দুর্ঘটনা
কনটেন্ট ক্রিয়েটর কাফির পরিবারের পাশে সেনাবাহিনী
দেশের জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর নুরুজ্জামান কাফির পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনা সদস্যরা আশ্বস্ত করেছেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের দ্রুত তদন্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
দেশের জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর নুরুজ্জামান কাফির পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনা সদস্যরা আশ্বস্ত করেছেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের দ্রুত তদন্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার রজপাড়া গ্রামে কাফির আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘর পরিদর্শন করেন উপজেলার পায়রা আর্মি ক্যাম্পের সদস্যরা। এ সময় তারা কাফি ও তার পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নুরুজ্জামান কাফির গ্রামের বাড়িতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কাফি দাবি করেছেন, এটি একটি পরিকল্পিত হামলা।
ঘটনার পর বুধবার দুপুর ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে কাফি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে দায়ী করেন। তিনি প্রশাসনকে হুঁশিয়ার করে বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে তার ঘর পুনর্নির্মাণ এবং দোষীদের গ্রেপ্তার করা না হলে বিপ্লবী সরকারের ডাক দেওয়া হবে।
অগ্নিকাণ্ডের পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, জেলা পুলিশ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা।
পরিদর্শন শেষে পায়রা আর্মি ক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার বলেন, এই ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের পাশে রয়েছে। এই পরিবার যাতে ন্যায়বিচার পায়, তা নিশ্চিত করতে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।
নুরুজ্জামান কাফি বলেন, ইতোমধ্যে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শনে এসেছিলেন। আমি প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাইদেরকে ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশের আইনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। সরকারের কাছে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা চাই। আমার সঙ্গে যেটা ঘটেছে আমি তার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচার চাই। সেইসঙ্গে আমি আমার সাত দিনের আল্টিমেটাম জায়গায় ঠিক আছি।
সেনাবাহিনীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকেপটুয়াখালীর কলাপাড়ার জনপ্রিয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়কারী ও সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলা নুরুজ্জামান কাফির গ্রামের বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
এ সময় তার পিতা-মাতাসহ পরিবারের ৬ সদস্য ঘরের মধ্যেই ছিলেন। বাইরে থেকে দরজা আটকে এ আগুন দেওয়া হয় বলে জানান কাফির পিতা। তবে তারা অক্ষত অবস্থায় ঘর থেকে বের হতে পেরেছেন।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রজপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে এ আগুনের ঘটনা ঘটে। পরে কলাপাড়া ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগুনে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কাফির পিতা এবিএম হাবিবুর রহমান। তবে কারা এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি নিশ্চিত করতে পারেনি প্রশাসন।
কাফির প্রতিবেশী ওয়ালি উল্লাহ ইমরান বলেন, আমরা আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেই। তাদের সঙ্গে আমরাও আগুন নিভানোর কাজে নেমে যাই। এটা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত, কারণ ঘরের বাহির থেকে দরজার ছিটকানি লাগানো ছিল। সবাই এক কাপড়ে প্রাণ নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন।
কাফির বাবা মাওলানা এবিএম হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের পুড়ে মারার জন্যই এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা এর তদন্তপূর্বক বিচার চাই। যে যার মতো করে দরজা ভেঙে বের হয়েছি। কিছু নাই। সব শেষ হয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, সার্টিফিকেট, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
নুরুজ্জামান কাফি বলেন, সম্প্রতি ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙচুরের সময় আমি সেখানে লাইভে ছিলাম, স্লোগান দেই। এ ঘটনার কারণে আমার বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের বিজয়ের পর নতুন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছে। এ অবস্থায় আমার পরিবারের ৬ সদস্যকে ঘরে অবরুদ্ধ করে আগুন লাগিয়ে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। আমি সরকারের কাছে অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।
দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার প্রতিবাদে পুড়ে যাওয়া বাড়ির সামনে বুধবার দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করেন নুরুজ্জামান কাফি। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমি এ সরকারকে ৭ দিনের আলটিমেটাম দিলাম। এই ৭ দিনের মধ্যে যদি সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুর্বৃত্তদের আটক করাসহ আমার বাড়ি তৈরি করতে না পারে তাহলে আমি ঢাকা ও কলাপাড়ায় রাজপথে আন্দোলনের ডাক দেব।
তিনি আরও বলেন, ৩২ নম্বরের সামনে আমি বুলডোজারের সামনে স্লোগান দিয়েছি- ছি ছি হাসিনা, লজ্জায় বাঁচি না। তখনকার সময় আওয়ামী লীগের দোসররা ঘোষণা দিয়েছিল- যারা ৩২ পুড়িয়ে দিয়েছে তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হবে। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের প্রথম আক্রোশের শিকার আমি। এটাই প্রমাণ করে।