বাংলাদেশ
মাতৃভাষা বাংলাভাষা খোদার সেরা দান
১৯৪৭ সালের দিকে কেন্দ্রীয় সুপিরিয়র সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার বিষয় তালিকায় উর্দু, হিন্দি, ইংরেজি, ল্যাটিন, সংস্কৃতসহ ৯টি ভাষা অন্তর্ভুক্ত হলেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাংলাকে বাদ দেয়া হয়।
Printed Edition
জাতীয় চেতনা বিকাশের মাস ফেব্রুয়ারির একাদশ দিবস আজ মঙ্গলবার। ১৯৫২ সালের এই দিনেও বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম, অধ্যাপক ড. এ এস এম নূরুল হক ভূঁইয়াসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রসহ কিছু অগ্রণী চিন্তার মানুষ। যদিও একপর্যায়ে সর্বস্তরের মানুষ ভাষার সংগ্রামে নিজেদের সম্পৃক্ত করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এদিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভাষার জন্য লড়াকু ছাত্ররা ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ লেখা পতাকা বিক্রির মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে পতাকা দিবস পালন করে বলে ঐতিহাসিক দলিলাদির কোথাও কোথাও বর্ণিত হয়েছে।
১৯৪৭ সালের দিকে কেন্দ্রীয় সুপিরিয়র সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার বিষয় তালিকায় উর্দু, হিন্দি, ইংরেজি, ল্যাটিন, সংস্কৃতসহ ৯টি ভাষা অন্তর্ভুক্ত হলেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাংলাকে বাদ দেয়া হয়। অথচ এ দেশের দুই-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী ছিল বাংলাভাষী। এ অবিচার তাই কেউ কেউ মেনে নিতে পারেনি। তবে আমাদের ওপর উর্দুকে চাপিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা সফল হলে চিরদিনের জন্য হতে হতো পরাশ্রয়ী, করুণার জাতি। ভাষাসৈনিক অধ্যাপক আবদুল গফুর মনে করেন, এতে বাঙালি মুসলমানদের সাংস্কৃতিক বিকাশের পথ রুদ্ধ হতো। তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতো এবং বাংলাভাষার ওপর বাঙালি মুসলমানের স্বাভাবিক দাবি দুর্বল হয়ে পড়তো।
ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট আহমদ রফিক তার ‘ভাষা আন্দোলন: ইতিহাস ও উত্তর প্রভাব’ শীর্ষক গ্রন্থে উল্লেখ করেন, সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী কর্মসূচি পালনের আহ্বান ছাড়াও ১০-১২ ফেব্রুয়ারি অর্থ সংগ্রহের জন্য পতাকা দিবস ঘোষণা করেছিল। অন্যদিকে আতাউর রহমান খানের মতে, ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি এই তিনদিন পতাকা দিবস পালন করা হয়।
অনেক ঘটনার পর ১৯৯৬ সালের ২৮ মে সচিব কমিটির সভার সিদ্ধান্তে আনুষ্ঠানিক দলিলাদির ক্ষেত্রে অফিস-আদালতে সর্বত্র সাধু ভাষা ব্যবহার করা ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে এর বাধ্যবাধকতা থাকবে না বলে জানানো হয়। ১৯৯৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বাংলায় একটি মামলার রায় দেয়। ২০১৩ সালে এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পর্যায়ক্রমে বাংলার প্রচলন, সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, গাড়ির নম্বর প্লেট, বিভিন্ন দফতরের নামফলক, গণমাধ্যমে ইংরেজি ভাষায় বিজ্ঞাপন ও মিশ্র ভাষার ব্যবহার বন্ধে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এরপর একই বছরের ১৪ মে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডগুলোকে সাইনবোর্ড ও নামফলক বাংলায় লেখা নিশ্চিত করতে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ২০১৪ সালে উচ্চ আদালতের রায় এবং ডজনখানেকেরও বেশি সরকারি আদেশ, পরিপত্র বা বিধিতে বাংলা ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবুও সরকারি কাজের সবক্ষেত্রে নিশ্চিত করা যায়নি রাষ্ট্রভাষা বাংলার ব্যবহার।