রাজধানী
৬ আগস্ট থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত
পলাতক ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার ও মেহেদী হাসান সাময়িক বরখাস্ত
আওয়ামী লীগ শাসনামলের দাপুটে ও আলোচিত দুই পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দুই যুগ্ম কমিশনারকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন ডিএমপির (দক্ষিণ) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার এবং যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান।
Printed Edition
আওয়ামী লীগ শাসনামলের দাপুটে ও আলোচিত দুই পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দুই যুগ্ম কমিশনারকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন ডিএমপির (দক্ষিণ) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার এবং যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান। গত বছরের ৬ আগস্ট থেকে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে মৌখিক বা লিখিতভাবে না জানিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় তাদের বরখাস্ত করা হয় বলে প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। গতকাল সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে জারি করা পৃথক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি করা হয়। এতে স্বাক্ষর করেন জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গণি।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিপ্লব কুমার সরকার ও এস এম মেহেদী হাসান গত বছরের ৬ আগস্ট থেকে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে মৌখিক বা লিখিতভাবে অবহিত না করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাই তাদের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট থেকে সরকারি চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন বিপ্লব কুমার সরকার বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে এবং এস এম মেহেদী হাসান সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকবেন। বিধি অনুযায়ী তারা খোরপোষ ভাতা পাবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পৃথক আদেশে পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৭টি খুনের মামলার আসামী হয়েছেন বিপ্লব কুমার সরকার। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, লালবাগ, শেরেবাংলা, নিউমার্কেট, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন থানায় এসব মামলা করেছেন নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা। এস এম মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী, লালবাগ, নিউমার্কেট, আদাবর ও ধানমন্ডি থানায় আটটি মামলা হয়েছে।
দুজনেরই আদেশে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ২ (চ) বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ওই বিধিতে পলায়নের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে-“বিনা অনুমতিতে চাকুরি ত্যাগ করা অথবা ৬০ (ষাট) দিন বা তদূর্ধ্ব সময় বিনা অনুমতিতে কর্ম হইতে অনুপস্থিত থাকা অথবা কর্ম হইতে অনুমোদিত অনুপস্থিতির ধারাবাহিকতায় অনুমোদিত সময়ের অতিরিক্ত ৬০ (ষাট) দিন বা তদূর্ধ্ব সময় পুনঃঅনুমতি গ্রহণ ব্যতিরেকে অনুপস্থিত থাকা অথবা বিনা অনুমতিতে দেশ ত্যাগ এবং ৩০ (ত্রিশ) দিন বা তদূর্ধ্ব সময় বিদেশে অবস্থান করা অথবা অনুমতিসহ দেশ ত্যাগ করিবার পর অনুমোদিত সময়ের অতিরিক্ত ৬০ (ষাট) দিন বা তদূর্ধ্ব সময় অননুমোদিতভাবে বিদেশে অবস্থান করা।”
২১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে চাকরি নেওয়া বিপ্লব সরকার ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের জগন্নাথ হল শাখার সাধারণ সম্পাদক। পুলিশের চাকরিতে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় পুরোটা সময় তিনি দাপুটে কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
২০১১ সালের ৬ জুলাই বিএনপির কর্মসূচি চলাকালে বিরোধী দলের চীফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুক সংসদ ভবনের সামনে পুলিশের পিটুনির শিকার হন। সেসময় তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার হারুন অর রশীদ এবং অতিরিক্ত উপ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার ওই ঘটনার নেতৃত্ব দেন।
জয়নাল আবেদীন ফারুককে ধাওয়া করে জামা খুলে নেয়ার একটি ভিডিও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ছাপা হলে তা ভাইরাল হয়। এরপর থেকে বিপ্লব ও হারুনের প্রভাব পুলিশ বিভাগে ছড়িয়ে পড়ে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগ মুহূর্তে ৩১ জুলাই ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লবকে প্রশাসন এবং গোয়েন্দা (ডিবি) দক্ষিণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।
মেহেদী হাসানও নানা কর্মকান্ডে আলোচিত ও বিতর্কিত হয়ে পড়েন আওয়ামী শাসনামলে। বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য তাকে কোনও বেগ পেতে হয়নি। উল্টো পুরষ্কার হিসেবে ভালো পোস্টিং পেয়েছেন।