদস্যরা) সাজা খেটে বেরিয়ে এসেছে। এখন তাদের দাবি হচ্ছে মূলত চাকরিতে পুনর্বহাল এবং ক্ষতিপূরণ। চাকরি অথবা ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে তাদের দাবিগুলো সরকার বা বাহিনীর কাছে, শহীদ পরিবারের কাছে নয়। কাজেই এ বিষয়ে শহীদ পরিবারগুলোর কোনো মন্তব্য থাকতে পারে না। অন্যদিকে আরেকটি মামলা হয়েছিল বিস্ফোরক আইনে। আপনারা দেখেছেন বিস্ফোরক আইনের মামলায় অনেকের জামিন হয়েছে। বিচার বিভাগের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা মন্তব্য করতে পারি না। হত্যা মামলায় যারা দ-প্রাপ্ত নয় তাদের জামিনের বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। যেহেতু বিচার বিভাগ জামিন দিচ্ছে সেহেতু আমরা কোনো মন্তব্যে যাব না।
বিডিআর সদস্যদের আন্দোলন সম্পর্কে সাকিব রহমান বলেন, হঠাৎ করে দেখলাম বিডিআর সদস্য এবং তাদের পরিবারবর্গ, এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও হঠাৎ করে খুব তৎপর হয়ে গেলেন তাদের কিছু দাবি নিয়ে। আমরা নোটিশ করেছি যে হঠাৎ করে পুরো ঘটনার ন্যারেটিভটা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছিল। এটার যে কারণ আমরা বুঝতে পেরেছি তা হচ্ছে, ঘটনার সময় এখনকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা আছেন তারা অনেক ছোট ছিলেন, তাদের কাছে ন্যারেটিভটা ক্লিয়ার ছিল না। পরে ২৯ জানুয়ারি আমরা এই ন্যারেটিভ ঠিক করার জন্য এক সাংবাদিক সম্মেলন করি। এরপর তারা আমাদের ন্যারেটিভটা বুঝতে পেরেছেন। পরবর্তী সময়ে তারা আবারও ছয় দফা দাবি দিয়েছেন। সেই ছয় দফা দাবিতে আমাদের শহীদ পরিবারের সেন্টিমেন্টগুলো কনসিডার করা হয়েছে। তাদের দাবিতে হত্যাকারীদের ‘অবিলম্বে ছেড়ে দেওয়ার’ দাবিটি নেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়াতুল্লাহ বেহেশতি ও মাহিন সরকার বিষয়টি ক্লিয়ার করেছেন। এরপর তারা যে আট দফা দাবি পেশ করেছেন সেখানে হত্যা মামলার আসামিদের মুক্তির বিষয়টি নেই। আইনজীবী সাকিব রহমান বলেন, হত্যাকা-ের প্রকৃত ঘটনা উন্মোচনসহ পর্দার আড়ালের ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। প্রায় ১৬ বছর ধরে চলা হত্যা মামলাটি আপিল বিভাগে থাকলেও সর্বশেষ পরিস্থিতি হত্যার শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের জানা নেই বলে উল্লেখ করেন এডভোকেট সাকিব রহমান। তিনি বলেন, মামলা চলাকালীন এই দীর্ঘ সময়টাতে আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি।